বিশেষ্য গুচ্ছ, ক্রিয়া গুচ্ছ ও ক্রিয়াবিশেষণ গুচ্ছ
এই আলোচনায় যা আছে
- বাক্যের গাঠনিক গুচ্ছ বলতে কী বোঝায়
- বাক্যের গাঠনিক গুচ্ছ কত প্রকার
- বিশেষ্য গুচ্ছ
- ক্রিয়াগুচ্ছ
- ক্রিয়াবিশেষণ গুচ্ছ
বাক্যের গুচ্ছ বলতে কী বোঝায়
সঞ্জননী ব্যাকরণে বাক্যের সংগঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আমরা জানি বাক্যের দুটি অংশ, উদ্দেশ্য ও বিধেয়। এ ছাড়া একটি বাক্য গঠিত হয় কয়েকটি পদের সমন্বয়ে। তবে এইটুকু বললেই বাক্যের গঠন-প্রক্রিয়ার চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষ হয় না। আসলে বাক্যের উপাদানগুলি বাক্যের মধ্যে সন্নিবিষ্ট হওয়ার জন্য নিজেদের মধ্যে জোট গঠন করে। অর্থাৎ কয়েকটি উপাদান মিলিত হয়ে এক একটি গুচ্ছ গঠন করে। তারপর ঐ গুচ্ছগুলি পাশাপাশি সন্নিবেশিত হয়ে পূর্ণাঙ্গ বাক্য গঠন করে। এখানে ‘বাক্যের উপাদান’ বলতে বোঝানো হয়েছে শব্দ, শব্দবিভক্তি, অনুসর্গ, ধাতু , ধাতুবিভক্তি প্রভৃতি। একটি গুচ্ছ বা জোটের মধ্যে এই উপাদানগুলির মধ্যে কোনও একটি বা একাধিক থাকতে পারে।
বাক্যের গুচ্ছ কত প্রকার
একটি বাক্যে তিন প্রকার গুচ্ছ বা জোট থাকতে পারে।
- বিশেষ্য গুচ্ছ বা বিশেষ্য জোট।
- ক্রিয়াগুচ্ছ বা ক্রিয়াজোট।
- ক্রিয়াবিশেষণ গুচ্ছ বা ক্রিয়াবিশেষণ জোট।
এ ছাড়া বিশেষণ জোট এবং অনুসর্গ জোটের কথাও কেউ কেউ বলে থাকেন, তবে এগুলি আসলে উপরোক্ত তিনটি জোটেরই কোনোটি না কোনোটির অন্তর্গত।
বিশেষ্য গুচ্ছ
বিশেষ্য গুচ্ছ মূলত বাক্যের উদ্দেশ্য অংশটি গঠন করে। উদ্দেশ্যের প্রসারক পদগুলিও এই গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত হয়।
বিশেষ্য গুচ্ছের উদাহরণ:
আমাদের গ্রামের ঘোষবাবুর বাগানের আমগুলি ঝড়ে পড়ে গেছে।
এই দুই বাক্যের পুরো উদ্দেশ্য অংশটিই(চিহ্নিত অংশটি) বিশেষ্য গুচ্ছ। এখন আমরা প্রথম উদাহরণের বিশেষ্য গুচ্ছটিকে বিশ্লেষণ করে দেখি এর মধ্যে কী কী আছে।
মূল উদ্দেশ্য: ঘোড়াটা = ঘোড়া + টা (২টি)
উদ্দেশ্যের বিশেষণ: আরবি (১টি)
উদ্দেশ্যের সম্বন্ধ পদ: বৃন্দাবনবাবুর = বৃন্দাবনবাবু+র (২টি)
উপরের দুটি উদাহরণে বিশেষ্যগুচ্ছগুলি বাক্যের উদ্দেশ্য রূপে কাজ করছে।
অর্থাৎ দেখতে পাচ্ছি মোট ৫টি উপাদানের মিলনে এই বিশেষ্য জোটটি গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া আর একটি উপাদান অদৃশ্য ভাবে আছে: ‘ঘোড়াটা’ পদের শূন্য বিভক্তি। এই দিক থেকে মোট উপাদান ৬টি বলা চলে। যদিও একটি গুচ্ছের মধ্যে ঠিক কতগুলি উপাদান আছে তার বিশ্লেষণ খুব একটা জরুরি নয়। গুচ্ছটিকে চিনতে পারাই আসল কথা।
ক্রিয়া গুচ্ছ
ক্রিয়াগুচ্ছ বলতে বোঝায় সমাপিকা ক্রিয়া ও কর্ম। সমাপিকা ক্রিয়ার মধ্যে অবশ্যই থাকবে ক্রিয়ার মূল ধাতু ও ক্রিয়াবিভক্তি। এ ছাড়া থাকতে পারে প্রকারবাচক প্রত্যয় ও সহায়ক ধাতু।
ক্রিয়াভাগ ও ক্রিয়াগুচ্ছ
চমস্কি বাক্যকে প্রথমত দুটি অংশে ভাগ করেছেন: বিশেষ্য ভাগ ও ক্রিয়াভাগ। এই বিভাজনকে উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের সমার্থক বলেই মনে হয়। ক্রিয়াগুচ্ছ ও চমস্কির ক্রিয়াভাগ এক নয়। চমস্কির ক্রিয়াভাগের মধ্যে ক্রিয়াবিশেষণও স্থান পায়, কর্মও স্থান পায়।
ক্রিয়াগুচ্ছের মধ্যে কী কী থাকবে?
ক্রিয়াগুচ্ছের মধ্যে থাকবে: শুধুমাত্র সমাপিকা ক্রিয়া । এই সমাপিকা ক্রিয়ার দুটি অংশ থাকে: ধাতু ও ক্রিয়ামাত্রা। ক্রিয়ামাত্রার মধ্যে আবার কয়েকটি অংশ থাকতে পারে। যেমন: ‘করিতেছিলাম’ সমাপিকা ক্রিয়াটির দুটি অংশ:
ধাতু ক্রিয়ামাত্রা*
কর্ + ইতেছিলাম (ইতে+√আছ্+ইল্+আম)
* ক্রিয়ামাত্রা কাকে বলে?
যে সব প্রত্যয়, ক্রিয়াবিভক্তি প্রভৃতি উপাদান ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে সমাপিকা ক্রিয়া গঠন করে তাদের একত্রে বলে ক্রিয়ামাত্রা।
ক্রিয়াগুচ্ছের উদাহরণ
কর্ম কারক কোন গুচ্ছের মধ্যে পড়বে?
ক্রিয়াবিশেষণ গুচ্ছ
ক্রিয়াবিশেষণ গুচ্ছের কাজ হলো ক্রিয়া-সম্পাদনকে স্পষ্ট করা বা ক্রিয়াকে স্পষ্ট করা। ক্রিয়ার স্থান, কাল, ধরন, শর্ত, হেতু, লক্ষ্য ইত্যাদি প্রকাশ করা হলো ক্রিয়াবিশেষণ গুচ্ছের কাজ। বাক্যের যে পদগুলি ক্রিয়াবিশেষণগুচ্ছে পড়বে সেগুলি হলো:
- ক্রিয়াবিশেষণ।
- করণ কারক ও তার বিশেষণ ও তার সম্বন্ধ পদ।
- নিমিত্ত কারক ও তার বিশেষণ ও তার সম্বন্ধ পদ।
- অপাদান কারক ও তার বিশেষণ ও তার সম্বন্ধ পদ।
- অধিকরণ কারক ও তার বিশেষণ ও তার সম্বন্ধ পদ।
- তিন ধরনের অসমাপিকা ক্রিয়া।
2 thoughts on “গুচ্ছ বা জোট: বাক্য গঠনের ব্যাকরণ | বিশেষ্য গুচ্ছ, ক্রিয়া গুচ্ছ ও ক্রিয়া বিশেষণ গুচ্ছ”
Pingback: নিমিত্ত কারক কাকে বলে - Ananyabangla.com
Pingback: অপভাষা কাকে বলে | অপভাষা কী - Ananyabangla.com