Ananyabangla.com

ব্যঞ্জনধ্বনির বর্গীকরণ | উচ্চারণ স্থান অনুসারে ব্যঞ্জনের শ্রেণিবিভাগ

ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ কী ভাবে হয়

 উৎপত্তিগত দিক দিয়ে স্বরধ্বনি‌র সঙ্গে ব‍্যঞ্জনধ্বনির একটি মূলগত পার্থক্য রয়েছে। এই আলোচনায় আমরা সেই মৌলিক পর্থক‍্যটিতেই আলোকপাত করতে চেষ্টা করব। ব্যঞ্জনধ্বনির সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায়: যে ধ্বনিকে উচ্চারণ করার জন্য শ্বাসবায়ুকে বাগ্‌যন্ত্রের কোথাও না কোথাও বাধা দিতে হয়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।

এই প্রসঙ্গে প্রথমেই বলি, স্বর এবং ব‍্যঞ্জন, উভয় ধ্বনির উচ্চারণ সম্ভব হয় নিঃশ্বাস-বায়ুর প্রবাহের ফলে। কিন্তু স্বরধ্বনি উচ্চারণ করার সময় সেই বায়ুকে বাগযন্ত্রের কোথাও বাধা দিতে হয় না।


অপর দিকে ব‍্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারণ করার জন্য শ্বাসবায়ুকে অবশ‍্য‍ই বাধা দিতে হবে। শ্বাসবায়ু সেই বাধা অতিক্রম করে প্রবাহিত হবার সময়‌ই ব‍্যঞ্জন ধ্বনি উচ্চারিত হয়। অর্থাৎ, ব‍্যঞ্জন হল বাধাজাত ধ্বনি। বাধাই ব‍্যঞ্জনের জন্মের কারণ। 

এই বাধার প্রকৃতি ও স্থান ভিন্ন ভিন্ন হয়। বাধা দেওয়ার অঙ্গ‌ও আছে একাধিক।

ব‍্যঞ্জনধ্বনির শ্রেণিবিভাগ করার সময় আমরা দেখতে পাবো, কোথায় এবং কী পরিমাণ বাধা দেওয়ার ফলে ব‍্যঞ্জন-ধ্বনিটি সৃষ্টি হয়েছে, তার উপর ব‍্যঞ্জনের শ্রেণিকরণ অনেকটাই নির্ভর করে। অর্থাৎ বাধার স্থান ও বাধার মাত্রা—এই দুটি বিষয় ব‍্যঞ্জনের শ্রেণিবিভাগ করার ক্ষেত্রে অত‍্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়।

উচ্চারণ স্থান অনুসারে ব‍্যঞ্জনের শ্রেণিবিভাগ:

বাংলার অধিকাংশ ব্যঞ্জন উচ্চারিত হয় মুখবিবরে। অর্থাৎ বাংলা ব‍্যঞ্জন‌গুলি উচ্চারণ করার সময় শ্বাসবায়ু মুখবিবরের কোথাও না কোথাও বাধা পায়। শ্বাসবায়ু এই বাধা অতিক্রম করে প্রবাহিত হ‌ওয়ার সময় ব‍্যঞ্জন‌গুলি উচ্চারিত হয়। 
শ্বাসবায়ুকে বাধা দেওয়ার কাজটি করে মূলত দুটি অঙ্গ–জিহ্বা ও নিচের ঠোঁট (বা অধর)। শ্ববাসবায়ুকে বাধা  দেওয়ার জন‍্য জিহ্বা বা নিচের ঠোঁট উপরে উঠে কোনো একটি স্থানকে স্পর্শ করে অথবা কাছাকাছি যায়। জিহ্বা ও নিচের ঠোঁট‌কে এই কারণে ‘উচ্চারক অঙ্গ’ বলে এবং উচ্চারক অঙ্গ যে স্থানকে স্পর্শ করে অথবা যে স্থানের কাছাকাছি যায় সেই স্থানকে বলে উচ্চারণ স্থান। আমরা এখন বাগযন্ত্রের প্রধান উচ্চারণ স্থানগুলো চিনে নেব এবং এক‌ই সঙ্গে এইসব স্থানে উচ্চারিত ব‍্যঞ্জন‌গুলি জেনে নেব।


কণ্ঠ–কণ্ঠ‍্য ব‍্যঞ্জন

কণ্ঠ হল আমাদের মুখবিবরের সবচেয়ে ভিতরের দিকের উপরের অংশ। অর্থাৎ মুখের যেটা ছাদ তার একেবারে পিছন দিকটা‌কে কণ্ঠ বলে। এখানে কোনো ধ্বনি উচ্চারণ করার জন‍্য জিহ্বার পিছন দিকটা এখানে স্পর্শ করে বা কাছাকাছি যায়(যদিও বাংলায় এই স্থানে যত ব‍্যঞ্জন উচ্চারিত হয় তার সবগুলির ক্ষেত্রে‌ই স্পর্শ ঘটে)। এই স্থানে উচ্চারিত ব‍্যঞ্জন‌গুলিকে বলে কণ্ঠ‍্য ব‍্যঞ্জন। বাংলায় ক,খ,গ,ঘ,ঙ–এই ব‍্যঞ্জন‌গুলি কণ্ঠ‍্য ব‍্যঞ্জন।

তালু–তালব‍্য ব‍্যঞ্জন

তালু হল মুখগহ্বরের উপরের সামনের অংশটি। দাঁতের গোড়ায় যে উঁচু মত অংশটা আছে, তার থেকে একটু পিছিয়ে গেলে যে অপেক্ষা‌কৃত নিচু অংশটা পাবো সেটাই তালু। জিভ দিয়ে এই ব‍্যাপারগুলো বুঝে নিতে হবে। এছাড়া উদাহরণে‌র ধ্বনিগুলো উচ্চারণ করার সময় স্পর্শ‌টা কোথায় হচ্ছে সেটা দেখেও স্থানগুলো চিনে নেওয়া যায়। যাই হোক, তালুতে কোনো ব‍্যঞ্জনকে উচ্চারণ করার জন‍্য জিহ্বা‌র সামনের দিকের উপরের অংশ তালুতে স্পর্শ করে বা কাছাকাছি যায়। এখানে উচ্চারিত ব‍্যঞ্জন‌গুলি‌কে বলে তালব‍্য ব‍্যঞ্জন। 
বাংলায় চ,ছ,জ,ঝ,ঞ,ল,শ–এইগুলি তালব‍্য ব‍্যঞ্জনের উদাহরণ।

মূর্ধা–মূর্ধণ‍্য ব‍্যঞ্জন

মূর্ধা হল তালুর সবচেয়ে উঁচু অংশ। এটি তালুর পেছনের অংশ এবং কণ্ঠের সামনের অংশ। এখানে স্পর্শ করার জন‍্য জিহ্বার ডগার অংশটি ব‍্যবহার করতে হয়। এখানে স্পর্শ করার জন‍্য জিহ্বার ডগা উল্টে নিয়ে জিহ্বা‌র তলার অংশটা দিয়ে স্পর্শ করতে হয়। মূর্ধায় উচ্চারিত ব‍্যঞ্জন‌গুলিকে মূর্ধণ‍্য ব‍্যঞ্জন বলে। বাংলায় মূর্ধণ‍্য ব‍্যঞ্জন‌গুলি হল, ট,ঠ,ড,ঢ,ণ(এর নাম ‘মূর্ধণ‍্য-ণ; শুধু ‘মূর্ধণ‍্য’ বলা উচিত নয়),ড়,ঢ়,ষ।

দন্ত–দন্ত‍্য ব‍্যঞ্জন

দন্ত মানে দাঁত। এখানে ধ্বনি উচ্চারণ করার জন‍্য জিভের ডগা দাঁতে স্পর্শ করে । তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রকৃত স্পর্শ দাঁতের গোড়ায় বা দন্তমূলে হয়ে থাকে। ব‍্যক্তিগত অভ‍্যাস‌ও এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব‍্যাপার। মোট কথা, দন্ত বা দন্তমূল, দুই জায়গাতেই এক‌ই ব‍্যঞ্জনের উচ্চারণ সম্ভব। দন্তে উচ্চারিত ধ্বনিগুলি দন্ত‍্য ধ্বনি নামে পরিচিত। বাংলা দন্ত‍্য ব‍্যঞ্জন‌গুলি হল, ত,থ,দ,ধ,ন।

ওষ্ঠ–ঔষ্ঠ‍্য ব‍্যঞ্জন

ওষ্ঠ বলতে বোঝায় উপরের ঠোঁট। নিচের ঠোঁটের পোষাকি নাম অধর। অধর ওষ্ঠকে স্পর্শ করে শ্বাসবায়ুকে বাধা দিয়ে যে ব‍্যঞ্জন‌গুলি সৃষ্টি করে, তাদের ঔষ্ঠ‍্য ব‍্যঞ্জন বলে। তবে অনেক সময় নিচের ঠোঁট দাঁতকেও স্পর্শ করে বা কাছে যায়। তবে এরকম ঘটনা কোনো বাংলা ব‍্যঞ্জনের সঠিক উচ্চারণের ক্ষেত্রে ঘটে না। বাংলা ঔষ্ঠ‍্য ব‍্যঞ্জন‌গুলি হল, প,ফ,ব,ভ,ম এবং অন্তঃস্থ ব।

আর এক ধরনের ব্যঞ্জন আছে, যাদের বলে ‘দন্তৌষ্ঠ্য’ ব্যঞ্জন। নিচের ঠোঁট উপরের দাঁতকে স্পর্শ করে শ্বাসবায়ুর গতি রুদ্ধ করলে এমন ধ্বনি সৃষ্টি হয়। বাংলায় এমন ব্যঞ্জন নেই। ইংরেজি f এই ধরনের ব্যঞ্জনের উদাহরণ।

এছাড়া আর একটি স্থানে ব‍্যঞ্জনের উচ্চারণ সম্ভব, সেটি হল কণ্ঠনালী। বাংলায় কণ্ঠনালীয় ব‍্যঞ্জন একটিই— সেটি হল , হ।
আর‌ও জানুন

BLOG AD HERE

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *