প্রশ্নোত্তরে ধ্বনি ও বর্ণ
এই আলোচনায় ধ্বনি ও বর্ণ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর আলোচনা করা হলো। প্রয়োজন অনুসারে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরের সাথে প্রয়োজনীয় উদাহরণ দেওয়া হলো।
স্পর্শ বর্ণ কাকে বলে
যে ব্যঞ্জনকে উচ্চারণ করার সময় বাগ্যন্ত্রের উচ্চারক অঙ্গ একটি উচ্চারণ স্থানকে স্পর্শ করার মাধ্যমে শ্বাসবায়ুর গতিপথে পূর্ণ বাধা সৃষ্টি করে এবং শ্বাসবায়ু সেই বাধা অতিক্রম করে প্রবাহিত হয়, তাকে স্পর্শব্যঞ্জন বলে। স্পর্শব্যঞ্জনের লিখিত রূপকেই বলে স্পর্শ বর্ণ।
যেমন: ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ (ক থেকে ম পর্যন্ত)।
অল্পপ্রাণ বর্ণ কাকে বলে
যে ব্যঞ্জনকে উচ্চারণ করার সময় অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণ শ্বাসবায়ু নির্গত হয়, তাদের অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জন বলে। অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনের লিখিত রূপকে অল্পপ্রাণ বর্ণ বলে। যেমন: ক, গ, চ, ট, ত, দ প্রভৃতি।
মহাপ্রাণ বর্ণ কাকে বলে
যে ব্যঞ্জনকে উচ্চারণ করার সময় অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণ শ্বাসবায়ু নির্গত হয় তাদের মহাপ্রাণ ব্যঞ্জন বলে। মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনের লিখিত রূপকে মহাপ্রাণ বর্ণ বলে। যেমন: খ, ঘ ,ঝ, ঢ, ফ, ভ প্রভৃতি।
স্বরধ্বনি ও স্বরবর্ণের পার্থক্য
১) স্বরধ্বনি হল উচ্চারণযোগ্য ধ্বনি। স্বরবর্ণ হল সেই ধ্বনির লিখিত রূপ।
২) স্বরধ্বনিকে শোনা যায়, স্বরবর্ণকে চোখে দেখা যায়।
অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি কাকে বলে
যে ধ্বনিকে উচ্চারণ করার সময় স্বরতন্ত্রীতে কম্পনের ফলে কোনো প্রকার গম্ভীর সুর সৃষ্টি হয় না এবং কম পরিমাণ শ্বাসবায়ু নির্গত হয়, তাকে বলে অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনি। অঘোষ অল্পপ্রাণ ধ্বনির উদাহরণ: ক, চ, ট, ত, প।
হ্রস্বস্বর কাকে বলে
যে স্বরকে উচ্চারণ করতে কম সময় লাগে, তাকে হ্রস্বস্বর বলে। হ্রস্বস্বর উচ্চারণের সময়কে এক মাত্রা ধরা হয়। হ্রস্বস্বরের উদাহরণ হল: অ, ই, উ, ঋ।
মূর্ধণ্য ধ্বনি বলতে কী বোঝো
যে ধ্বনিকে উচ্চারণ করার সময় জিহ্বার অগ্রভাগ মূর্ধাকে স্পর্শ করার মাধ্যমে শ্বাসবায়ুর গতিপথে পূর্ণ বাধা সৃষ্টি করে এবং শ্বাসবায়ু সেই বাধা অতিক্রম করে প্রবাহিত হয়, তাকে মূর্ধণ্য ধ্বনি বলে।
মূর্ধণ্য ধ্বনির উদাহরণ হল: ট, ঠ, ড, ঢ, ণ, ষ।
বাংলায় একমাত্র কম্পিত ধ্বনি কোনটি
বাংলায় একমাত্র কম্পিত ধ্বনি হল র। এই ধ্বনিকে উচ্চারণ করার সময় জিহ্বা দ্রুত বেগে কম্পিত হয়, তাই একে কম্পিত ধ্বনি বলা হয়।
ক বর্গীয় ধ্বনির উচ্চারণ স্থান কোনটি
ক বর্গীয় ধ্বনির উচ্চারণ স্থান হল কণ্ঠ। এই কারণে ক বর্গের ব্যঞ্জনগুলি কণ্ঠ্য ব্যঞ্জন নামে পরিচিত।
প বর্গীয় ধ্বনিগুলোর উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী নাম কী
প বর্গীয় ধ্বনিগুলো ওষ্ঠে উচ্চারিত হয়। তাই উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী এদের নাম ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন। (‘ওষ্ঠ্য’ বানানে য-ফলা দিতে হবে।)
চ বর্গীয় ধ্বনির উচ্চারণ স্থান কোনটি
চ বর্গীয় ধ্বনির উচ্চারণ স্থান হল তালু। এই কারণে এদের তালব্য ব্যঞ্জনও বলা হয়।
কোন ধ্বনি উচ্চারণ করতে স্বরতন্ত্রী বেশি অনুরণিত হয়
ঘোষ ধ্বনিগুলিকে উচ্চারণ করার সময় স্বরতন্ত্রী বেশি অনুরণিত হয়। স্বরতন্ত্রীর কম্পনের ফলে একপ্রকার গম্ভীর সুর সৃষ্টি হয়, সেই সুরকে ঘোষ বা নাদ বলে। তাই এদের ঘোষ ব্যঞ্জন বলে।
উষ্ম বর্ণ কাকে বলে
যে ব্যঞ্জনকে উচ্চারণ করার সময় শ্বাসবায়ুকে আংশিক বাধা দেওয়া হয় এবং শ্বাসবায়ু সেই বাধা ঠেলে প্রবাহিত হয়, তাকে উষ্ম ব্যঞ্জন বলে। উষ্ম ব্যঞ্জনের লিখিত রূপকে উষ্ম বর্ণ বলে। উষ্ম বর্ণের উদাহরণ হল শ্, স, ষ, হ।
শিস ধ্বনি কাকে বলে
যে ধ্বনির উচ্চারণের সাথে শিস দেওয়ার আওয়াজের সাদৃশ্য রয়েছে, তাদের বলে শিস ধ্বনি। শ, স ও ষ হল শিস ধ্বনি। এরা উষ্ম ধ্বনির অন্তর্গত।
কম্পিত ধ্বনি কাকে বলে
যে ধ্বনিকে উচ্চারণ করার সময় জিহ্বা দ্রুত বেগে কম্পিত হয়, তাকে কম্পিত ধ্বনি বলে। বাংলা ভাষার একমাত্র কম্পিত ধ্বনি হল র। এটি অন্তঃস্থ ব্যঞ্জনের অন্তর্গত।
উচ্চারণের দিক থেকে ল কোন ধরনের বর্ণ
উচ্চারণের দিক থেকে ল হল পার্শ্বিক অন্তঃস্থ বর্ণ। একে পার্শ্বিক ব্যঞ্জন বলে, কারণ একে উচ্চারণ করার সময় শ্বাসবায়ু জিহ্বার দুই পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি অন্তঃস্থ ব্যঞ্জন, কারণ এর উচ্চারণ স্বর ও ব্যঞ্জনের মধ্যবর্তী।
আরও পড়ুন