অভিশ্রুতির সংজ্ঞা ও ধারণা
অপিনিহিতির ফলে এগিয়ে আসা ই বা উ তার পাশাপাশি স্বরধ্বনির সাথে অভ্যন্তরীণ সন্ধিতে মিলিত হয়ে স্বরধ্বনির যে পরিবর্তন ঘটায়, তাকে অভিশ্রুতি বলে।
অন্য ভাবে বলা যায়: অপিনিহিত ই বা উ যখন তার পাশাপাশি স্বরধ্বনিকে প্রভাবিত করে এবং নিজেও তার সঙ্গে মিশে যায়, তখন তাকে অভিশ্রুতি বলে।
অভিশ্রুতির উদাহরণ
করিয়া > কইর্যা > করে (উচ্চারণ ‘কোরে’)
দেখিয়া > দেইখ্যা > দেখে
গাছুয়া > গাউছা > গেছো
ভাতুয়া > ভাউতা > ভেতো
কন্যা > কইন্যা > কনে
উপরের উদাহরণগুলিতে প্রথমে অপিনিহিতি ও তার পর অভিশ্রুতি দেখানো হয়েছে।
এখন আমরা অভিশ্রুতির একটি উদাহরণ বিশ্লেষণ করে দেখবো আসলে এখানে কী ঘটছে।
কইর্যা > করে — এই উদাহরণটিকে ভেঙে দেখবো।
ক্ + অ + ই + র্ + য্ + আ > ক্ + অ + র্ + এ
এখানে দেখা যাচ্ছে
১: ক্, অ, র্ ধ্বনি অপরিবর্তিত রয়েছে।
২: য্ ধ্বনি লোপ পেয়েছে।
৩: ই স্বরধ্বনি লুপ্ত হয়েছে এবং আ-এর বদলে এ স্বরধ্বনি এসেছে।
এই তৃতীয় ঘটনাটিই আসলে অভিশ্রুতি। অপিনিহিত স্বর ই এবং সন্নিহিত স্বর আ এক ধরনের সন্ধিতে মিলিত হয়ে এ স্বরধ্বনিতে পরিণত হয়েছে। এই সন্ধি সাধারণ সন্ধির নিয়মে হয় না। অভিশ্রুতিতে যা ঘটে তাকে একাধিক ধ্বনিপরিবর্তনের ফলশ্রুতিও বলা যায়। অভিশ্রুতিতে স্বরধ্বনির যে পরিবর্তন ঘটে তার সাথে স্বরসঙ্গতির প্রচুর মিল আছে। এক কথায় বলতে গেলে এই দুটি একই গোত্রের পরিবর্তন। পার্থক্য একটাই জায়গায়: অভিশ্রুতিতে অপিনিহিতি-যোগ থাকে, স্বরসঙ্গতির ক্ষেত্রে তা থাকে না। ডঃ সুকুমার সেনের মতে অপিনিহিত স্বরটি পূর্ববর্তী স্বরের সঙ্গে মিলিত হয় এবং পরবর্তী স্বরটি তদনুসারে পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ ডঃ সেনের মতে অ এবং ই মিলিত হয়ে গেছে, আর সেই প্রভাবে শেষের আ বদলে গিয়ে এ হয়েছে। আমি যে ব্যাখ্যাটি বললাম, সেটি ডঃ রামেশ্বর শ’-এর মত। অভিশ্রুতির ব্যাখ্যায় ডঃ সেনের মত অপেক্ষা ডঃ শ’-এর মত বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে।
বাক্য > বাইক্ক, যজ্ঞ > যইগ্গ, এই সব অপিনিহিতির ক্ষেত্রে অভিশ্রুতি হবে না। এগুলির ক্ষেত্রে শুধু অপিনিহিত স্বরটি লোপ পাবে। যইগ্গ > যগ্গো, বাইক্ক > বাক্কো। আজি > আইজ > আজ এই উদাহরণটিও অভিশ্রুতির উদাহরণ নয়। এটিও স্বরলোপের উদাহরণ।
আরও পড়ুন