সংখ্যাবাচক ও পূরণবাচক শব্দের পার্থক্য
বিশেষণ অধ্যায়ে সংখ্যাবাচক ও পূরণবাচক শব্দ নিয়ে আমরা সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি। কিন্তু এই দুই শব্দ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে দেখেছি। তাই এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার প্রয়োজন অনুভব করলাম। প্রথমেই বলে রাখা দরকার, এই দুটি শব্দ নিয়ে বিভ্রান্তির দুটি বড়ো কারণ রয়েছে। আর সেই কারণ দুটি হলো, এরা উভয়েই বিশেষণ এবং এই দুই শব্দেরই জন্ম হয়েছে সংখ্যা থেকে। তাই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য প্রথমেই আমরা বুঝে নেবো সংখ্যাবাচক ও পূরণবাচক শব্দ কাকে বলে এবং এদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়। তার পর তুলনামূলক উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে নেবো।
সংখ্যাবাচক শব্দ – কাকে বলে
যে বিশেষণ পদগুলি মূলত বিশেষ্য পদের সংখ্যা বোঝায়, তাদের সংখ্যাবাচক শব্দ বলে।
সংখ্যাবাচক শব্দের উদাহরণ: পাঁচটি কলম, একশো লোক, সাড়ে তিনখানা আপেল, আধখানা চাঁদ, বেলা সওয়া দশটা, প্রভৃতি।
সংখ্যা শব্দের শ্রেণিবিভাগ
১: গণনা সংখ্যাশব্দ – কাকে বলে?
যে সংখ্যাশব্দগুলি গণনার কাজে ব্যবহার করা হয়, অর্থাৎ পূর্ণ সংখ্যার মান প্রকাশ করে, তাদের বলা হয় গণনা সংখ্যাশব্দ। যেমন: দশ, পাঁচ, একশো, হাজার ইত্যাদি।
গণনা সংখ্যাশব্দের উদাহরণ
বাংলায় বর্তমানে সুপ্রচলিত গণনা সংখ্যাশব্দ ১০৪টি। শূন্য থেকে নিরানব্বই পর্যন্ত ১০০টি এবং শত, হাজার, লক্ষ, কোটি। এ ছাড়া বর্তমানে অল্প প্রচলিত বা অপ্রচলিত গণনা সংখ্যাশব্দ কিছু আছে। যেমন: কাহন, পণ, গণ্ডা, অযুত, নিযুত, অর্বুদ, অক্ষৌহিণী ইত্যাদি।
২: ভগ্নাংশ সংখ্যাশব্দ – কাকে বলে
যে সংখ্যাশব্দগুলি ভগ্নাংশ বা পূর্ণসংখ্যা ও ভগ্নাংশের মিশ্রিত মান বোঝায়, তাদের বলে ভগ্নাংশ সংখ্যাশব্দ।
ভগ্নাংশ সংখ্যাশব্দের উদাহরণ
সিকি, আধুলি, দেড়, আড়াই, সাড়ে তিন, সাড়ে চার, পৌনে পাঁচ, সওয়া সাত ইত্যাদি শব্দগুলি ভগ্নাংশ সংখ্যাশব্দের উদাহরণ।
৩: গুণিতক সংখ্যাশব্দ – কাকে বলে
যে সংখ্যাশব্দগুলি কোনো সংখ্যার গুণফলের মান প্রকাশ করে, তাদের বলে গুণিতক সংখ্যাশব্দ।
গুণিতক সংখ্যাশব্দের উদাহরণ
দ্বিগুণ, তিনগুণ, দশগুণ, চারডবল ইত্যাদি হল গুণিতক সংখ্যাশব্দের উদাহরণ।
৪: অনির্দেশক সংখ্যাশব্দ – কাকে বলে
যে সংখ্যাশব্দগুলি কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ না করে মোটামুটি একটি সংখ্যা প্রকাশ করে, তাদের অনির্দেশক সংখ্যাশব্দ বলে।
অনির্দেশক সংখ্যাশব্দের উদাহরণ ও গঠনের পদ্ধতি
অনির্দেশক সংখ্যাশব্দ গঠন করা হয় বিভিন্ন উপায়ে। যেমন
- সংখ্যাশব্দের আগে ‘খান’ যোগে: খান পাঁচেক, খান দশ, খান বারো।
- সংখ্যাশব্দের আগে ‘গোটা’ যোগে: গোটা তিন, গোটা চার, গোটা দশ, গোটা ছয়েক, ইত্যাদি।
- দুটি সংখ্যাশব্দ যোগে: দশ-বারো, পঁচিশ-ত্রিশ, পঞ্চাশ-ষাট ইত্যাদি।
- বিশেষ্য পদটিকে এগিয়ে দিয়ে: যেমন: পাঁচজন> জন পাঁচ, দশজন>জন দশ, দশ দিন > দিন দশ, দশ হাত > হাত দশ, দশ ফুট > ফুট দশেক।
পূরণবাচক শব্দ – কাকে বলে
যে বিশেষণগুলি কোনো বিশেষ্যের সংখ্যাগত ক্রমিক অবস্থান প্রকাশ করে, তাদের বলে পূরণবাচক শব্দ বা ক্রমবাচক শব্দ।
পূরণবাচক শব্দের উদাহরণ: পয়লা বৈশাখ, প্রথম দিন, চতুর্থ ছাত্র, দশম শ্রেণি, একাদশ অধ্যায়, একাদশী তিথি, ঊনবিংশ শতাব্দী, একুশে আশ্বিন, তিরিশে ভাদ্র, দশের ঘর, বারোর নামতা ইত্যাদি।
পূরণবাচক শব্দ কোনো বিশেষ্যের সংখ্যা বোঝায় না, ক্রমিক অবস্থান বোঝায়। যেমন: ‘ক্লাসের পঞ্চম ছাত্র’ বললে পাঁচটি ছাত্র না বুঝিয়ে যে ছেলেটির পাঁচ রোল নম্বর, তাকে বোঝায়। আর ‘দশম ছাত্র’ বললে দশ রোলের ছেলেটিকে বোঝায়। সুতরাং কোনও ক্ষেত্রেই একটির বেশি ছেলেকে বোঝাচ্ছে না। এটি পূরণবাচক শব্দ চেনার একটি বিশেষ উপায়। পূরণ বাচক শব্দ কখনও একের বেশি সংখ্যা প্রকাশ করে না। যদি বলা হয় ২৫শে বৈশাখ, তাহলে বৈশাখ মাসের একটিই দিনকে বোঝায়, যদি বলা হয় একাদশী তিথি, তাহলে একটিই তিথিকে বোঝায়, এগারোটি তিথি নয়। সংখ্যা ও পূরণবাচক শব্দকে আলাদা করার এটিই সবচেয়ে সহজ উপায়।
সংখ্যাবাচক ও পূরণবাচক শব্দের তুলনামূলক তালিকা
সংখ্যাশব্দ পূরণবাচক শব্দ
এক প্রথম/পয়লা/একের
দুই দ্বিতীয়/দোসরা/দুইয়ের
তিন তৃতীয়/তেসরা/তিনের
চার চতুর্থ/চৌঠা/চারের
পাঁচ পঞ্চম/পাঁচই/পাঁচের
ছয় ষষ্ঠ/ছয়ই/ছয়ের
সাত সপ্তম/সাতই/সাতের
আট অষ্টম/আটই/আটের
নয় নবম/নয়ই/নয়ের
দশ দশম/দশই/দশের
এগারো একাদশ/এগারোই/এগারোর/একাদশী
বারো দ্বাদশ/দ্বাদশী/বারোই/বারোর
তেরো ত্রয়োদশ/ত্রয়োদশী/তেরোই/তেরোর
চোদ্দো চতুর্দশ/চতুর্দশী/চোদ্দোই/চোদ্দোর
পনেরো পঞ্চদশ/পনেরোই/পনেরোর
ষোলো ষোড়শ/ষোলোই/ষোলোর
সতেরো সপ্তদশ/সতেরোই/সতেরোর
আঠেরো অষ্টাদশ/আঠেরোই/আঠেরোর
উনিশ ঊনবিংশ/উনিশে/উনিশের
কুড়ি বিংশ/বিশে/কুড়ির
এছাড়া ১০এর পরবর্তী যে কোনো সংখ্যার সাথে ‘তম’ যোগে পূরণবাচক শব্দ গঠিত হয়। যেমন: এগারোতম, পঁচিশতম, একশোতম, একশো-দুইতম ইত্যাদি। সংখ্যার পর ‘তম’ থাকলে সেগুলি পূরণবাচক শব্দ হবে। মনে রাখতে হবে, এক থেকে দশ পর্যন্ত শব্দগুলিতে ‘তম’ যোগ করা রীতিবিরুদ্ধ।
পরিশেষে সংখ্যাবাচক ও পূরণবাচক শব্দের পার্থক্য হিসেবে আমরা বলতে পারি:
১: সংখ্যাশব্দ বিশেষ্য বা সর্বনামের সংখ্যা প্রকাশ করে। পূরণবাচক শব্দ শুধুমাত্র সংখ্যাগত ক্রমিক অবস্থান প্রকাশ করে।
২: সংখ্যাশব্দের সাংখ্য মান সংখ্যাটির সমান হয়। পূরণবাচ শব্দের সাংখ্যমান সব সময় ১ হয়। অর্থাৎ ‘দশম ছাত্র’ বললে দশটি নয়, একটিই ছাত্রকে বোঝায়।
৩: সংখ্যাশব্দগুলি মূল শব্দ। পূরণবাচক শব্দগুলি সংখ্যাবাচক শব্দ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।
আমাকে YouTube-এ সাবস্ক্রাইব করার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন
2 thoughts on “সংখ্যা ও পূরণবাচক বিশেষণ | সংখ্যাবাচক শব্দ ও পূরণবাচক শব্দ | Sonkha bachok o puran bachak biseshon”
দহন
Pingback: উহ্য কর্ম কাকে বলে - Ananyabangla.com