ক্রিয়াজাত বিশেষণের ধারণ
বাংলা ভাষায় ক্রিয়াজাত বিশেষণের ধারণাটি নিয়ে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা আছে। বিশেষত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এটি নিয়ে পরিষ্কার ধারণার খুব অভাব আছে। ফলে তারা ব্যাকরণের বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনা ভালো ভাবে বুঝতে পারে না। আজকের আলোচনায় ক্রিয়াজাত বিশেষণ সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো।
প্রথমেই বেশ কয়েকটি উদাহরণ নিয়ে চেনার চেষ্টা করবো কোনগুলি ক্রিয়াজাত বিশেষণ।
১: তোমার খাওয়া থালায় আমি খাবো।
২: দেখা সিনেমাটা আবার দেখছি।
৩: পড়া বই দু বার করে পড়ছি।
৪: তোমাকে প্রদত্ত টাকার অর্ধেক দেওয়া হয়েছে।-
৫: বিক্রীত দ্রব্য ফেরত হয় না।
৬: বর্জ্য পদার্থ থেকে রোগ হয়।
৭: তোমার দেওয়া কলমটা হারিয়ে গেছে।
৮: তোমার বলা কথাটা সত্যি হলো।
৯: ফেলে দেওয়া জিনিস কুড়িয়ে রেখেছি।
১০: আমার শেখানো কথাটা মনে রাখবে।
উপরের উদাহরণগুলোতে দাগ দেওয়া পদগুলি বিশেষণ। এগুলি কোনো না কোনো ক্রিয়া থেকে এসেছে। বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এদের মধ্যে একটি ধাতু আর একটি প্রত্যয় রয়েছে। যেমন: শেখানো = √শেখা + আনো, ফেলে দেওয়া = √ফেলে দে (যৌগিক ধাতু) + আ, বলা = √বল্ + আ প্রভৃতি।
ক্রিয়াজাত বিশেষণ চেনার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়। সংস্কৃত প্রত্যয় যোগে গঠিত হলে তাকে চেনার কোনো অসুবিধা হয় না। যেমন: গৃহীত, বর্জ্য, আগত, আগন্তুক, প্রাপ্ত, প্রহৃত, নিবৃত্ত, পরিণত, আগত, গ্রহণীয়, দর্শনীয়, এই সব ক্রিয়াজাত বিশেষণ সৃষ্টি হয়েছে সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় যোগে। এগুলি সব সময়ই বিশেষণ। কিন্তু বাংলার ‘আ’ ও ‘আনো’ প্রত্যয় যোগে গঠিত শব্দগুলি বিশেষ্য রূপেও কাজ করে, আবার বিশেষণ রূপেও কাজ করে। উপরে দেওয়া ১০টি উদাহরণে এরা বিশেষণের কাজ করছে। এ ছাড়া অনেক সময় কর্মবাচ্যের ক্রিয়াপদ গঠনে এই বিশেষণ ব্যবহৃত হয়। বিশেষ্য রূপে এদের ব্যবহার জানার জন্য। বিশেষ্য পদের বিস্তারিত আলোচনা অধ্যায়ে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যের আলোচনাটি পড়তে হবে।