নাসিক্যীভবনের সংজ্ঞা
আমরা জানি যে সব ব্যঞ্জনকে উচ্চারণ করার সময় কিছুটা শ্বাসবায়ু নাসাপথে চালিত হয় ও তার ফলে নাসাবিবরে একটি অনুরণন সৃষ্টি হয় তাদের নাসিক্য ব্যঞ্জন বলে। বাংলা বর্ণমালার ঙ, ঞ, ণ, ন, ম এই পাঁচটি ব্যঞ্জন নাসিক্য ব্যঞ্জন, এ ছাড়া অনুস্বরের উচ্চারণও ঙ এর মতো, তাই এটিও নাসিক্য ব্যঞ্জন। (এদের মধ্যে ণ ও ঞ বাংলায় উচ্চারিত হয় না। শুধু তৎসম শব্দের বানান লেখার জন্য এরা বাংলা বর্ণমালায় আছে।)
কোনো শব্দের অন্তর্গত নাসিক্য ব্যঞ্জন লুপ্ত হয়ে পূর্ববর্তী স্বরধ্বনিকে অনুনাসিক করে তুললে তাকে নাসিক্যীভবন বলে। নাসিক্যীভবন হলে একই সঙ্গে ক্ষতিপূরক দীর্ঘীভবনও হয়।
নাসিক্যীভবনের উদাহরণ
নাসিক্যীভবনের বহু উদাহরণ বাংলা ভাষায় পাওয়া যায়। যেমন: চন্দ্র > চাঁদ, দন্ত > দাঁত, কণ্টক > কাঁটা, কম্প > কাঁপ, হংস > হাঁস, বংশ > বাঁশ।
নাসিক্যীভবনের উদাহরণ বিশ্লেষণ
কম্প > কাঁপ এই উদাহরণটি ভেঙে দেখা যাক। নিচের বিশ্লেষণটি ভালো করে পড়ুন।
ক্+অ+ম্+প্+অ > ক্ + আঁ + প্ + অ
বিশ্লেষণটি লক্ষ করুন। ম্ ব্যঞ্জন লোপ পেয়েছে। এটি নাসিক্য ব্যঞ্জন। সেই সঙ্গে ম্ -এর পূর্ববর্তী স্বরটি দীর্ঘ হয়েছে (অ থেকে আ হয়েছে। অ হ্রস্ব স্বর, আ দীর্ঘ স্বর), অর্থাৎ ক্ষতিপূরক দীর্ঘীভবন ঘটেছে এবং সেই সঙ্গে লুপ্ত ম-এর রেশ রূপে আ-এর মাথায় চন্দ্রবিন্দু বসেছে বা আ স্বরটি অনুনাসিক স্বরে পরিণত হয়েছে।
স্বতোনাসিক্যীভবন
নাসিক্য ব্যঞ্জনের লোপ বা প্রভাব ছাড়াও অনেক সময় কোনো স্বরধ্বনি অনুনাসিক হয়ে যেতে পারে। এই ঘটনাকে স্বতোনাসিক্যীভবন বলে।
স্বতোনাসিক্যীভবনের উদাহরণ
কাচ > কাঁচ, হাসি > হাঁসি, হাসপাতাল > হাঁসপাতাল, পুথি > পুঁথি, পেচক > পেঁচা, ইষ্টক > ইঁট, পিপীলিকা > পিঁপড়া।
এই উদাহরণগুলিতে দেখুন কোনো নাসিক্য ব্যঞ্জন নেই, তাই লোপা পাওয়ারও প্রশ্ন নেই। তা সত্ত্বেও একটি স্বর অনুনাসিক হয়ে গেছে।
বিনাসিক্যীভবন
বিনাসিক্যীভবনকে নাসিক্যীভবনের কিছুটা বিপরীত প্রক্রিয়া বলা যায়।
যে প্রক্রিয়ায় কোনো শব্দের অন্তর্গত নাসিক্য ব্যঞ্জন লোপ পায়, কিন্তু তার কোনো প্রভাব বা রেশ থাকে না, তাকে বিনাসিক্যীভবন বলে।
যেমন: শৃঙ্খল > শিকল, মঞ্চ > মাচা, কিঞ্চিৎ > কিছু
উপরের উদাহরণগুলিতে দেখুন ঙ, ঞ, নাসিক্য ব্যঞ্জনগুলি লোপ পেয়েছে কিন্তু তার ফলে কোনো স্বরধ্বনি অনুনাসিক হয়ে যায়নি।
আরও পড়ুন