অনুকার শব্দ
অনেকেই ধ্বন্যাত্মক শব্দ ও অনুকার শব্দকে এক করে ফেলেন। ধ্বন্যাত্মক শব্দ ও অনুকার শব্দ আলাদা জিনিস। আসুন আমরা ভালো ভাবে জেনে নিই অনুকার শব্দ কী এবং ধ্বন্যাত্মক শব্দের সঙ্গে অনুকার শব্দের পার্থক্য কী।
অনুকার শব্দ কাকে বলে
একটি শব্দের সাথে ধ্বনিগত মিল রেখে(অর্থাৎ ধ্বনিগত অনুকরণে) যে সব অর্থহীন শব্দ তৈরি করা হয়, তাদের অনুকার শব্দ বলে।
যেমন : ‘জল-টল’ শব্দের ‘টল’ অংশটি অনুকার শব্দ। মনে রাখতে হবে ‘জল-টল’ পুরোটা অনুকার শব্দের উদাহরণ নয়। এ রকম আরও অনুকার শব্দের উদাহরণ হলো: খাবার-দাবার (দাবার), কাপড়-চোপড় (চোপড়), বই-টই (টই), চা-টা (টা)। অনুকার শব্দগুলি যে শব্দের অনুকরণে তৈরি হয়, সাধারণত সেই মূল শব্দটির অর্থকেই অনুসরণ করে, এদের নিজস্ব আলাদা অর্থ নেই। ‘বই-টই’ কথাটির মধ্যে অনুকার শব্দ ‘টই’-এর আলাদা অর্থ নেই, টই মানে বইয়ের মতোই অন্য কিছু। আচার্য সুকুমার সেনের মতে ফ্ ধ্বনিকে গোড়ায় রেখে যে সব অনুকার শব্দ তৈরি হয়, সেগুলির দ্বারা তাচ্ছিল্যের ভাব প্রকাশ পায়। যেমন: ‘বই-ফই’ বললে বইকে তাচ্ছিল্য করা হয়।অনুকার শব্দকে অব্যয় বলার কোনো যুক্তি নেই।
ধ্বন্যাত্মক শব্দ কাকে বলে
অপরদিকে থপথপ, দুমদাম, হুড়হুড়, কটকট, ঝাঁঝাঁ, কুচকুচ প্রভৃতি শব্দগুলি ধ্বন্যাত্মক শব্দ। ধ্বন্যাত্মক শব্দগুলি অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ্য, বিশেষণ, ক্রিয়াবিশেষণ প্রভৃতি পদের ভূমিকা পালন করে। একটি ধাতুর পূর্বে বসে এরা যুক্ত ধাতু গঠন করে। ধ্বন্যাত্মক শব্দকে দু ভাগে ভাগ করা যায়: অনুকার ধ্বন্যাত্মক শব্দ ও ভাব প্রকাশক ধ্বন্যাত্মক শব্দ। এক্ষেত্রে অনুকার বলতে জাগতিক ধ্বনির অনুকরণ বোঝাচ্ছে। যেমন: মস মস, থপ থপ, দুম দাম, হুড় হুড়, কড়মড়, কিড়মিড় প্রভৃতি। এগুলো কোনো না কোনো জাগতিক (বাস্তব) ধ্বনির দ্যোতনা দেয়। অপর দিকে ভাব প্রকাশক ধ্বন্যাত্মক শব্দগুলি কোনো বিশেষ ভাবকে প্রকাশ করে, কোনো ধ্বনিকে প্রকাশ করে না। যেমন: টনটন, ঝাঁ ঝাঁ, চক চক, ফুট ফুট, খাঁ খাঁ ইত্যাদি।