সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ কাকে বলে
ভাষায় ব্যবহৃত যে শব্দগুলি একই বা প্রায় একই অর্থ প্রকাশ করে, তাদের সাধারণ ভাবে সমার্থক শব্দ বলা হয়।
মনে রাখতে হবে, সমার্থক শব্দগুলির অর্থ মোটামুটি এক হলেও এরা প্রত্যেকে আলাদা শব্দ এবং অনেক সময় এদের মধ্যে অর্থের সূক্ষ্ম পার্থক্য দেখা যায়। যেমন: সংগ্রাম ও যুদ্ধ সমার্থক শব্দ হলেও সংগ্রাম শব্দে কিছুটা মহত্ত্ব প্রকাশ পায়, যুদ্ধ শব্দটি সে তুলনায় নেতিবাচক।
সমার্থক শব্দ শিক্ষার গুরুত্ব
ভাষা শিক্ষায় সমার্থক শব্দের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা যাকে সাধারণ ভাবে ‘ওয়ার্ড স্টক’ বা শব্দভাণ্ডারের শক্তি বলি, তা বৃদ্ধি পায় সমার্থক শব্দের চর্চার মাধ্যমে।
ভালো রচনা লেখার জন্য বিভিন্ন শব্দের সমার্থক শব্দ জানা ভালো। সমার্থক শব্দ জানলে একই শব্দকে বার বার ব্যবহার করতে হয় না।
সমার্থক শব্দগুলি মোটামুটি একই অর্থ বহন করলেও অনেক সময় এদের মধ্যে অর্থের সূক্ষ্ম পার্থক্য থাকে। সমার্থক শব্দের চর্চা করলে কোন ক্ষেত্রে কোন সমার্থক শব্দটি ব্যবহার করা উচিত হবে, সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
সমার্থক শব্দের তালিকা (বর্ণানুক্রমিক)
- অনন্য – অদ্বিতীয়, একমেবদ্বিতীয়ম, অতুলনীয়
- অন্ধকার – আঁধার, তমসা, তমিস্রা, তিমির, নভাক
- আকাশ – গগন, খ, অম্বর, অন্তরীক্ষ
- আগুন – অগ্নি, অনল, বহ্নি, হুতাশন, পাবক
- আনন্দ – হর্ষ, আহ্লাদ, স্ফূর্তি, পুলক
- আবিষ্কার – উদ্ভাবন, আবিষ্করণ, আবিষ্ক্রিয়া
- আরম্ভ – শুরু, সূচনা, সূত্রপাত, ভূমিকা, পত্তন
- ইঁদুর — মূষিক, মূষা, চুহা
- ইচ্ছা – বাঞ্ছা, অভিলাষ, অভীষ্ট, আকাঙ্ক্ষা, মনস্কামনা
- ঈশ্বর – জগদীশ, ভগবান, জগৎপিতা, বিধাতা, জগন্নাথ
- কচ্ছপ – কাছিম, কূর্ম, গুপ্তপাদ
- কবিতা – পদ্য, পদ, গাথা, দোহা
- কাঠ – কাষ্ঠ, দারু, লকড়ি
- কান – কর্ণ, শ্রবণেন্দ্রিয়
- কান্না – ক্রন্দন, রোদন, অশ্রুপাত, অশ্রুবর্ষণ
- কাপড় – বস্ত্র, বসন, আচ্ছাদন, বাস, পরিধেয়
- কালি – কালিকা, শ্যামা, চণ্ডী, তারা, করালী, চামুণ্ডা
- কুমির – কুম্ভীর, পিঙ্গতক্ষু, শঙ্খমুখ, নক্র
- খাওয়া – ভোজন, অশন, প্রাশন, ভক্ষণ
- খাঁটি – বিশুদ্ধ, নির্ভেজাল, অবিমিশ্র
- গঙ্গা – জাহ্নবী, ভাগীরথী
- গর্ব – অহংকার, দর্প, গরব, অহমিকা, দম্ভ
- গাছ – তরু, পাদপ, বৃক্ষ, শাখী
- গাড়ি – যান, শকট, বাহন
- গ্রন্থাগার – পুস্তকাগার, পাঠাগার, গ্রন্থালয়, পুঁথিশালা
- গ্রাম – পল্লী, গাঁ, গাঁও
- গ্রীষ্ম – নিদাঘ, নিদাঘকাল, দহনদিন
- ঘর – আবাস, গৃহ, নিবাস, ভবন
- ঘুম – নিদ্রা, সুপ্তি, প্রসুপ্তি, সাধিকা
- ঘোড়া – অশ্ব, ঘোটক, তুরগ, বাজী, হয়, কীকট
- চাঁদ – নিশাকর, শশধর, চন্দ্র, সুধাকর
- চিহ্ন – অভিজ্ঞান, উপসর্গ, লক্ষণ, লিঙ্গ
- চুল – কেশ, অলক, কুন্তল, শিরোজ, চিকুর
- চোখ – নয়ন, আঁখি, দর্শনেন্দ্রিয়
- ছেলে – পুত্র, অপত্য , তনয়, সূত
- জঙ্গল – অরণ্য, বনভূমি, বনানী, কানন
- জন্ম – জনম, আবির্ভাব, সূতক, উৎপত্তি
- জন্মভূমি – মাতৃভূমি, স্বদেশ, নিজদেশ, স্বভূমি
- জল – বারি, নীর, উদক, পানি
- জানালা – বাতায়ন, গবাক্ষ
- জুতা – পাদুকা, উপানৎ, পাদত্রাণ
- জোনাকি – খদ্যোত, জোনাক, জোনাই, জ্যোতিরিঙ্গণ, কীটমণি
- জ্যোৎস্না – শশীকিরণ, চন্দ্রকিরণ, শশীকর, কৌমুদী
- ঝড় – ঝঞ্ঝা, তুফান, ঝটিকা, বাত্যা
- দক্ষ – পটু, পারদর্শী, নিপুণ
- দরজা – দ্বার, প্রবেশিকা, দুয়ার, দোর
- দিন – দিবস, অহ, অহ্ন, বার, রোজ
- দুপুর – মধ্যাহ্ন, দ্বিপ্রহর, মধ্যদিন
- দুর্গা – পার্বতী, ভবতারিণী, শারদা, ত্রিনয়নী, উমা, শৈলজা, হৈমবতী, গিরিজা, রুদ্রাণী, আদ্যাশক্তি
- দোকান – আপণ, বিপণী
- ধোঁয়া – অগ্নিবাহু, ধূম, ধূপ, ভম্ব
- নখ – নখর, পুনর্ভব, পুনর্নব
- নদী – তটিনী, প্রবাহিনী, স্রোতস্বতী
- নাক – নাসা, নাসিকা, ঘ্রাণেন্দ্রিয়
- নারী – স্ত্রীলোক, বামা, রমণী, ললনা, অঙ্গনা
- পতাকা – ধ্বজ, ধ্বজা, ঝাণ্ডা, কেতন
- পদ্ম – কমল, শতদল, নলিনী
- পর্বত – অচল, গিরি, অদ্রি, শৈল, নগ
- পশু – মৃগ, জন্তু, জানোয়ার
- পাখি – বিহঙ্গ, বিহগ, খেচর, পক্ষী, খগ
- পুকুর – পুষ্করিণী, জলাশয়, সরিৎ
- পূজা – উপাসনা, আরাধনা, বন্দনা, অর্চনা, পূজন
- পৃথিবী – ধরা, ধরিত্রী, ধরণী, ভূ
- পোশাক – বস্ত্র, আবরণ, আচ্ছাদন
- প্রয়োজন – আবশ্যক, দরকার, চাহিদা
- প্লুত – প্লাবিত, স্নাত, নিমগ্ন, ব্যাপ্ত
- ফুল – পুষ্প, কুসুম
- ফেনা – ফেন, ফেনক, জলহাস, ডিণ্ডির
- বই – গ্রন্থ, পুস্তক, কেতাব, বহি
- বন – অরণ্য, বনানী, কানন, জঙ্গল
- বন্ধু – মিত্র, সখা, মিতা, সুহৃদ্ , ইয়ার-দোস্ত
- বর্ষা – বর্ষণকাল, প্রাবৃট, প্রাবৃষ, ঘনাগম
- বসন্ত – ঋতুরাজ, মধুকাল, কুসুমাগম, ঋতুপতি
- বাঘ – শার্দুল, শ্বাপদ, ব্যাঘ্র
- বাড়ি – গৃহ, ঘর, বাটী, বাটিকা, মকান, বাসস্থান
- বাতাস – বায়ু, পবন, সমীর, বায়, মরুৎ, হাওয়া
- বাবা – পিতা, জনক, জন্মদাতা
- বিদেশ – ভিনদেশ, বিভুঁই, দেশান্তর, অন্যদেশ
- বিদ্যুৎ – সৌদামিনী, ক্ষণপ্রভা, দামিনী, তড়িৎ
- বিবাহ – বিয়ে, পরিণয়, উদ্বাহ, ঊঢ়ি
- বিশাল – বিপুল, বৃহৎ, অতিকায়
- বিশ্রাম – বিরাম, বিরতি
- বিশ্বাস – প্রত্যয়, প্রতীতি, নিশ্চিতি
- বিষ – হলাহল, গরল, জহর, কালকূট, আহেয়
- বুদ্ধি – ধীশক্তি, ধী, মেধা, মতি
- বোন – ভগিনী, ভগ্নী, শ্বসা, সহোদরা
- ব্যবসায়ী – বণিক, শ্রেষ্ঠী, পুঁজিপতি
- ব্রাহ্মণ – দ্বিজ, বিপ্র, বামুন
- ভয় – শঙ্কা, ত্রাস, তরাস, ডর, আতঙ্ক, ভীতি
- ভাই – ভ্রাতা, সহোদর, অনুজ/অগ্রজ
- ভাত – অন্ন, ওদন, স্বধা
- ভাবনা – চিন্তা, চিন্তন, মনন
- ভীষণ – ভয়ঙ্কর, ভয়াবহ, ভয়ানক, ভয়াল
- ভুল – ভ্রম, ভ্রান্তি, প্রমাদ, গলদ
- ভ্রমর – ভোমরা, অলি, দ্বিরেফ, ভৃঙ্গ
- মন – চিত্ত, অন্তর, হৃদয়, হৃদি, মর্ম, হিয়া
- মন্দির – দেবালয়, দেবগৃহ, দেউল, দেবায়তন, দেবস্থান
- মরুভূমি – মরু, মরুপ্রান্তর, ইরণ, বিরাবান, দশেরক
- মা – মাতা, জননী, জন্মদাত্রী
- মাকড়সা – ঊর্ণনাভ, লূতা, জালিক, জালকীট
- মাছ – মীন, কণ্টকী, শল্কী
- মাটি – মৃত্তিকা, মৃৎ, জমি
- মুখ – বদন, আনন, চেহারা
- মৃত্যু – মরণ, প্রয়াণ, দেহান্তর, পরলোকগমন
- মেঘ – অভ্র, ঘন, জলদ, নীরদ, বারিদ
- মৌমাছি – মধুপ, মধুকর, মধুমক্ষিকা, মধুকৃৎ
- যুদ্ধ – সমর, রণ, আহব, সংগ্রাম
- রাগ – ক্রোধ, রোষ, কোপ, অমর্ষ
- রাজা – নৃপতি, ভূপতি, নরপতি, নৃপ
- রাত্রি – নিশা, রজনী, যামিনী, বিভাবরী
- রাস্তা – পথ, পন্থা, সরণী, মার্গ, বাট
- রোগ – ব্যাধি, ব্যারাম, পীড়া, ব্যামো
- রোদ – রৌদ্র, ধুপ, সূর্যকিরণ, রবিকিরণ, রবিকর
- লজ্জা – লাজ, হায়া, শরম, ব্রীড়া
- শক্তি – বল, ক্ষমতা, জোর
- শরৎ – কৌমুদ, ঘনান্ত, বর্ষাবসান
- শরীর – দেহ, কায়া, বপু, কলেবর, তনু
- শহর – নগর, পুরী, নগরী
- শিক্ষক – গুরু, শিক্ষাদাতা, আচার্য, অধ্যাপক
- শিশির – নীহার, শবনম, রাত্রিজল, হিমিকা
- শুষ্ক – অনার্দ্র, জলশূন্য, নীরস, বিশুষ্ক
- সকাল – প্রভাত, নিশান্ত, প্রাতঃ, বিহান, পূর্বাহ্ন
- সন্ধ্যা – সাঁঝ, প্রদোষ, সায়াহ্ন, সায়ংকাল
- সময় – কাল, লগ্ন, অক্ত, ক্ষণ
- সমুদ্র – অর্ণব, জলধি, পারাবার, রত্নাকর
- সম্পদ – বিত্ত, ধন, ঐশ্বর্য
- সাপ – ভুজঙ্গ, উরগ, আশীবিষ, ফণী, নাগ, সর্প
- সিঁড়ি – সোপান, পইঠা
- সিংহ – মৃগেন্দ্র, কেশরী, হর্যক্ষ, রক্তজিহ্ব, হরি
- সূর্য – তপন, রবি, অরুণ, ভাস্কর, দিবাকর
- সৌন্দর্য – শোভা, বাহার, চারুতা, শ্রী
- স্ত্রী – পত্নী, দারা, সহধর্মিণী
- স্নান – চান, নাওয়া, গোসল, অভিষেক
- স্বর্গ – দেবলোক, দেবপুরী, সুরলোক, সুরপুর, দ্যুলোক
- স্বার্থপর – আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপরায়ণ, আত্মসর্বস্ব, স্বার্থান্বেষী
- হত্যা – বধ, হনন, খুন, সংহার
- হাতি – হস্তী, মাতঙ্গ, গজ, ইরম্মদ, দন্তাবল
অনুশীলনী:
প্রতিশব্দ লেখ:
সিঁড়ি, বাঘ, গাছ, আকাশ, নদী, মাটি, সমুদ্র, পৃথিবী, আকাশ, গঙ্গা, জল, পশু।
আরও পড়ুন
This post contains affiliate link. If you make a purchase through those links a small amount of commission may be entitled to me without costing anything extra to you.
3 thoughts on “১২৫+ নির্ভুল সমার্থক শব্দ | সমার্থক শব্দের নির্ভরযোগ্য তালিকা | Samarthok shabdo”
ধন্যবাদ স্যার।
Pingback: অনুক্ত কর্তা কাকে বলে - Ananyabangla.com
Pingback: দুটি সমবর্ণের একটির পরিবর্তনকে কী বলে - Ananyabangla.com