Ananyabangla.com

উচ্চারণ-প্রকৃতি অনুসারে ব‍্যঞ্জনের শ্রেণি

বাংলা ব্যঞ্জনের উচ্চারণ

উচ্চারণ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার ব্যঞ্জনধ্বনি

আগের আলোচনায় আমরা উচ্চারণ স্থান অনুসারে ব‍্যঞ্জনের শ্রেণিবিভাগ করেছি। এখন দেখে নেব উচ্চারণ-প্রকৃতি অনুসারে ব্যঞ্জন কত প্রকার হতে পারে। এই আলোচনা শুরু করার আগে আমরা আর একবার একটি পুরাতন কথা স্মরণ করে নেবো—- তা হল, ব‍্যঞ্জন ধ্বনিগুলো সৃষ্টি হয় শ্বাসবায়ুকে তার প্রবাহপথে বাধা দেওয়ার ফলে। এখন এই বাধা যেমন বিভিন্ন স্থানে দেওয়া যায়, তেমনি বাধার মাত্রা‌ও বিভিন্ন হতে পারে। অর্থাৎ এই বাধা হতে পারে পূর্ণ বাধা, আংশিক বাধা অথবা অতি অল্প বাধা।


ADVERTISEMENT


স্পর্শ ব‍্যঞ্জন বা স্পৃষ্ট ব্যঞ্জন


শ্বাসবায়ু‌র প্রবাহপথের বাধা যদি পূর্ণ বাধা হয়, তখন যে ধ্বনিগুলি সৃষ্টি হয়, তাদের বলে স্পর্শ ব‍্যঞ্জন। কারণ পূর্ণ বাধা দিতে হলে একটি অঙ্গকে অপর অঙ্গে(বা স্থানে) স্পর্শ করতে হবে। দুটি অঙ্গের মধ‍্যে ফাঁক থাকলে পূর্ণ বাধা দেওয়া সম্ভব হবে না।

স্পর্শ ব্যঞ্জন কাকে বলে?

 যে ব‍্যঞ্জন‌কে উচ্চারণ করার সময় বাগযন্ত্রের উচ্চারক অঙ্গ উচ্চারণ স্থানকে স্পর্শ ক’রে শ্বাসবায়ুর গতিপথকে সম্পূর্ণ রুদ্ধ করে এবং শ্বাসবায়ু ঐ বাধা ঠেলে সরিয়ে প্রবাহিত হয় তাকে স্পর্শ ব্যঞ্জন বলে।

স্পর্শ ব্যঞ্জন কোনগুলি?

বাংলায় ক্ থেকে ম্ পর্যন্ত ২৫টি ব‍্যঞ্জন স্পর্শ ব‍্যঞ্জনের মধ‍্যে পড়ে। এই ২৫টি ব‍্যঞ্জনকে ৫টি সারিতে রাখা হয়।

ব্যঞ্জনের বর্গ কাকে বলে?

ক থেকে ম পর্যন্ত ২৫টি ব্যঞ্জনকে ৫টি সারিতে একটি বর্গক্ষেত্রের আকারে রাখা হয়েছে। গণিতে ৫×৫ = ৫এর বর্গ। এইভাবে বর্গের আকারে সাজানো আছে বলে এদের বর্গীয় ব্যঞ্জন বলে।

প্রথম সারিতে ক্ থেকে ঙ্ – এরা কণ্ঠ‍্য ব‍্যঞ্জন। কারণ এদের উচ্চারণ করার সময় শ্বাসবায়ু কণ্ঠে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই সারিটি ক-বর্গ নামে পরিচিত।

দ্বিতীয় সারিতে আছে চ্ থেকে ঞ্ । এরা তালুতে উচ্চারিত হয় বলে এদের বলে তালব‍্য ব‍্যঞ্জন। এদের মধ‍্যে প্রথম চারটি–চ,ছ,জ,ঝ একটি বিশেষত্ব আছে। সে বিষয়টি পরে আলোচনা করব। এই সারির আদ‍্য ব‍্যঞ্জন চ-এর নামানুসারে সারিটির নাম চ-বর্গ।

এক‌ই ভাবে,
মূর্ধণ‍্য ব‍্যঞ্জনের সারি ট-বর্গ।
দন্ত‍্য ব‍্যঞ্জনের সারি ত-বর্গ।
ঔষ্ঠ‍্য ব‍্যঞ্জনের সারি প-বর্গ।


ADVERTISEMENT


স্পর্শ ব্যঞ্জনের শ্রেণিবিভাগ: উচ্চারণ অনুযায়ী

উচ্চারণের পদ্ধতি অনুসারে ব্যঞ্জনকে অনেক ভাগে ভাগ করা যায়। নিচে সেগুলি আলোচনা করা হলো

ঘোষ ব্যঞ্জন ও অঘোষ ব‍্যঞ্জন

ঘোষ ধ্বনি

আমরা যখন যে কোনো ধ্বনি উচ্চারণ করি তখন শ্বাসবায়ুকে প্রথমত আমাদের গলায় অবস্থিত স্বরতন্ত্রী নামক দুটি পাতলা পর্দার মধ‍্য দিয়ে প্রবাহিত হতে হয়। এই সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে পর্দা দুটি এমনভাবে কাঁপতে থাকে যে ঐ কম্পনের ফলে একটা গম্ভীর সুর সৃষ্টি হয়। এই বিশেষ সুরকে ধ্বনিতত্ত্বের ভাষায় ‘ঘোষ’ বা ‘নাদ’ বলে।

অঘোষ ব্যঞ্জন

প্রতি বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যঞ্জন‌কে উচ্চারণ করার সময় এই ধরণের কোন‌ও সুর সৃষ্টি হয় না। কারণ পর্দা দুটিতে বিশেষ কম্পন সৃষ্টি হয় না। তাই বলা যায় এদের উচ্চারণের সময় ‘ঘোষ’ তৈরি হয় না। এই জন্য এদের বলে অঘোষ ব‍্যঞ্জন। ক,খ,চ,ছ,ট,ঠ,ত,থ,প,ফ –বর্গের মধ‍্যে এই দশটি অঘোষ ব‍্যঞ্জন।

ঘোষ ব্যঞ্জন

আবার প্রতি বর্গের শেষ তিনটি ব‍্যঞ্জন উচ্চারণ করার সময় স্বরতন্ত্রী দুটি এমনভাবে কাঁপতে থাকে যে, ঘোষ বা নাদ নামক গম্ভীর সুরের সৃষ্টি হয়। তাই এদের বলা হয় ঘোষ বা সঘোষ ব‍্যঞ্জন। ঘোষ ব্যঞ্জনের অপর নাম নাদ ব্যঞ্জন। গ,ঘ,ঙ,জ,ঝ,ঞ,ড,ঢ,ণ,দ,ধ,ন,ব,ভ,ম—বর্গের মধ‍্যে এই ১৫টি ঘোষ ব‍্যঞ্জন।

প্রতিটি বর্গ একান্তে নিঃশব্দ ঘরে উচ্চারণ করে দেখে নিলে ঘোষ-অঘোষের পার্থক্য নিজের কানেই স্পষ্ট ধরা পড়ে । তা ছাড়া ভালো করে অনুধাবন করলে গলায় একটি অতিরিক্ত কম্পন ঘোষ-ব‍্যঞ্জন‌গুলি‌র বেলায় বোঝা যাবে। ঘোষ ধ্বনিগুলি শুনতে অপেক্ষা‌কৃত গম্ভীর।

অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জন ও মহাপ্রাণ ব্যঞ্জন

প্রতিটি ব‍্যঞ্জন উচ্চারণ করতে সমপরিমাণ শ্বাসবায়ু লাগে না। কম-বেশি আছে। যে ব‍্যঞ্জন‌গুলি উচ্চারণ করতে বেশি পরিমাণ শ্বাসবায়ু লাগে, তাদের মহাপ্রাণ(প্রাণ মানে প্রাণবায়ু) এবং যে ব‍্যঞ্জন‌গুলি উচ্চারণ করতে অপেক্ষা‌কৃত কম শ্বাসবায়ু লাগে, তাদের অল্পপ্রাণ ব‍্যঞ্জন বলে।

প্রতি বর্গের প্রথম ও তৃতীয় ব‍্যঞ্জন অল্পপ্রাণ এবং দ্বিতীয় ও চতুর্থ ব‍্যঞ্জন মহাপ্রাণ। অর্থাৎ ক,গ অল্পপ্রাণ এবং খ,ঘ মহাপ্রাণ। এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে, অল্পপ্রাণ ব‍্যঞ্জনের সাথে হ্ যোগ করে দিলে মহাপ্রাণ ব‍্যঞ্জন পাওয়া যায়। (অর্থাৎ, ক্+হ্=খ্ , গ্+হ্=ঘ্ ইত্যাদি। ইংরাজি বানানে খ লিখতে হলে এইজন‍্য‌ই আমরা Kh লিখি। h=হ্)। এই কারণে হ্ ব্যঞ্জনের আর এক নাম মহাপ্রাণতা।

নাসিক‍্য ব‍্যঞ্জন

প্রতি বর্গের পঞ্চম ব‍্যঞ্জন‌কে(ঙ,ঞ,ণ,ন,ম) উচ্চারণ করার সময় গলার কাছে নাসাগহ্বরের মুখটি খুলে যায়। ফলে শ্বাসবায়ুর একটা অংশ নাসাপথে চালিত হয় এবং নাসাপথটি অপেক্ষা‌কৃত সংকীর্ণ হ‌ওয়ার ফলে অনুরণন** সৃষ্টি করে। তাই এই ব‍্যঞ্জন‌গুলিকে নাসিক‍্য ব‍্যঞ্জন বলে। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, বর্গের তৃতীয় ব‍্যঞ্জন ও পঞ্চম ব‍্যঞ্জনের উচ্চারণ-প্রক্রিয়া হুবহু এক–পার্থক্য শুধু একটাই— তৃতীয়টির বেলা নাসাপথ বন্ধ থাকে, পঞ্চম‌টির বেলা খোলা থাকে। এই কারণে আঙুল দিয়ে নাক চেপে ম বলতে গেলে আমরা অনেকটা যেন ব শুনতে পাই।
[আর একটি কথা— ঙ এবং ঞ, এই দুটি ব‍্যঞ্জনকে শব্দের মধ‍্যে আমরা মোটামুটি ঠিক‌ঠাক উচ্চারণ করি কিন্তু এদের একক ভাবে যখন উচ্চারণ করি, তখন উচ্চারণ ভুল করি(অর্থাৎ, উঁয় ও ইঁয়)। এদের প্রকৃত উচ্চারণ এমন নয়। ঙ-এর সঠিক উচ্চারণ অনেকটা ‘অঁঙ্গ্’ এবং ঞ-এর ‘ইঁঞ্জ্’। যদিও এটা ঠিক লিখে বোঝানোর মত ব‍্যাপার নয়।]

[** অনুরণন বিষয়টি পদার্থবিজ্ঞানের বিষয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, শব্দতরঙ্গ যদি সংকীর্ণ পথে যাওয়ার সময় ঐ পথের চারিদিকের দেওয়ালে বার বার ধাক্কা খেতে খেতে যায়, তাহলে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, সেটাই অনুরণন। আমরা অনেকেই ছোটোবেলায় লম্বা নলের এক মুখে একজন কথা বলতাম এবং অপরজন সেটা নলের অন‍্য মুখে শুনতাম। তখন আমরা দেখেছি কণ্ঠস্বর বিকৃত হয়ে যেত। এই ব‍্যাপারটি অনুরণনের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।]

ঘৃষ্ট ব‍্যঞ্জন

চ,ছ,জ,ঝ– এই চারটি ব‍্যঞ্জন স্পর্শ ব‍্যঞ্জন হলেও এদের একটা বিশেষত্ব আছে, আগেই বলেছি। এই চারটি ব‍্যঞ্জন উচ্চারণ করার সময় শ্বাসবায়ুকে প্রথমে পূর্ণ বাধা দেওয়া হলেও অন‍্যান‍্য স্পর্শ ব‍্যঞ্জনের মতো সহসা সেই বাধা সরে যায় না। পূর্ণ বাধা ক্রমশ আংশিক বাধায় পরিণত হয়। তাই মনে হয় শ্বাসবায়ু, জিহ্বা ও তালুর মধ‍্যে একটা ঘর্ষণ-ক্রিয়া ঘটছে। এই কারণে এদের ঘৃষ্ট ব‍্যঞ্জন বলে।


ADVERTISEMENT

উষ্ম ব‍্যঞ্জন

উচ্চারণ-প্রক্রিয়া অনুসারে ব্যঞ্জন ধ্বনির আর একটি শ্রেণি হল উষ্ম ব‍্যঞ্জন। স্পর্শ ব‍্যঞ্জনের ক্ষেত্রে যেমন উচ্চারক অঙ্গ উপরে উঠে উচ্চারণ-স্থানকে স্পর্শ করে, উষ্ম ব‍্যঞ্জনের ক্ষেত্রে তেমনটি হয় না। এক্ষেত্রে উচ্চারক অঙ্গ উপরে তো যায়, কিন্তু উচ্চারণ স্থানকে স্পর্শ করে না— কাছাকাছি গিয়ে শ্বাসবায়ুকে আংশিক বাধা দেয়। অর্থাৎ বায়ুপ্রবাহের পথটাকে সংকীর্ণ করে দেয়। এখন ঐ সংকীর্ণ পথ দিয়ে বায়ু প্রবাহিত হয় এবং তার ফলেই উষ্ম ধ্বনি সৃষ্টি হয়।

উষ্ম ব্যঞ্জন কোনগুলি?

বাংলায় উষ্মধ্বনি ৪টি।
শ,স,ষ, হ।
এর মধ‍্যে প্রথম ৩টি শিস ধ্বনি নামে পরিচিত। কারণ এগুলির উচ্চারণ অনেকটা শিস দেওয়ার মতো। জিহ্বাকে যথাক্রমে তালু, মূর্ধা ও দন্তের কাছে নিয়ে গিয়ে শ,ষ ও স উচ্চারণ করা হয়। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, মান‍্য বাংলার উচ্চারণে শ-এর‌ই একচেটিয়া প্রাধান্য। বাছাই করা কয়েকটি ক্ষেত্রেই(যেমন ত-বর্গের সঙ্গে যুক্তাক্ষরে) স উচ্চারিত হয়। আর ষ বাংলাতে সাধারণত উচ্চারিত হয় না। এর উচ্চারণ খুব কঠিন‌ও।

র‌ইলো বাকি আর একটি উষ্ম ব‍্যঞ্জন–হ। এটি কণ্ঠনালীতে তৈরি হয়। কণ্ঠনালীর পেশী সংকুচিত হয়ে একে তৈরি করে। হ-কে মহাপ্রাণতা বলা হয়, কেন না, অল্পপ্রাণ ব‍্যঞ্জনের সাথে হ যুক্ত হলে সেটি মহাপ্রাণ হয়ে যায়।

অন্তঃস্থ ব‍্যঞ্জন


অন্তঃস্থ ব‍্যঞ্জনের ক্ষেত্রে শ্বাসবায়ু সব ব‍্যঞ্জনের চেয়ে কম বাধা পায়। এক্ষেত্রে বাধা এত‌ই কম যে এদের উচ্চারণ অনেকটা স্বরের মত হয়ে যায়। তবে ব‍্যঞ্জনের বৈশিষ্ট্য থাকে । তাই এদের স্বর ও ব‍্যঞ্জনের মধ‍্যবর্তী ধ্বনি বলা হয়। বাংলা বর্ণমালায় এদের স্থান স্পর্শ ও উষ্ম ব‍্যঞ্জন‌গুলির মাঝে।

অন্তঃস্থ ব্যঞ্জন কোনগুলি?

য(এবং য়), র, ল, ব(দ্বিতীয় ব)– এই চারটি বাংলা অন্তঃস্থ ব‍্যঞ্জন। অন্তঃস্থ য়-কে আলাদা করে গণনা করার দরকার নেই। বর্ণমালার দুটি ব-এর মধ্যে দ্বিতীয় ব-টি অন্তঃস্থ। প্রথমটি স্পর্শ ।

কম্পিত ব্যঞ্জন র

অন্তঃস্থ ব্যঞ্জনগুলির মধ‍্যে র-কে উচ্চারণ করার সময় জিহ্বা কাঁপতে থাকে, তাই র-কে বলে কম্পিত ব্যঞ্জন।

পার্শ্বিক ব্যঞ্জন ল

ল-কে উচ্চারণ করার সময় জিহ্বা সাধারণত তালু বা দন্তমূলে স্পর্শ করে থাকে এবং শ্বাসবায়ু জিহ্বা‌র দুই পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় , তাই একে বলে পার্শ্বিক ব‍্যঞ্জন।

এছাড়া
য় আসলে য-এর রূপভেদ। তবে বাংলায় য-এর প্রকৃত উচ্চারণ একেবারেই হয় না। বাংলা উচ্চারণে য ও জ এক‌ই। বরং য়-এর উচ্চারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সত‍্যিকার অন্তঃস্থ উচ্চারণ।

তরল ব্যঞ্জন কাকে বলে? তরল ব্যঞ্জনকে তরল বলে কেন?

সাধারণ নিয়মে স্বরের উচ্চারণ দীর্ঘায়িত বা প্লুত করা যায়, ব্যঞ্জনের উচ্চারণ দীর্ঘায়িত হয় না। কিন্তু র ও ল ব্যঞ্জনদুটির উচ্চারণকে দীর্ঘায়িত করা যায়। তাই এদের তরল ব্যঞ্জন বলে। এদের তরল বলার কারণ হল এদের এই প্রবাহী উচ্চারণ। তরল পদার্থ যেমন প্রবাহিত হতে পারে, এই দুই ব্যঞ্জনের উচ্চারণ তেমনি প্রবাহিত হতে পারে। 


তাড়িত ব‍্যঞ্জন


ড় এবং ঢ় ব‍্যঞ্জন‌দুটি আসলে ড ও ঢ এর রূপভেদ। শব্দের শেষে ড ও ঢ এর বদলে ড় ও ঢ় উচ্চারিত হয়। এই দুটি(ড় ও ঢ়) ব‍্যঞ্জনের উচ্চারণের সময় জিহ্বাকে শ্বাসবায়ু এক ঝটকায় দূরে সরিয়ে দেয়। তাই এদের তাড়িত ব‍্যঞ্জন বলে।

আশ্রয়স্থানভাগী তথা অযোগবাহ ব‍্যঞ্জন


অনুস্বর ও বিসর্গ ব‍্যঞ্জনদুটি পূর্ববর্তী স্বরের আশ্রয় ছাড়া উচ্চারিত হতে পারে না এবং এদের কখনো শব্দের গোড়ায় ব‍্যবহার করা যায় না। এই কারণে এদের আশ্রয়স্থানভাগী বা অযোগবাহ ব‍্যঞ্জন বলে।


ADVERTISEMENT


## ৎ ও চন্দ্রবিন্দু সম্পর্কে বলি: ৎ আদৌ আলাদা ব‍্যঞ্জন নয়। ৎ মানে ত্(ত-এ হসন্ত)। আর চন্দ্রবিন্দু আসলে আলাদা ব‍্যঞ্জন নয়। একে বলে অনুনাসিকতা। যে কোনো স্বরের সাথে বসে সেই স্বরকে অনুনাসিক করাই এর কাজ।

অর্ধব্যঞ্জন কাকে বলে? অর্ধব্যঞ্জন কোনগুলি?

যে ব্যঞ্জনগুলি অন্য ব্যঞ্জনকে সঙ্গে নিয়ে স্বর ছাড়াই দল গঠন করতে পারে, তাদের অর্ধ ব্যঞ্জন বলে। আমরা জানি দল গঠনের জন্য কমপক্ষে একটি স্বরধ্বনির দরকার হয়। কিন্তু কয়েকটি ব্যঞ্জনধ্বনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে দল গঠনের জন্য আবশ্যক স্বরটির কাজ করে দেয়। বাংলায় এরকম চারটি অর্ধব্যঞ্জন আছে: র্, ল্, ন্, ম্। সংস্কৃতের ণ্ ব্যঞ্জনটিও অর্ধব্যঞ্জন, কিন্তু বাংলায় এই ব্যঞ্জনটির উচ্চারণ একেবারেই হয় না, তাই বাংলা অর্ধব্যঞ্জন হিসেবে ণ্-এর উদাহরণ না দেওয়াই উচিত।

এখন দেখা যাক অর্ধব্যঞ্জনগুলি কী ভাবে স্বর ছাড়া দল গঠন করতে পারে। এখানে বলে রাখি, বাংলা শব্দে এই ধরনের উদাহরণ পাওয়া যাবে না।
Spasm শব্দটির উচ্চারণ হয় ‘স্প্যাজ্‌ম্’ : এখানে একটিই স্বর আছে, অ্যা; কিন্তু দল আছে দুটি : স্প্যা-জ্‌ম্। এই দ্বিতীয় দলটি কোন স্বরের সাহায্যে গঠিত হল? এটি গঠিত হয়েছে অর্ধব্যঞ্জন ম্-এর সাহায্যে।

চ, ছ, জ, ঝ এগুলি স্পর্শ ব্যঞ্জন না ঘৃষ্ট ব্যঞ্জন?

চ, ছ, জ, ঝ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি আছে। এগুলি স্পৃষ্ট না ঘৃষ্ট? একটি কথা মনে রাখতে হবে, ঘৃষ্ট ব্যঞ্জন আলাদা কোনো ভাগ নয়, এটি স্পর্শ বা স্পৃষ্ট ব্যঞ্জনের‌ই একটি ভাগ। ঘৃষ্ট ব্যঞ্জনকে উচ্চারণ করার সময় বাগ্‌যন্ত্রের উচ্চারক অঙ্গ কোথাও না কোথাও স্পর্শ করে এবং শ্বাসবায়ুকে পূর্ণ বাধা দেয়। তারপর ওই বাধা একবারে মুক্ত হয় না, আংশিক মুক্ত হয়। ফলে শ্বাসবায়ু চাপের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই কারণেই এদের ঘৃষ্ট বলে। সুতরাং এই চারটি ব্যঞ্জনকে এক‌ই সঙ্গে স্পৃষ্ট ও ঘৃষ্ট ব্যঞ্জন বলা যাবে

আর‌ও পড়ুন
[সব পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করে সূচিপত্রে যান]


ব‍্যঞ্জন অনুশীলনী 


ADVERTISEMENT

১: উষ্ম ব‍্যঞ্জন কাকে বলে? বাংলায় ক’টি উষ্ম ব‍্যঞ্জন আছে?
২: য্,র্,ল্,ব্ এই চারটি ব‍্যঞ্জন উচ্চারণের বৈশিষ্ট্য কী?
৩: তাড়িত ব‍্যঞ্জনের নাম এরূপ কেন?
৪: ‘ল্’-কে পার্শ্বিক ব‍্যঞ্জন বলে কেন?
৫: কোন ব‍্যঞ্জন‌গুলি স্বর ছাড়াই দল গঠন করতে সক্ষম?
৬: ঘৃষ্ট ব‍্যঞ্জন কোনগুলি?
৭: নাসিক‍্য ব‍্যঞ্জনের বৈশিষ্ট্য কী?
৮: নাসিক‍্য ব‍্যঞ্জন ও অনুনাসিকতা‌র পার্থক‍্য কী?
৯: ড়্ ও ঢ়্ আলাদা ব‍্যঞ্জন নয় কেন?
ADVERTISEMENT
১০: ‘ঘোষ’ কথার অর্থ কী? 
১১: ‘মহাপ্রাণ’ কথার ‘প্রাণ’ কী অর্থ বহন করে?
১২: বর্গের তৃতীয় ও পঞ্চম ব‍্যঞ্জনের সম্পর্ক কী?
১৩: বাংলায় নাসিক‍্য ব‍্যঞ্জন মোট ক’টি?
১৪: বর্গের মধ‍্যে কোন ব‍্যঞ্জন বাংলায় উচ্চারিত হয় না?
১৫: শিস ধ্বনির এরূপ নামকরণ কেন হয়েছে?
১৬: অঘোষ মহাপ্রাণ ঔষ্ঠ‍্য ব‍্যঞ্জন কোনটি?
১৭: ঘোষ অল্পপ্রাণ কণ্ঠ‍্য ব‍্যঞ্জন কোনটি?
১৮: তালব‍্য নাসিক‍্য ব‍্যঞ্জন কোনটি?
১৯: ঘৃষ্ট ব্যঞ্জন ও স্পর্শ ব্যঞ্জনের পার্থক্য কী?
২০: ঘৃষ্ট ব্যঞ্জনের সঙ্গে উষ্ম ব্যঞ্জনের মিল ও অমিল কোথায়?

BLOG AD HERE

2 thoughts on “উচ্চারণ-প্রকৃতি অনুসারে ব‍্যঞ্জনের শ্রেণি”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *