বাক্য রচনা
বাক্য রচনা করার নিয়ম
বাক্য রচনা করা ছোটোদের ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চর্চা। ছোটোবেলায় সুন্দর সুন্দর বাক্য রচনা করতে পারলে বড়ো হয়ে শুদ্ধ ও সুন্দর ভাষায় বড়ো বড়ো উত্তর ও প্রবন্ধ লেখা সহজ হয়ে যাবে। তাই ছোটোদের বাক্য রচনার বিষয়টিকে কখনোই কম গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন না। আসুন জেনে নিই ভালো বাক্য-রচনা করার কয়েকটি উপায়।
বাক্য রচনা pdf ডাউনলোড করতে এবং তালিকা দেখতে নিচের দিকে যান।
১: বাক্য রচনা যেন দায়সারা না হয়। দায়সারা বাক্য রচনা করলে বাক্যটি ব্যাকরণগত ভাবে শুদ্ধ হলেও তাতে পুরো নম্বর দেওয়া হবে না। তার কারণ, বাক্য রচনা একটি দক্ষতামূলক কাজ। তাই বাক্য রচনা করার সময় খেয়াল রাখতে হবে একটি বাক্যে কমপক্ষে ৫-৬টি শব্দ যেন অবশ্যই থাকে। অল্প বয়সে বড় আকারের বাক্য রচনা করার অভ্যাস গড়ে তুললে পরবর্তী জীবনে দীর্ঘ রচনা লেখা অনেক সহজ হয়ে উঠবে।
২: বাক্যের ভাবটি একেবারে সাদামাটা হলে বাক্য সুন্দর হয় না। বাক্যের ভাবটিই তার আসল সৌন্দর্য। তাই বাক্যের মধ্যে শিশুমনের উপযুক্ত মহৎ ধারণা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মানবিক চেতনা, সুকুমার প্রবৃত্তি, সমাজবোধ ইত্যাদির প্রকাশ ঘটা বাঞ্ছনীয়। এতে শিশুদের চরিত্র-গঠনেও সুপ্রভাব পড়বে।
৩: বাক্যের মধ্যে ছেদ বা যতি-চিহ্নের যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে হবে। এ জন্য ছেদ ও যতিচিহ্নের ব্যবহার ভালো মতো শিখে নিতে হবে।
৪: যে শব্দটি দিয়ে বাক্য রচনা করতে হবে, বাক্যের অন্যান্য শব্দগুলিকে তার সঙ্গে মানানসই হতে হবে। যেমন: ‘পুষ্প’ শব্দ দিয়ে বাক্য রচনা করতে হলে ‘গাছ’ শব্দের পরিবর্তে ‘বৃক্ষ’ শব্দটি ব্যবহার করতে হবে। গাছ-এর সঙ্গে পুষ্প বেমানান, কিন্তু বৃক্ষের সঙ্গে পুষ্প মানানসই।
৫: বাক্য রচনা করার সময় সাধু ও চলিত ভাষা মিশিয়ে ফেললে চলবে না। একে গুরুচণ্ডালী বলে। গুরুচণ্ডালী দোষ করলে বাক্য রচনা ভুল হয়েছে বলে ধরা হয়। তাই সব সময় চেষ্টা করতে হবে চলিত ভাষায় বাক্য রচনা করতে। যদি সাধু ভাষায় বাক্য রচনা করার কথা উল্লেখ করা থাকে, তবেই সাধু ভাষা ব্যবহার করা উচিত।
৬: বাক্যের মধ্যে ভাবগত সামঞ্জস্য রক্ষা করতে হবে। অবিশ্বাস্য তথ্য, অবিশ্বাস্য যুক্তি, অলৌকিক বা হাস্যকর কথা দিয়ে বাক্য রচনা করা চলবে না। এই বিষয়টি বিস্তারিত জানার জন্য বাক্য গঠনের শর্তাবলী পড়ে নেওয়া ভালো।
৭: বানানের দিকে নজর রাখতে হবে। বানান ভুল কখনোই কাম্য নয়, কিন্তু বাক্য রচনার ক্ষেত্রে বানান ভুল একটি বড়ো ত্রুটি।
বিভিন্ন শব্দ দিয়ে বাক্য রচনার উদাহরণ (বর্ণানুক্রমিক)
অদ্ভুত: রমেনবাবুর অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা নিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।
অবদান: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজির অবদান অনস্বীকার্য।
অম্বল: বিয়েবাড়িতে গিয়ে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ছেলেটির অম্বল হয়েছে।
অশুভ: অশুভ শক্তির কাছে কখনোই মাথা নোয়াতে নেই।
অসম্ভব: নিষ্ঠা ও অধ্যবসায় ছাড়া সত্যিকারের সাফল্য লাভ করা অসম্ভব।
অসাধারণ: মাধ্যমিক পরীক্ষায় অরিত্রর অসাধারণ সাফল্যে গোটা এলাকার মুখ উজ্জ্বল হয়েছে।
আঁচল : মা নিজের সন্তানকে আঁচল দিয়ে ঢেকে রেখেছেন।
আকাশ : বর্ষার আকাশে জলভরা কালো মেঘের আনাগোনা শুরু হয়।
আদর্শ: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আজও ভারতীয় যুব সমাজের আদর্শ।
আবিষ্কার : নিত্য নতুন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি এগিয়ে চলেছে।
আলো : জ্ঞানের আলো ছাড়া কুসংস্কারের অন্ধকার দূর হবে না।
আশ্চর্য: পৃথিবীতে এমন আশ্চর্য ঘটনাও ঘটে যে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।
আসল : আসল আর নকলের মধ্যে ফারাক খুঁজে পাওয়া সব সময় সহজ হয় না।
উদার : শিক্ষা যদি মানুষকে উদার না করে, তবে সেই শিক্ষা মূল্যহীন।
ঊষা : রাত্রিশেষে অন্ধকার দূর হতে শুরু করলেই ঊষার আগমন ঘটে।
কান্না: দুর্গত মানুষের কান্না দূর করতে এগিয়ে আসাই প্রকৃত মানবতা।
কূল: শরৎ কালে কাঁসাই নদীর কূলে কাশ ফুলের সমারোহ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
কৌতুহল : বিভিন্ন বিষয়ে গভীর কৌতুহল ছাড়া জ্ঞানের পরিধি বিস্তার লাভ করে না।
গৌরব দিয়ে বাক্য রচনা: আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা আমাদের সবচেয়ে বড়ো গৌরব।
ঘর : ঘর থেকে বাইরে পা না ফেললে পৃথিবীকে জানা যায় না।
ঘোমটা: গ্রামাঞ্চলের গৃহবধূরা অনেকেই মাথায় ঘোমটা দিতে অভ্যস্ত।
চমৎকার দিয়ে বাক্য রচনা: পুজোর অষ্টমীতে লাল রঙের জামার সঙ্গে নীল রঙের প্যান্টে গুবলুকে চমৎকার মানিয়েছিলো।
চিঠি: আধুনিক প্রযুক্তির যুগে চিঠি লেখার চল প্রায় উঠেই গেছে।
চেতনা: একমাত্র প্রকৃত শিক্ষাই পারে মানুষের চেতনা জাগ্রত করতে।
চোখ দিয়ে বাক্য রচনা: নিজের চোখ দিয়ে পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে হবে।
জগৎ : বিজ্ঞানী আইনস্টাইন তাঁর প্রতিভার দ্বারা সমগ্র জগৎকে বিস্মিত করেছেন।
জন্তু: বন্য জন্তুরা আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেছে, তাই তাদের সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
জীবন: বাল্যকাল হল জীবন গড়ে তোলার সময়।
জীবিকা: কোনো জীবিকাকেই ছোটো বা হীন মনে করা উচিত নয়।
জ্ঞান: জ্ঞানের আলো ছাড়া কুসংস্কারের অন্ধকার দূর করা যায় না।
ঝরনা: অযোধ্যা পাহাড়ের বুক চিরে বেরিয়ে এসেছে একখানি অপূর্ব সুন্দর ঝরনা।
তীক্ষ্ণ : মাস্টারমশাইয়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়িয়ে ফাঁকি দেওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়।
তেপান্তর: ছোটোবেলায় ঠাকুমার মুখে রাজকুমার আর তেপান্তরের মাঠের গল্প শুনতে খুব ভালো লাগতো।
ত্রিমুখী: ত্রিমুখী আক্রমণের মোকাবিলা করা কোনো অনভিজ্ঞ সেনাপতির কাজ নয়।
দাঁড়: হালের কাজ হল নৌকার দিশা ঠিক করা আর দাঁড়ের কাজ হল নৌকাকে গতি দেওয়া।
দিঘি: সন্ধেবেলা পালবাবুদের দিঘির পাড় ধরে একা একা যেতে গা ছম ছম করে।
দুঃখ: সুখে আত্মহারা ও দুঃখে বিচলিত হওয়া প্রাজ্ঞ মানুষের ধর্ম নয়।
দেশ: দেশকে ভালোবাসা প্রতিটি নাগরিকের সবচেয়ে মহান কর্তব্য।
নিতান্ত: নিতান্ত দায়ে পড়েই আমি তোমার সাহায্য চেয়েছিলাম।
নিমন্ত্রণ: বাবার বন্ধুর বাড়িতে বিয়েবাড়ির নিমন্ত্রণে গিয়ে দারুণ মজা হলো।
নির্জন: রাতের অন্ধকারে নির্জন পথে একা একা হাঁটতে আমার বেশ ভয় করছিলো।
পাখি: বাংলার পল্লীগ্রামে এখন আর আগের মতো নানা রকম পাখি দেখতে পাওয়া যায় না।
পাতা : গাছের পাতায় জমে থাকা বৃষ্টির জলে সূর্যের আলো এসে পড়ায় খুব সুন্দর লাগছে।
পৃথ্বী: আমাদের বাসভূমি এই পৃথ্বী আমাদের লালন পালন করে আসছে।
প্রকাণ্ড: আমাদের বাড়ির ঠিক সামনেই আছে প্রাচীন কালের এক প্রকাণ্ড বট গাছ।
প্রধান: বর্তমান দিনে পড়াশোনার প্রধান অন্তরায় হয়ে উঠেছে মোবাইল ফোন।
প্রশ্ন: মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে প্রশ্ন করে নিজেদের মনের সন্দেহ দূর করে নেয়।
প্রয়োজন: প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বললে লোকে তাকে গুরুত্ব দেয় না।
প্রান্তর: সম্মুখে যে বিস্তীর্ণ প্রান্তর দেখা যাচ্ছে, এই সেই বিখ্যাত কচু-চুষির মাঠ।
ফুল : বসন্তের আগমনে গাছে গাছে ফুলের সমারোহ দেখে মনে হয় প্রকৃতি যেন বিয়়েবাড়ির সাজে সেজে উঠেছে।
বাতাস : শরৎ এলেই বাংলার বাতাসে পুজোর গন্ধ পাওয়া যায়।
বাদল : বাদল দিনের বিকেলবেলা প্রকৃতিকে বড় বিষণ্ণ দেখায়।
বাংলা: বাংলা ভাষা পৃথিবীর সবচেয়ে সুমিষ্ট ভাষাগুলির মধ্যে একটি।
বই: বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে না পারলে প্রকৃত শিক্ষা সম্ভব নয়।
বৃষ্টি: তিন দিনের প্রবল বৃষ্টিতে মাঠ ঘাট কানায় কানায় ভরে উঠেছে।
ব্যর্থ: যে সত্যিকার পরিশ্রম করবে, সে কখনও ব্যর্থ হবে না।
মন্ত্রণা : যারা মানুষের কানে খারাপ মন্ত্রণা দেয়, তাদের থেকে দূরে থাকা উচিত।
মন্থর: মন্থর গতিতে হাঁটলে শরীরের ব্যায়াম ঠিক মতো হয় না।
মস্ত: ঠাকুরদার গোঁফ জোড়াটি মস্ত হলে কী হবে, মানুষটি আসলে খুবই নরম স্বভাবের।
মা: সারা জগতে মায়ের স্নেহের কোনো তুলনা মেলে না।
মাল্লা: বাংলার মাঝি মাল্লাদের গানগুলি বাঙালি সংস্কৃতির মূল্যবান সম্পদ।
মুক্তি: মহান বিপ্লবীদের আত্মত্যাগের ফলে আমরা পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেয়েছি।
মেঘ : শরতের সাদা মেঘ নীল আকাশের বুকে অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করে।
রাজা: আগেকার দিনে দেশের রাজা ছিলেন সাধারণ মানুষের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা।
রৌদ্র : বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসের রৌদ্রে গোটা মাঠখানা ফুটিফাটা হয়ে গেছে।
শিক্ষক: প্রতিটি মানুষেরই জীবনে একজন আদর্শ শিক্ষকের সংস্পর্শে আসা প্রয়োজন।
শিক্ষা: প্রকৃত শিক্ষা মানুষের চরিত্র গঠন করে, পুঁথিগত বিদ্যা তা পারে না।
শৈবাল: স্থির জলেই শৈবাল জন্মায়, নদীর বহমান জলে পারে না।
শোভা: পাহাড়ি অঞ্চলের প্রকৃতির শোভা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।
সবুজ: সবুজ বনানীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে গিয়েছিলাম।
সমুদ্র: সমুদ্রকে এক মনে কিছুক্ষণ দেখলে মন উদাস হয়ে পড়ে।
সমুদ্রযাত্রা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমুদ্রযাত্রার অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ রয়েছে তাঁর ‘জাপানযাত্রী’ গ্রন্থে।
সমৃদ্ধিশালী (‘সমৃদ্ধশালী’ ভুল বানান): প্রাচীন ভারতে পাটলিপুত্র ছিল পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম এক সমৃদ্ধিশালী নগর।
সহিষ্ণুতা: সহিষ্ণুতা না থাকলে জীবনে বড় হওয়া যায় না।
সংসার : শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের জীবনে সংসার ও সন্ন্যাসের মেলবন্ধন দেখতে পাওয়া যায়।
সংস্কৃতি : ভারতের মহান সংস্কৃতি সারা পৃথিবীতে সমাদৃত।
সংস্পর্শ: অসৎ মানুষের সংস্পর্শ অনেক সময় সৎ মানুষকেও বিপথে পরিচালিত করে।
সুখ: প্রকৃত সুখ ধন-সম্পদের দ্বারা অর্জন করা যায় না।
স্নিগ্ধতা: ভোরবেলার বাতাসে যে স্নিগ্ধতা থাকে, তা মনকে প্রফুল্ল করে।
স্নেহ : বাবা মায়ের স্নেহের সাথে কোনো কিছুর তুলনা চলে না।
স্মরণ: মাস্টারমশায়ের প্রতিটি সদুপদেশ সবসময় স্মরণে রাখা উচিত।
হাতছানি : সহজ পথে সাফল্য অর্জনের হাতছানিকে উপেক্ষা করে সৎ পথে পরিশ্রম করে যেতে হবে।
শব্দদ্বৈত দিয়ে বাক্য রচনা:
বাগধারা দিয়ে বাক্য রচনা
মারি তো গণ্ডার লুটি তো ভাণ্ডার
এক হাতে তালি বাজে না
গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না
নুন আনতে পান্তা ফুরোয়
যার কর্ম তার সাজে অন্য লোকের লাঠি বাজে
কাঁচা ও বসা শব্দদুটিকে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে বাক্য রচনা করো
বাক্য রচনা PDF ডাউনলোড করুন।
আরও পড়ুন
ছোটো ও বড়োদের জন্য ব্যাকরণের কোন বই কিনবো?
This post contains affiliate links and if you make a purchase through the links a small amount of commission may be entitled to me.