দ্বিগু সমাস
দ্বিগু শব্দের অর্থ হল: দ্বি গো-এর বিনিময়ে ক্রীত। দ্বি মানে দুই এবং গো মানে গোরু। প্রাচীন কালের ভারতবর্ষে গোরুর বিনিময়ে কেনাবেচা চলতো। দুটি গোরু দিয়ে যে জিনিসটি কেনা হতো, তাকেই তখনকার দিনে দ্বিগু বলা হতো। এই দ্বিগু শব্দটি নিজেই একটি দ্বিগু সমাসের আদর্শ উদাহরণ। একটি আদর্শ উদাহরণকেই সমাসের নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এটিই দ্বিগু সমাসের নামকরণের কারণ।
দ্বিগু সমাস কাকে বলে
যে সমাসের পূর্বপদে থাকে সংখ্যাবাচক শব্দ ও পরপদে থাকে বিশেষ্য এবং পরপদ তথা বিশেষ্যটির অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে।
দ্বিগু সমাস কত প্রকার?
দ্বিগু সমাস দুই প্রকার।
১: সমাহার দ্বিগু:
এই দ্বিগু সমাসে বিশেষ্যের সমষ্টি বা সমাহার বোঝায়।
যেমন:
পঞ্চ বাণের সমাহার: পঞ্চবান
পঞ্চ নদের সমাহার: পঞ্চনদ
ত্রি শূলের সমাহার: ত্রিশূল
পঞ্চ গব্যের সমাহার: পঞ্চগব্য (গোময়, গোমূত্র, দধি, দুগ্ধ, ঘৃত)
পঞ্চ বটের সমাহার: পঞ্চবটী
এইরকম সাতসাগর, পঞ্চপাণ্ডব, নবগ্রহ, অষ্টবসু প্রভৃতি সমাহার দ্বিগুর উদাহরণ।
২ : তদ্ধিতার্থক দ্বিগু
তদ্ধিত একধরনের প্রত্যয়। এক ধরনের দ্বিগু সমাসে সমস্তপদটি গড়ে ওঠার সময় পদটির শেষে একটি তদ্ধিত প্রত্যয় যুক্ত হয়। এদেরও পূর্বপদে সংখ্যাবাচক শব্দ ও পরপদের বিশেষ্য থাকে। এগুলিকে তদ্ধিতার্থক দ্বিগু বলে।মনে রাখতে হবে, মান্য চলিত বাংলা শব্দে তদ্ধিতার্থক দ্বিগু সমাসের ঐ তদ্ধিত প্রত্যয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে উচ্চারণ পরিবর্তনের কারণে লোপ পেয়েছে। বাংলায় সে কারণেই তদ্ধিত প্রত্যয়টি অধিকাংশ সময় দেখা যায় না।
যেমন:
তিন কড়ির বিনিময়ে ক্রীত: তিনকড়ি
সাত কড়ির বিনিময়ে ক্রীত (কেনা): সাতকড়ি
দ্বি গো-এর বিনিময়ে ক্রীত: দ্বিগু (গো>গু হয়েছে তদ্ধিত প্রত্যয়টির কারণে)
তিনকড়ি, সাতকড়ি প্রভৃতি শব্দের মূল রূপ ‘তিনকড়িয়া’, ‘সাতকড়িয়া’। ‘ইয়া’ তদ্ধিত প্রত্যয় রাঢ়ি ও বঙ্গালি উপভাষায় পরিবর্তিত হয়ে ‘তিনকোড়ে’ , ‘সাতকোড়ে’ প্রভৃতি শব্দ হয়েছে। ঝাড়খণ্ডি উপভাষায় এই প্রত্যয় মোটামুটি অবিকৃত আছে। পাঁচ হাজারের বিনিময়ে কেনা = পাঁচহাজারি — এই উদাহরণে তদ্ধিত প্রত্যয় লোপ পায়নি। ‘হাজার’ এখানে বিশেষ্যের কাজ করছে।
অব্যয়ীভাব সমাস
অব্যয়ীভাব সমাসে পূর্বপদের অর্থপ্রাধান্য থাকে। এই সমাসের পূর্বপদে একটি উপসর্গ থাকে এবং পরপদে বিশেষ্য থাকে। ব্যাসবাক্য করার সময় উপসর্গটির অর্থ বোঝানোর জন্য ঐ উপসর্গের সমার্থক একটি শব্দ ব্যবহার করা হয়।
বিভিন্ন অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস হয়। মনে রাখার জন্য একটি মজার সূত্র আছে।
সূত্রটি হলো : অ² প² যো বী সা²
(অ-স্কয়্যার, প-স্কয়্যার, যো-বী-সা-স্কয়্যার)
বিজ্ঞাপন
অ² : অভাব, অনতিক্রম
প² : পশ্চাৎ, পর্যন্ত
যো : যোগ্যতা
বী : বীপ্সা
সা² : সাদৃশ্য, সামীপ্য
এছাড়া ক্ষুদ্র অর্থেও অব্যয়ীভাব হয়।
উদাহরণ:
ভিক্ষার অভাব: দুর্ভিক্ষ
রীতিকে অতিক্রম না করে: যথারীতি
তাপের পশ্চাৎ : অনুতাপ
কণ্ঠ পর্যন্ত : আকণ্ঠ
রূপের যোগ্য : অনুরূপ
ঘর ঘর : প্রতিঘর
মহাদেশের সদৃশ : উপমহাদেশ
কূলের সমীপে : উপকূল
ক্ষুদ্র জাতি : উপজাতি
ক্ষুদ্র নগরী : উপনগরী
গমনের পশ্চাৎ : অনুগমন
ক্ষুদ্র শাখা : প্রশাখা
সন সন : ফি-সন (প্রতি বছর)
নিত্য সমাস কাকে বলে?
যে সমাসের সমস্যমান পদগুলি সর্বদাই সমাসবদ্ধ থাকে এবং যে সমাসের ব্যাসবাক্য করা যায় না অথবা ব্যাসবাক্য করার জন্য অন্য পদের সাহায্য নিতে হয়, তাকে নিত্য সমাস বলে।
‘নিত্য’ শব্দের অর্থ হল ‘সর্বদা’ বা ‘সবসময়’। নিত্য সমাসের সমস্যমান পদগুলি সর্বদাই সমাসবদ্ধ থাকে। তাই এদের ব্যাসবাক্য করা যায় না অথবা ব্যাসবাক্য করতে হলে অন্য পদের সাহায্য নিতে হয়।
নিত্য সমাসে পরপদের অর্থ প্রধান হয়। তাই একে কর্মধারয় সমাসের একটি শ্রেণি বললে ভুল হবে না। নিত্য সমাসের সঙ্গে কর্মধারয় সমাসের সাদৃশ্য আছে।
নিত্য সমাস কত প্রকার
নিত্য সমাস দুই প্রকার:
অবিগ্রহ নিত্য সমাস : যে নিত্য সমাসের ব্যাসবাক্য করা যায় না। যেমন: কৃষ্ণসর্প, কাঁচকলা।
অ-স্বপদবিগ্রহ নিত্য সমাস: যে নিত্য সমাসের ব্যাসবাক্য হয়, কিন্তু ব্যাসবাক্য করার জন্য পৃথক একটি পদের সাহায্য নিতে হয়। যেমন: গ্রামান্তর = অন্য গ্রাম, দেশান্তর = অন্য দেশ, কুন্দনিভ = কুন্দের ন্যায়।
নিত্য সমাসের উদাহরণ:
কৃষ্ণ সর্প : কৃষ্ণসর্প**
দাঁড় কাক : দাঁড়কাক
কাঁচা কলা : কাঁচকলা **
অন্য গ্রাম : গ্রামান্তর
অন্য দেশ : দেশান্তর
অন্য মনু : মন্বন্তর
কেবল লেখা : লেখালিখি
কুন্দের ন্যায় : কুন্দনিভ/কুন্দসন্নিভ
ইন্দুর(চাঁদের) ন্যায় : ইন্দুনিভ
শূলীশম্ভুর ন্যায় : শূলীশম্ভুনিভ
** ‘কাঁচা যে কলা’ বললে ভুল হবে, কারণ: কাঁচকলা একটি বিশেষ জাতের কলাকেই বলা হয়। যে কোনো কলা কাঁচা হলেই তাকে কাঁচকলা বলা যায় না। এই বিষয়টি নিত্য সমাসের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হয়। কৃষ্ণসর্পও তাই।
আমাকে YouTube-এ ফলো করার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন
সমস্ত পোস্ট দেখার জন্য সূচিপত্রে যান।