শব্দ ও পদের মধ্যে ৫ টি পার্থক্য
- শব্দের সাথে বিভক্তি যুক্ত থাকে না। পদের শেষে বিভক্তি যুক্ত থাকে।
- শব্দ সব সময় একা ; কারও সাথে তার সম্পর্ক নেই। পদ বাক্যের অংশ, সেই কারণে অন্য পদের সাথে সম্পর্কিত থাকে।
- শব্দ কেবল অভিধানে পাওয়া যায়। পদ বাক্যে ব্যবহৃত হয়।
- আমরা কথা বলার সময় শব্দ ব্যবহার করি না। আমাদের কথোপকথনে আমরা পদ ব্যবহার করি।
- পদকে বিশেষ্য-বিশেষণ প্রভৃতি পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। শব্দকে এই ভাবে ভাগ করা যায় না।
- শব্দের কাজ শুধুমাত্র অর্থ প্রকাশ করা। পদের কাজ হল অর্থসমূহকে একত্রিত করে বাক্য গঠন করা।
নিচে শব্দ ও পদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।
SSC SLST ব্যাকরণের গুরুত্বপূর্ণ কিছু PDF ডাউনলোড করুন।
শব্দ কাকে বলে
আগের অধ্যায়ে আমরা ধ্বনি সম্পর্কে আলোচনা করেছি। কিন্তু একটি একক ধ্বনি দিয়ে কখনো কখনো ভাব প্রকাশ করা গেলেও মানবমনের অসংখ্য বিচিত্র ভাব প্রকাশের জন্য একক ধ্বনি যথেষ্ট নয়। তাই ভাষায় উপস্থিত ধ্বনিগুলিকে বিভিন্ন সমন্বয়ে সাজিয়ে ধ্বনির সমষ্টি তৈরি করা হয়। এই সমষ্টিগুলি একটি করে অর্থ প্রকাশ করে। এই ধরণের ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। তবে একটি একক ধ্বনিও শব্দ হতে পারে, যদি তা দিয়ে কোনো অর্থ প্রকাশ করা যায়।যেমন-ক্+ অ+ ল্+ অ+ ম্+ অ = কলম। এখানে ৬টি ধ্বনি পাশাপাশি সাজিয়ে একটি সমষ্টি তৈরি করা হল এবং এই সমষ্টিটি একটি অর্থ প্রকাশ করছে। কারণ, ‘কলম’ কথাটি বললেই আমাদের মনে একটি বস্তুর ধারণা জেগে ওঠে, যা দিয়ে আমরা লিখি।
সুতরাং ‘কলম’ একটি শব্দ।
আবার ‘ও’ – এই ধ্বনিটি একক ধ্বনি হলেও এটি একটি শব্দ। কারণ দূরবর্তী কোনো ব্যক্তিকে নির্দেশ করার জন্য আমরা ‘ও’ বলি।(যেমন:- ও আজ আসবে।)
তাহলে শব্দ কাকে বলে? এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে বলা যায়– অর্থবহ ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে।
এই প্রসঙ্গে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন: শব্দ ছাড়াও আরও নানা ধরণের ধ্বনিসমষ্টি ভাষার মধ্যে আছে। তারাও অর্থ বহন করে, কারও অর্থ সুস্পষ্ট, কারও বা অস্পষ্ট। এদের সম্পর্কে যথা সময়ে আলোচনা করা হবে।
[শব্দ ছাড়া অন্যান্য ধ্বনিসমষ্টিগুলির মধ্যে কেবল একটির সম্পর্কে এখানে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে রাখবো, তা হল, ধাতু। ধাতু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তী অধ্যায়ে করা হবে।
ধাতু হল শব্দের মতই এক প্রকার ধ্বনি-সমষ্টি, যা দিয়ে কিছু করা বা হওয়ার ভাব প্রকাশিত হয়। এটি ক্রিয়ার প্রধান ও অপরিবর্তনশীল অংশ।
কর্, চল্, হ, যা, দে, শুন্, লিখ্, দেখ্, পড়্ প্রভৃতি হল ধাতুর উদাহরণ।]
গঠন অনুসারে শব্দের শ্রেণিবিভাগ:
গঠন অনুসারে শব্দ দুই প্রকার
১: মৌলিক শব্দ ২: সাধিত বা যৌগিক শব্দ
মৌলিক শব্দ:
যে শব্দকে ভাঙা যায় না, অর্থাৎ, ভাঙলে কোনো অর্থবহ ভগ্নাংশ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে।
মৌলিক শব্দগুলি ভাষার আসল সম্পদ।
মৌলিক শব্দের উদাহরণ:
জল, বায়ু, বাঘ, বন, সুখ, দুঃখ, নাক, কাণ, দেহ, জামা, মোজা ইত্যাদি মৌলিক শব্দের উদাহরণ। এই শব্দগুলি ভাঙতে গেলে যেমন করেই ভাঙি না কেন, কয়েকটি অর্থহীন ধ্বনি ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না ।
যৌগিক বা সাধিত শব্দ:
যৌগিক বা সাধিত– এই নাম দুটি থেকেই এর সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি হয়ে যায়। বোঝাই যাচ্ছে, এগুলির সাথে যোগের মাধ্যমে তৈরি হয়। মৌলিক শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে শব্দ বা অন্য কোনো ধ্বনিসমষ্টি জুড়ে এগুলি তৈরি করা হয়েছে। তৈরি করা মানেই সাধন করা বা চেষ্টার দ্বারা বানানো। সুতরাং যৌগিক শব্দগুলি ভাষার মূলগত উপাদান নয়, ভাষায় উপস্থিত মৌলিক উপাদানগুলি জুড়ে এগুলি বানানো হয়। যেমন, ‘বামুনঠাকুর’ একটি শব্দ কিন্তু এর মধ্যে আসলে দুটি শব্দ আছে– বামুন ও ঠাকুর। দুটি শব্দ মিলে একটি যৌগিক শব্দ গড়ে উঠেছে।
সংজ্ঞা:– যে শব্দকে ভাঙলে অন্তত একটি অর্থবহ ভগ্নাংশ(শব্দ বা ধাতু) পাওয়া যায় তাকে যৌগিক বা সাধিত শব্দ বলে।
তবে মনে রাখতে হবে, যৌগিক শব্দগুলি ভাঙলে যতগুলি ভগ্নাংশ পাওয়া যাবে তাদের সবগুলির স্পষ্ট অর্থ নাও থাকতে পারে। যেমন, ‘গতি’ শব্দটি ভাঙলে পাওয়া যায়, সংস্কৃত ‘গম্’ ধাতু ও ‘তি'(ক্তি) প্রত্যয়। ধাতুটির স্পষ্ট অর্থ থাকলেও প্রত্যয়টির স্পষ্ট অর্থ নেই।
যৌগিক শব্দের প্রকারভেদ
আদি অর্থ ও বর্তমান প্রচলিত অর্থ বিবেচনা করে যৌগিক শব্দকে ৩টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়।
১: অপরিবর্তিত যৌগিক শব্দ (বা যৌগিক শব্দ)
যৌগিক শব্দের আদি অর্থ বা ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও প্রচলিত অর্থ একই হলে তাকে বলা হয় অপরিবর্তিত যৌগিক শব্দ। এগুলিকে শুধুমাত্র ‘যৌগিক শব্দ’ বলেও অভিহিত করা হয়।
যেমন– ‘গ্রাহক’ শব্দের আদি অর্থ ‘যে গ্রহণ করে’। বর্তমানেও শব্দটি একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। তাই এটি একটি অপরিবর্তিত যৌগিক শব্দ। এরকম আরও কয়েকটি শব্দ হল– জনক, দৃশ্য, দুর্গম, সহজলভ্য, বংশগতি, জলাশয়, নগরবাসী, সন্দেহজনক, সুখসমৃদ্ধি, রঞ্জিত ইত্যাদি।
২:পরিবর্তিত যৌগিক শব্দ বা রূঢ় শব্দ:
এমন অনেক যৌগিক শব্দ আছে, যাদের আদি অর্থ বা ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেছে। এই যৌগিক শব্দগুলিকে বলা হয় পরিবর্তিত যৌগিক শব্দ বা রূঢ় শব্দ। এদের রূঢ়ি শব্দও বলে।
যেমন: ‘গবেষণা’ শব্দের আদি অর্থ, ‘গোরু খোঁজা’। কিন্তু এর বর্তমান অর্থ, ‘কোনো বিষয়ে গভীর জ্ঞানের চর্চা’।
পরিবর্তিত যৌগিক শব্দের সংখ্যা বাংলায় নিতান্ত কম নয়। এরকম আরও কয়েকটি উদাহরণ:
গবাক্ষ(আদি-গোরুর চোখ), সন্দেশ(আদি-সংবাদ), প্রবীণ(আদি-বীণা বাদনে দক্ষ) ইত্যাদি।
পরিবর্তিত যৌগিক শব্দের সংখ্যা বাংলায় নিতান্ত কম নয়। এরকম আরও কয়েকটি উদাহরণ:
গবাক্ষ(আদি-গোরুর চোখ), সন্দেশ(আদি-সংবাদ), প্রবীণ(আদি-বীণা বাদনে দক্ষ) ইত্যাদি।
৩:সংকুচিত যৌগিক শব্দ বা যোগরূঢ় শব্দ:
কিছু যৌগিক শব্দ এমন আছে, যাদের আদি অর্থ বর্তমানে সংকুচিত হয়ে গেছে। অর্থাৎ আগে একটি সামগ্রিক বা সমষ্টির অর্থ প্রকাশ করত কিন্তু বর্তমানে তার মধ্যে যে কোনো একটির অর্থ প্রকাশ করে।
যেমন:- ‘মৃগ’ শব্দের আদি অর্থ, যে কোনো বন্য পশু। বর্তমানে এর অর্থ, হরিণ। অর্থাৎ, শব্দটির অর্থ সংকুচিত হয়ে গেছে। এরকম আরও কয়েকটি শব্দ হল: পঙ্কজ(আদি-যা পাঁকে জন্মায়), মন্দির(আদি-গৃহ, বর্তমান-দেবগৃহ) ইত্যাদি।
পদের সংজ্ঞা এবং শব্দ ও পদের পার্থক্য
পদ কাকে বলে
শব্দ এবং ধাতু বিভক্তি-সহযোগে বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত হলে তাকে পদ বলা হয়।
এখানে বিভক্তি জিনিসটি আসলে কী, তা একটু আলোচনা করা প্রয়োজন। বিভক্তি এক প্রকার ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ, যা শব্দ ও ধাতুর শেষে যুক্ত হয়ে বাক্যের মধ্যে তার ভূমিকা, পরিচয় ও বাক্যের অন্যান্য অংশের সঙ্গে তার সম্পর্ক নির্ধারণ করে। অর্থাৎ বাক্যের মধ্যে একটি শব্দ ঠিক কী কাজ করছে, অন্য পদগুলির সাথে তার সম্পর্ক কী, এইসব ব্যাপার বিভক্তির সাহায্যে বোঝা যায়। তবে এমন একটি বিভক্তি আছে যার মধ্যে কোনো ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি থাকে না। অর্থাৎ চিহ্নহীন বিভক্তি। ব্যাকরণে একে শূন্য বিভক্তি বলে।
যেমন: রাম শহরে থাকে।
এই বাক্যে ‘রাম’ একটি পদ। কিন্তু এর সাথে শব্দ ‘রাম’-এর আকারগত কোনো পার্থক্য নেই। কোনো অতিরিক্ত ধ্বনি ‘রাম’-এর সাথে যুক্ত হয় নি। তবুও ‘রাম’ পদটি বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে ধরে নেওয়া হবে ‘রাম’ পদে শূন্য বিভক্তি আছে।
[**অনেকে মনে করেন শূন্য বিভক্তির চিহ্ন ‘অ’। কিন্তু এটি ঠিক নয়। কারণ ‘রাম’ শব্দের শেষে একটি অ আগে থেকেই আছে। তার উপর ‘অ’ বিভক্তি যুক্ত হলে সন্ধির নিয়মে দুই অ মিলে আ হয়ে যেত। তা তো হয় নি। আবার রাম-এর পরিবর্তে যদু থাকলে যদুর উ+অ মিলে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হত। ‘যদু’ হয়ে যেত ‘যদ্ব’। সুতরাং, মনে রাখতে হবে, শূন্য বিভক্তি পুরোপুরি শূন্যই, এর কোনো চিহ্ন নেই।]
পদের শ্রেণিবিভাগ:
প্রচলিত ধারণা (সংস্কৃত অনুসারে) অনুসারে পদ ৫ প্রকার। প্রতিটি পদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের তালিকায় পদের নামে ক্লিক করুন।
আপাতত আমরা এই প্রথাগত পদ্ধতি অনুসারেই বাংলা পদের বিস্তারিত পরিচয় পরের অধ্যায়গুলিতে আলোচনা করব। আধুনিক পদ্ধতির আলোচনা পরবর্তী কালে সময়মত করা যাবে। কার্যক্ষেত্রে এখনো এই প্রথাগত পদ্ধতিরই প্রয়োগ ঘটে চলেছে।
এই প্রসঙ্গে আর একটি কথা বলে রাখি— পদের এই শ্রেণিবিভাগ হয় বাক্যের মধ্যে পদটির ভূমিকা যাচাই ক’রে। তাই শব্দের এই প্রকার শ্রেণি নির্দেশ করা অনুচিত। অর্থাৎ ‘বিশেষ্য পদ’ বলা গেলেও ‘বিশেষ্য শব্দ’ বলা যায় না। কারণ একটি শব্দকেই বাক্যে কখনো বিশেষ্য আবার কখনো বিশেষণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
আরও পড়ুন
[সব পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করে সূচিপত্রে যান]
7 thoughts on “শব্দ ও পদের পার্থক্য | শব্দ ও পদ”
ধন্যবাদ স্যার
খুব ভালো লাগলো।
😍
thnxxx a lot for the notes
thank you sir
Thanks sir
খুব সুন্দর লেখা।