Ananyabangla.com

ক্রিয়ার কাল চেনার উপায় | kriyar kal chenar niyom

ক্রিয়ার কাল কাকে বলে?

সহজ ভাষায় বলা যায়, ক্রিয়া সম্পাদনের সময়কে বলে ক্রিয়ার কাল। 

সময় বলতে এখানে তিনটি : বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎ। এখন একটা কথা আসতেই পারে– ক্রিয়ার কাল জানার প্রয়োজন কী?
এর উত্তর হবে, ক্রিয়ার কালের উপর বাক‍্যের সমাপিকা ক্রিয়ার গঠন ব‍্যাপক ভাবে নির্ভর করে‌। তাই সমাপিকা ক্রিয়ার গঠন বোঝার জন্য ক্রিয়ার কাল জানতেই হবে।

উল্টো দিক থেকে বলতে গেলে ক্রিয়ার কাল জানার জন্য সমাপিকা ক্রিয়ার গঠন জানতে হবে। তাই এই অধ্যায় পড়ার সাথে সাথে ক্রিয়াপদের বিস্তারিত আলোচনা পড়ে নেওয়া ভালো।

ক্রিয়ার কাল নির্ণয় করার জন্য সমাপিকা  ক্রিয়াপদকে সাধু ভাষায় রূপান্তরিত করে নিতে হবে। যেমন: করছি>করিতেছি, করেছি>করিয়াছি, করেছিলাম>করিয়াছিলাম, এইভাবে।

তার পর সাধু ভাষার সমাপিকা ক্রিয়াটি দেখেই সাধারণ ভাবে ক্রিয়ার কাল নির্ণয় করা যায়।

সহজে ক্রিয়ার কাল নির্ণয় শেখার জন্য নিচের ভিডিওটি অবশ্যই দেখুন। তারপর নিচের আলোচনা পড়ুন।


ক্রিয়ার কাল ও ইংরেজি টেনস একসাথে শেখার জন্য নিচের ভিডিওটি দেখুন।

বর্তমান কাল 

বর্তমান মানে যে সময়টা এখন চলছে। ব‍্যাকরণে বর্তমান কালকে ৪টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।

সাধারণ বর্তমান কাল


ক্রিয়ার কাজ সাধারণ ভাবে কেউ করে বা করা হয়, অভ‍্যাসগত ভাবে কেউ করে বা করা হয়, চিরকাল ধরে কিছু ঘটে, নিয়মিত বা অনিয়মিত ভাবে কিছু ঘটে, এমন বোঝালে সেই কালকে সাধারণ বর্তমান কাল বলা হয়।

সাধারণ বর্তমানের উদাহরণ :


আমি যাই। রাম খেলে। তুমি দেখো। রামবাবু বিদ‍্যালয়ে পড়ান। তুই সারাদিন খেলে বেড়াস। ইত‍্যাদি।



সাধারণ বর্তমানের ইংরাজি হ’ল Present Indefinite.



সাধারণ বর্তমানের দ্বারা ক্রিয়া সংঘটনের সঠিক সময়টি জানা যায় না। যেমন: “আমি বিদ‍্যালয়ে যাই।” বললে বোঝা যায় না যে, আজ গিয়েছিলাম কি না, অথবা কাল যাবো, তার‌ও নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু অভ‍্যাসগত ভাবে এটি সত‍্য।



সাধারণ বর্তমান কালে ক্রিয়ারূপ গঠনের জন‍্য মূল ধাতুর সাথে কেবলমাত্র পুরুষ-বিভক্তি যোগ করা হয়।



যেমন : “আমি খাই।” খাই=√খা+ই।


সাধারণ মধ‍্যম পুরুষে ধাতুর উত্তর ‘অ’ ( ‘ও’) যোগে (যেমন: করো, যাও), তুচ্ছ মধ‍্যম পুরুষে ‘ইস্’/’স’ যোগে (যেমন: করিস, যাস), প্রথম পুরুষে ‘এ’ যোগে (করে), সম্মানিত মধ‍্যম ও প্রথম পুরুষে ‘এন’/’ন’ যোগে (করেন, যান) সাধারণ বর্তমানে‌র সমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয়।
প্রথম পুরুষের ‘এ’ বিভক্তি‌টি স্বরান্ত ধাতুর ক্ষেত্রে য়-শ্রুতির ফলে ‘য়’-তে রূপান্তরিত হয়। যেমন: যাএ>যায়।

সহজ ভাষায়: 
সাধারণ বর্তমান কালে
  • উত্তম পুরুষে সমাপিকা ক্রিয়াটি হবে ধাতু+ই। যেমন: – করি। (কর্+ই)

  • মধ্যম পুরুষে ধাতু+অ(ও)/ইস/এন। যেমন: তুমি করো, তুই করিস, আপনি বলেন।

  • প্রথম পুরুষে ধাতু+এ :যেমন – সে করে।


সাধারণ বর্তমানে না-বাচক ক্রিয়ার রূপ গঠন করা হয় ক্রিয়ার শেষে ‘না’ যোগ করে। যেমন: আমি যাই না।


সাধারণ বর্তমানের বিশিষ্ট প্রয়োগ

সাধারণ অতীত অর্থে : মহারাজ অশোক কলিঙ্গ জয় করেন। প্রতাপাদিত্য মানসিংহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। (এগুলি ঐতিহাসিক বর্তমান নামেও পরিচিত।)



ভবিষ্যৎ অর্থে : আশীর্বাদ করুন, যেন পাশ করি।



ঘটমান বর্তমান অর্থে : তোমার মুখ দেখেই বোঝা যায় (অর্থাৎ যাচ্ছে) তুমি কষ্টে আছো।


ঘটমান বর্তমান কাল


ঘটমান বর্তমান বলতে বোঝায়, ক্রিয়ার কাজ এখন চলছে। 

ঘটমান বর্তমানের উদাহরণ : আমি পড়ছি। তুমি দেখছ। সে হাসছে। তুই হাঁটছিস। তিনি বলছেন। আপনি শুনছেন। – এইসব।

ঘটমান বর্তমানের ক্রিয়া‌রূপ তৈরি হয় সহায়ক ধাতুর (√আছ্) যোগে। এই কারণে ঘটমান বর্তমান কালের ক্রিয়াতে একটি ‘ছ’ থাকে। এই ‘ছ’ বর্ণটি ‘আছ্’ ধাতুর সংক্ষিপ্ত রূপ। ঘটমান বর্তমানে ‘আছ্’ ধাতুর  আগে ও মূল ধাতুর পরে ‘ইতে’ প্রত‍্যয় যোগ করতে হয়। 

সাধারণ বর্তমান ছাড়া অন‍্য কালগুলির ক্ষেত্রে ক্রিয়ার কাল চেনার জন‍্য ক্রিয়াটিকে সাধুভাষায় রূপান্তরিত করে নেওয়া দরকার। 

উদাহরণ : আমি পড়িতেছি।

পড়িতেছি=√পড়্+ইতে+√আছ্+ই

পুরুষ বদলে গেলে ক্রিয়ার সর্বশেষ বিভক্তি‌টিই শুধু বদলাবে। বাকি সব এক‌ই থাকবে। 

সাধারণ বর্তমান, পুরাঘটিত বর্তমান ও ঘটমান বর্তমানে শেষ বিভক্তিটি এক‌ই হয়। কিন্তু পুরাঘটিত ও ঘটমান বর্তমানে ‘এ’ বিভক্তিটি রূপান্তরিত হয়ে ‘য়’ হয় না, সর্বদা অপরিবর্তিত থাকে। 

ক্রিয়ার শেষে ‘না’ শব্দ যোগ করে ঘটমান বর্তমানে‌র নেতিবাচক ক্রিয়ার রূপ গঠন করা হয়। যেমন : আমি দেখছি না/দেখিতেছি না।

এখানে মূল ধাতু √পড়্, ‘ইতে’ প্রত‍্যয়, √আছ্ সহায়ক ধাতু এবং ‘ই’ হল উত্তম পুরুষের ক্রিয়াবিভক্তি। 

মনে রাখার বিষয়: বর্তমান কালের ক্ষেত্রে কালের চিহ্ন বহন করার জন‍্য কোনো প্রত‍্যয় বা ক্রিয়াবিভক্তি লাগে না। সহজ ভাষায় বলতে গেলে বর্তমান কালে কালবাচক ক্রিয়াবিভক্তি শূন্য হয়।

পুরাঘটিত বর্তমান

পুরাঘটিত বর্তমান কালের সংজ্ঞা‌য় বলা হয়, ক্রিয়ার কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু তার ফল বর্তমান, এরূপ বোঝালে পুরাঘটিত বর্তমান হয়। 
সংজ্ঞাটি নির্ভুল। কিন্তু এই সংজ্ঞা থেকে পুরাঘটিত বর্তমান চেনা সম্ভব নয়। তাই আমরা ক্রিয়ার কাল চেনার জন্য ক্রিয়ার দৈহিক গঠনে গুরুত্ব আরোপ করি। ক্রিয়াটি দেখে কাল নির্ণয় করতে হবে। অবশ‍্য তার আগে ক্রিয়াটিকে সাধুভাষায় রূপান্তরিত করে নিতে হবে। উদাহরণ নিয়ে দেখি :

আমি খাইয়াছি।(খেয়েছি)

খাইয়াছি=√খা+ইয়া+√আছ্+ই

মূল ধাতু √খা, তার সাথে ‘ইয়া’ প্রত‍্যয়, তার সাথে সহায়ক ধাতু √আছ্ এবং সবশেষে পুরুষবাচক বিভক্তি ‘ই’।
পুরাঘটিত বর্তমানে প্রতিটি পুরুষের পুরুষবাচক বিভক্তি (অর্থাৎ, শেষ বিভক্তি‌টি) ঘটমান বর্তমানের মত‌ই।

বি:দ্র: পুরাঘটিত বর্তমানে না-বাচক ক্রিয়া গঠনের জন‍্য  ক্রিয়ার সাধারণ বর্তমানের রূপের শেষে ‘নি'(চলিতে) অথবা ‘নাই'(সাধুভাষায়) যোগ করা হয়। যেমন : আমি দেখিনি। ‘নি’-কে আলাদা লিখতে নেই, ক্রিয়ার সঙ্গে একমাত্রা‌য় লেখা নিয়ম। (অন‍্যান‍্য কালের ‘না’-কে আলাদা লিখতে হয়।’)

বর্তমান অনুজ্ঞা

বর্তমান কালে কাউকে আদেশ, অনুরোধ ইত‍্যাদি করা হলে তাকে বর্তমান অনুজ্ঞা কাল হিসেবে ধরা হয়। 

বর্তমান অনুজ্ঞার সমাপিকা ক্রিয়ারূপ শুধু মধ‍্যম ও প্রথম পুরুষেই পাওয়া যায়। উত্তম পুরুষে অনুজ্ঞা হয় না। কারণ বক্তা নিজেকে নিজেই আদেশ-অনুরোধ করতে পারে না।

মধ‍্যম পুরুষের বর্তমান অনুজ্ঞার ক্রিয়া তৈরি হয় খানিকটা সাধারণ বর্তমানের নিয়মে, খানিকটা নিজস্ব নিয়মে। সাধারণ মধ‍্যম পুরুষে ক্রিয়া হয় সাধারণ বর্তমানের মত হুবহু এক। আবার সম্ভ্রমাত্মক মধ‍্যম পুরুষে ‘উন'(রূপান্তরে ‘ন’) যোগে এবং মধ‍্যম পুরুষের অনাদরে বর্তমান অনুজ্ঞায় ধাতুর সঙ্গে কিছু‌ই যুক্ত হয় না।** সাধারণ প্রথম পুরুষের বর্তমান অনুজ্ঞায় ধাতুর শেষে ‘উক’/’ক’ যুক্ত হয়। যেমন : রাম বলুক, যাক।



[** এই কারণে ধাতু খুঁজে পাওয়ার জন‍্য ক্রিয়াটিকে তুচ্ছ মধ‍্যম পুরুষের বর্তমান অনুজ্ঞায় প্রয়োগ করতে হয়।]

অতীত কাল


অতীত মানে বিগত। যে সময় পেরিয়ে গেছে, সেই সময়ের ঘটনা ও ক্রিয়ার বর্ণনা করার জন‍্য অতীত কালের ব্যবহার করা হয়। 

সাধারণ অতীত

ক্রিয়ার কাজটি অতীতে ঘটেছিল এবং তার কোনো সুস্পষ্ট ফলাফল বর্তমান নেই, এমন ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হলে সেই কালকে সাধারণ অতীত বলে। (বিশিষ্ট প্রয়োগ দ্রষ্টব্য।)

উদাহরণ : “রাম বনে গেলেন। প্রজারা অত‍্যন্ত দুঃখ পেল। খুশি হল একমাত্র কৈকেয়ী। রাজা দশরথ শোকে মৃত‍্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।” এখানে রামায়ণে‌র কাহিনী‌র বর্ণনা আছে। এই বর্ণনার বাক‍্যগুলির কাল সাধারণ অতীত। 



সাধারণ অতীতে সাধুভাষার ক্রিয়ারূপ তৈরি হয় মূল ধাতুর সঙ্গে কাল বাচক ‘ইল’** ও পুরুষবাচক ক্রিয়াবিভক্তি যোগে। 


উত্তম পুরুষে ‘ইলাম/লাম’ (করিলাম), সাধারণ প্রথম পুরুষে ‘ইল’/’ল'(রাম গেল, সে বলিল)
 সাধারণ মধ‍্যম পুরুষে ‘ইলে’/’লে'(তুমি বললে),
 সম্মানিত প্রথম পুরুষ ও সম্মানিত মধ‍্যম পুরুষে ‘ইলেন’/’লেন’, (রামবাবু বললেন, আপনি বললেন)। 



সাধারণ অতীতে না-বাচক ক্রিয়া গঠন করা হয় ক্রিয়ার শেষে ‘না’ যোগ করে।



[** এই ‘ইল’ অতীত কালের প্রতীক। কিন্তু এটি প্রত‍্যয় না বিভক্তি সে বিষয়ে চরম মতপার্থক্য আছে। আচার্য সুনীতিকুমার একে প্রত‍্যয় বলেছেন। অথচ ‘কালবাচক ক্রিয়াবিভক্তি’ কথাটি বাংলা ব্যাকরণের একটি বহুশ্রুত পরিভাষা। বাংলায় কালবাচক ক্রিয়াচিহ্ন মাত্র ৩টি: ইল, ইব, ইত। ভাষাচার্য তিনটিকেই প্রত‍্যয় বলেছেন। তাহলে কি বাংলায় কালবাচক ক্রিয়াবিভক্তি নেই? উত্তর আমার জানা নেই।]



সাধারণ অতীতের বিশিষ্ট প্রয়োগ



পুরাঘটিত বর্তমান অর্থে : আমি এইমাত্র খেলাম।



ভবিষ্যৎ সম্ভাব‍না অর্থে : “ভায়ের জন‍্য জীবনটা যদি দিই, নাহয় দিলাম।”

ঘটমান অতীত


অতীতে কোনো এক সময় কোনো কাজ চলছিল বোঝালে ঘটমান অতীত কাল হয়। 

যেমন: আমরা খেলছিলাম। রাম দেখছিল।

ঘটমান অতীতের ক্রিয়া‌রূপ নির্মাণের জন‍্য মূল ধাতুর সাথে ‘ইতে’ প্রত‍্যয় যোগ করে তার পর ‘√আছ্’ বা ‘√লাগ্’ সহায়ক ধাতু দিয়ে, তার পর কালবাচক ‘ইল্’ যোগ করে পরিশেষে পুরুষ-বাচক ক্রিয়াবিভক্তি যোগ করতে হয়। 

যেমন : খেলিতেছিলাম= √খেল+ইতে+√আছ্+ইল্+আম

খেলিতে লাগিলাম=√খেল+ইতে+ √লাগ্+ইল্+আম।

উপরের উদাহরণ-দুটিতে উত্তম পুরুষের দুই ধরণের উদাহরণ বিশ্লেষণ করে দেখানো হল। অন‍্য পুরুষগুলির গঠন এক‌ই রকম হবে। পার্থক্য থাকবে শুধু শেষে অবস্থিত পুরুষবাচক বিভক্তি‌তে। এগুলি নিজের মনোমতো উদাহরণ নিয়ে ভেঙে দেখলেই স্পষ্ট হবে। 

পুরাঘটিত অতীত 

বাংলায় পুরাঘটিত অতীত ও সাধারণ অতীতের পার্থক‍্য সুস্পষ্ট নয়; প্রায়‌ই একে অন‍্যের স্থানে ব্যবহৃত হয়। তবু মনে রাখতে হবে, প্রকৃত পুরাঘটিত অতীত তখন‌ই হবে, যখন অতীতের কোনো ঘটনার প্রেক্ষাপটে তার চেয়েও অতীতে সংঘটিত কোনো ক্রিয়ার কথা বলা হবে।(ইংরেজি Present Perfect Tense-এর মত‌ই।)



পুরাঘটিত অতীতের উদাহরণ : আমি দেখিয়াছিলাম(দেখেছিলাম)। তুমি তখন এই কথা বলিয়াছিলে। তিনি গতকাল হাঁটতে যাননি। 



অন‍্যান‍্য সব কালের মতো পুরাঘটিত অতীতের‌ও ক্রিয়ারূপ দেখেই কাল চিনতে হয়। পুরাঘটিত অতীতে মূল ধাতুর সঙ্গে ‘ইয়া’ প্রত‍্যয় যোগ করে √আছ্ ধাতু এবং তার পরে ‘ইল্’ ও পুরুষবাচক ক্রিয়াবিভক্তি (আম, এ, অ, এন ইত্যাদি) যোগ করে সমাপিকা ক্রিয়া গঠন করা হয়।


সূত্র‌টি নিম্নরূপ:


মূল ধাতু+ ইয়া+√আছ্+ইল্+পুরুষ-বিভক্তি।


যেমন: √কর্+ইয়া+√আছ্+ইল্+আম।


এইভাবে অন‍্যান‍্য পুরুষের ক্রিয়ারূপ গঠন করে পুরুষ-বিভক্তি খুঁজে নেওয়া যাবে।



বি:দ্র: পুরাঘটিত অতীতের না-বাচক ক্রিয়ার গঠন পুরাঘটিত বর্তমানের মত‌ই। পারিপার্শ্বিক বিচার করে বুঝে নিতে হয়, অতীত না বর্তমান। যেমন: “তিনি গতকাল হাঁটতে যাননি।” — এখানে ‘গতকাল’ শব্দটির প্রয়োগ থাকার কারণে এটি পুরাঘটিত অতীত কাল হয়েছে। ক্রিয়ার শেষে ‘নি’ থাকলে ক্রিয়াটিকে বিপরীত করে নিন। যেমন: যাননি>গিয়েছিলেন। এই বাক্যে গতকালের কথা আছে, তাই সঠিক বিপরীত হবে ‘গিয়েছিলেন’। যদি বল হত “আমি এখনও খাইনি” তাহলে পুরাঘটিত বর্তমান হতো।

নিত‍্যবৃত্ত অতীত


অতীতে কোনো কাজ নিয়মিত হত বোঝাতে নিত‍্যবৃত্ত অতীত কাল হয়। 

নিত‍্যবৃত্ত অতীতের ক্রিয়ার গঠন সরল। ধাতুর উত্তর ‘ইত’ প্রত‍্যয় যোগ করে তার  সাথে পুরুষ-বিভক্তি যোগ করলেই হয়।

যেমন : আমি বিদ‍্যালয়ে যাইতাম (যেতাম)।

যাইতাম=√যা+ইত+আম। (‘আম’ পুরুষ বিভক্তি।)

না বাচক ক্রিয়া ‘না’ যোগে গঠিত হয়।


নিত‍্যবৃত্ত অতীতে‌র বিশিষ্ট প্রয়োগ

কার্যকারণ বোঝাতে : তুমি যদি আসতে তাহলে আমিও যেতাম।

ভবিষ্যৎ অর্থে : আগামীকাল তুমি এলে ভালো হত। তোমরা বেড়াতে গেলে নাতিটা না হয় আমার কাছেই থাকত।

সম্ভাবনা অর্থে : আমি না পারলে অন‍্য কেউ আসত।

ইচ্ছা অর্থে : সুযোগ পেলে আমি তোমাকে দেখে নিতাম।

ভবিষ্যৎ কাল

ভবিষ্যৎ কাল বলতে বোঝায় আগামী সময়। যে কাজ এখনো হয় নি, হ‌ওয়ার কম-বেশি সম্ভাবনা আছে, সেই ক্রিয়ার কালকে ভবিষ্যৎ কাল বলে। [ভবিষ্যৎ সর্বদাই সম্ভাবনা। ভবিষ্যতে কী হবে কেউ জানে না।]

আমরা খেলব, তুমি আসবে, রাম পড়বে না, তোমরা খেলতে থাকবে, ইত‍্যাদি বাক‍্যের ক্রিয়াগুলি ভবিষ্যৎ কালের দ‍্যোতনা দিচ্ছে।

সাধারণ ভবিষ্যৎ


সাধারণ ভাবে ভবিষ্যতে কিছু হবে বলা হলে সাধারণ ভবিষ্যৎ হয়।

সাধারণ ভবিষ্যতে ক্রিয়া গঠনের জন‍্য মূল ধাতুর সাথে কালবাচক ক্রিয়াচিহ্ন ‘ইব্’ যোগ করে তার সাথে পুরুষ/বিভক্তি যোগ করতে হয়।

যেমন: আমি দেখিব। দেখিব=√দেখ্+ইব্+অ। শেষের ‘অ’ উত্তম পুরুষের পরিচয় বহন করছে। ‘ইব্’ বহন করছে ভবিষ্যৎ কালের পরিচয়।

অন‍্যান‍্য পুরুষের ক্রিয়ারূপ এইভাবে গঠন করে ভেঙে দেখলেই বোঝা যাবে।

সাধারণ ভবিষ‍্যতের বিশিষ্ট প্রয়োগ

অতীত অর্থে : আমি যেই না ঘর থেকে বেরোবো, অমনি দেখি সামনে এক বিরাট সাপ।

ঘটমান ভবিষ্যৎ অর্থে: আমি যতক্ষণ না ফিরছি, ততক্ষণ তুমি পড়বে।

ঘটমান ভবিষ্যৎ


ঘটমান ভবিষ্যৎ বলতে বোঝায় ভবিষ্যতে কোনো কাজ চলতে থাকবে। 

যেমন : আমরা খেলব আর তুমি পড়তে থাকবে। (পড়িতে থাকিবে)।

ঘটমান ভবিষ্যৎ কালের ক্রিয়া গঠনের জন‍্য মূল ধাতুর সাথে ‘ইতে’ যোগ করে সহায়ক ধাতু ‘√থাক্’ যোগ করে কালবাচক ‘ইব্’ এবং তারপর পুরুষ-বিভক্তি যোগ করা হয়। 

**(ধাতু+ইতে) এবং (√থাক্+ইব্+পুরুষ-বিভক্তি) অংশদুটি আলাদা আলাদা লেখা বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে সহায়ক ধাতু হিসেবে √আছ্ ব‍্যবহৃত হলে তবেই শেষ অংশটি মূল ধাতুর সাথে জুড়ে লেখা হয়। √থাক্ বা √লাগ্ ধাতু ব‍্যবহৃত হলে দুটি অংশ আলাদাই লেখা হয়।

যেমন: “করিতে থাকিব।”, “বলিতে তাকিবে।”, ইত্যাদি।

√বল্+ইতে (+) √থাক্+ইব্+এ।


পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ

পুরাঘটিত ভবিষ্যতে‌র প্রয়োগ সম্ভাব‍্য অতীত অর্থে হয়। এই জন‍্য একে সম্ভাব্য অতীত বলা হয়।

যেমন: হয়তো দেখে থাকব, মনে নেই। (দেখিয়া থাকিব)

সে হয়তো এতক্ষণে পৌঁছে গিয়ে থাকবে। (পৌঁছাইয়া গিয়া থাকিবে)

ক্রিয়ার গঠন:  মূল ধাতু+ইয়া+√থাক্+ইব্+পুরুষ-বিভক্তি।

যেমন : দেখিয়া থাকিব= √দেখ্+ইয়া+√থাক্+ইব্+অ।

অন‍্যান‍্য পুরুষের ক্রিয়ারূপ গঠন করার জন‍্য কেবল শেষ ক্রিয়াবিভক্তি‌টি বদলে নিলেই হবে।

ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা

ভবিষ্যৎ কালে কাউকে কিছু করতে নির্দেশ দিলে, আদেশ, অনুরোধ বা পরামর্শ বোঝাতে ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা হয়।

ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞার ক্রিয়া গঠন করা যায় দুরকম ভাবে। ১: সাধারণ ভবিষ্যতে‌র মতো।
২: মূল ধাতুর সাথে ‘ইও'(>’ইয়ো’) যোগ করে। চলিতে এই ‘ইয়ো’ থেকে ‘ও’ হয় পূর্ববর্তী স্বরেও পরিবর্তন ঘটে।

যেমন: দেখিও>দেখো ( বর্তমান অনুজ্ঞায় এক‌ই বানান হলেও উচ্চারণ হয় ‘দ‍্যাখো’।)

বলিও>বলো>বোলো।(বর্তমান অনুজ্ঞায় ‘বলো’)
খাইয়ো>খেয়ো।(বর্তমান অনুজ্ঞায় ‘খাও’)
শুনিও>শুনো।(বর্তমান অনুজ্ঞায় ‘শোনো’)

তুচ্ছ মধ‍্যম পুরুষে ধাতুর সাথে ‘ইস’/’স’ যোগ হয়।

ভবিষ‍্যতের চারটি ভাগেই না-বাচক ক্রিয়া গঠিত হয় ‘না’ যোগে‌। অবশ‍্য আঞ্চলিক উচ্চারণ ভেদ আছে। ‘যাবো নি’-র ব‍্যবহার পশ্চিমবঙ্গে যথেষ্ট শোনা যায়।

সরল কাল ও যৌগিক কাল

বাংলার কালগুলিকে সরল কাল ও যৌগিক কাল, এই দু’ভাগে ভাগ করা হয়। যে সব কালে ক্রিয়াপদ গঠনের জন‍্য মূল ধাতু ছাড়া আর সহায়ক ধাতু লাগে না তাদের সরল কাল বলে। বাংলায় প্রত‍্যেকটি সাধারণ,  ও অনুজ্ঞা কাল সরল কাল। অর্থাৎ সাধারাণ বর্তমান, সাধারণ অতীত, সাধারণ ভবিষ্যৎ, বর্তমান অনুজ্ঞা, ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা ও নিত্যবৃত্ত অতীত হল সরল কাল।

 অপর দিকে যৌগিক কালের ক্রিয়া গঠনের জন‍্য মূল ধাতুর সাথে ‘ইয়া’ বা ‘ইতে’ প্রত‍্যয় যোগ করার পর ‘√আছ্’, ‘√থাক্’ প্রভৃতি ধাতুকে সহায়ক হিসেবে ব‍্যবহার করতে হয়। বাংলায় ঘটমান ও পুরঘটিত কালগুলি যৌগিক কাল হিসেবে গণ‍্য হয়। সুতরাং পুরাঘটিত বর্তমান, ঘটমান বর্তমান, পুরাঘটিত অতীত, ঘটমান অতীত, পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ, ঘটমান ভবিষ্যৎ কালগুলি যৌগিক কাল। এই ছ’টি যৌগিক কাল ছাড়া আর‌ও কয়েকটি যৌগিক কাল রয়েছে।

যৌগিক কালের ক্রিয়া গঠন

একটি কাল যৌগিক কাল কিনা, তা নির্ণয় করার জন্য ঐ কালের একটি ক্রিয়া নিয়ে ক্রিয়াপদটিকে বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। ক্রিয়াটিকে বিশ্লেষণ করার আগে অবশ্যই সাধু ভাষায় রূপান্তরিত করে নিতে হবে। যেমন:
ঘটমান বর্তমান : করিতেছি = √কর্+ইতে+√আছ্+ই । এখানে দেখা যাচ্ছে প্রথমে আছে মূল ধাতু √কর্, তারপর আছে ‘ইতে’ প্রত্যয়, তারপর পাচ্ছি √আছ্ ধাতু। এইভাবে যে কালের ক্রিয়ার গঠনে ‘ইয়া’ ,’ইতে’ প্রত্যয় এবং সেইসঙ্গে আছ্-থাক্-যা-আস্ প্রভৃতি ধাতু পাওয়া যাবে সেই কালটি যৌগিক কাল হবে। 

ক্রিয়ার কাল চেনার সহজ উপায়

ক্রিয়ার কাল চেনার জন‍্য নিচের ধাপগুলি অবলম্বন করা যাবে।

প্রথম ধাপ: ক্রিয়াকে সাধু ভাষায় রূপান্তরিত করতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপ: এর পর ক্রিয়াটিকে তার বিভিন্ন উপাদানে ভেঙে নিতে হবে।(আগে যে ভাবে উদাহরণে দেখানো হয়েছে।)

তৃতীয় ধাপ: ‘ইল’ থাকলে অতীত, ‘ইব’ থাকলে ভবিষ্যৎ, হবে। দুটির মধ্যে  একটিও না থাকলে বর্তমান হবে।

চতুর্থ ধাপ: ধাতুর পর ‘ইয়া’ থাকলে পুরাঘটিত, ‘ইতে’ থাকলে ঘটমান, দুটির মধ্যে একটিও না থাকলে সাধারণ বা অনুজ্ঞা। 

পঞ্চম ধাপ: নিত‍্যবৃত্ত অতীত মনে রাখতে হবে এবং পুরাঘটিত বর্তমান ও পুরাঘটিত অতীতের শুধু না-বাচক রূপটি মনে রাখতে হবে। কারণ এই তিনটি কাল-রূপ উপরের নিয়মে পড়বে না।


আর‌ও পড়ুন


ক্রিয়ার কালের অনুশীলন


ক্রিয়া‌র কাল নির্ণয় ক’র:

১: আমি তোমাকে চিনি।
২: তুমি বলতে লাগলে।
৩: আমি জানতাম।
৪: সোমা এখনি আসবে।
৫: ছেলেটা বুদ্ধিমান বটে।
৬: তোমার কাজে আগ্রহ নেই।
৭: আমি বসে আছি।
৮: নজর লেগেছে।
৯: এমন কথা আমি বলিনি।
১০: আমি তোমাকে দেখেছিলাম।
১১: দৃশ‍্যটা আমরা দেখতে চাই।
১২: ছেলেটা এতদিনে বড় হয়ে গিয়ে থাকবে।
১৩: আমি বলছিলাম, তোমারা আলোচনা করে নাও।
১৪: আমাদের বাড়ি এসো একদিন।


BLOG AD HERE

4 thoughts on “ক্রিয়ার কাল চেনার উপায় | kriyar kal chenar niyom”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *