বিসর্গ সন্ধি কাকে বলে?
বিসর্গ আসলে কী?
বিসর্গ একটি ব্যঞ্জন। এটি একটি আশ্রয়স্থানভাগী ব্যঞ্জন। অর্থাৎ, এই ব্যঞ্জনটি পূর্ববর্তী স্বরের আশ্রয় ছাড়া উচ্চারিত হতে পারে না। যেমন: অঃ, আঃ, ইঃ, উঃ ইত্যাদি। বিসর্গের উচ্চারণ অনেকটা হ্-এর মতো। সংস্কৃত ভাষায় র্ এবং স্ ধ্বনিদুটি অনেক সময় বিসর্গে পরিণত হয়। এই কারণে বিসর্গ দুই প্রকার: র-জাত বিসর্গ ও স-জাত বিসর্গ। উদাহরণ-স্বরূপ বলা যায়, মনঃ শব্দের বিসর্গটি স-জাত। কারণ সংস্কৃতে ‘মনস্’ শব্দের ‘স্’-টি বিসর্গে রূপান্তরিত হয়েছে। আবার দুঃ উপসর্গের বিসর্গটি এসেছে ‘দুর্’ উপসর্গ থেকে। তাই এটি র-জাত বিসর্গ। র-জাত ও স-জাত বিসর্গের ধর্ম অনেকাংশেই আলাদা। তাই সন্ধিতেও এই দুই প্রকার বিসর্গ আলাদা ভূমিকা পালন করে।
সন্ধিতে বিসর্গের পরিবর্তন বা রূপান্তর
সন্ধিতে যুক্ত হওয়ার পর বিসর্গের রূপান্তর বা পরিবর্তনগুলি লক্ষণীয়।
● পূর্ববর্তী অ-স্বরধ্বনি ও-তে পরিণত হয়।
যেমন: মনঃ+যোগ = মনোযোগ।
● বিসর্গটি র্-ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়। র্-এর পর ব্যঞ্জন থাকলে র্-টি রেফ্ হয় এবং স্বর থাকলে র্-ই থাকে।
যেমন: নিঃ+দেশ = নির্দেশ
● বিসর্গটি শ্,স্ বা ষ্-তে পরিণত হয়।
যেমন: নিঃ+চল = নিশ্চল
● বিসর্গ লুপ্ত হয়ে পূর্ববর্তী স্বরটি দীর্ঘ হয়।
যেমন: নিঃ+রব = নীরব
● বিসর্গ সন্ধির ফলে বিসর্গ লুপ্ত হয়েছে, অন্য কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এমন উদাহরণ
যেমন: অতঃ+এব = অতএব, নিঃ + স্তব্ধ = নিস্তব্ধ
● বিসর্গটি যেমন ছিল তেমনি থেকে যায়, অন্য কোনো পরিবর্তন ঘটে না।
যেমন: মনঃ+ক্ষুণ্ণ = মনঃক্ষুণ্ণ
যাঁরা বিসর্গ সন্ধির সূত্র মনে রাখতে চান না, তাঁরা এই পরিবর্তনগুলি ধরেও বিসর্গ সন্ধি মনে রাখতে পারেন। তাঁদেরকে প্রতিটি নিয়মের কিছু আদর্শ উদাহরণ মনে রেখে দিতে হবে কিন্তু ভালো করে শেখার জন্য বিসর্গ সন্ধির সমস্ত সূত্র জেনে নেওয়া ভালো।
বিসর্গ সন্ধির সূত্র
সূত্র ১: বিসর্গ + চ্/ছ্ = শ্চ/শ্ছ
বিসর্গের সাথে চ্ বা ছ্ যুক্ত হলে বিসর্গটি শ্-তে পরিণত হয়।
উদাহরণ:
নিঃ+চয় = নিশ্চয়
জ্যোতিঃ+চক্র = জ্যোতিশ্চক্র
অয়ঃ+চক্র = অয়শ্চক্র
সূত্র ২: বিসর্গ+ট্/ঠ্ = ষ্ট/ষ্ঠ
বিসর্গের সাথে ট্ বা ঠ্ যুক্ত হলে বিসর্গটি ষ্-তে পরিণত হয়।
উদাহরণ:
ধনুঃ+টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার
চতুঃ + টয় = চতুষ্টয়
সূত্র ৩: বিসর্গের সাথে ত্ বা থ্ যুক্ত হলে বিসর্গটি স্-তে পরিণত হয়।
উদাহরণ:
নিঃ+তেজ = নিস্তেজ
দুঃ+তর = দুস্তর
নিঃ+তারিণী = নিস্তারিণী
সূত্র ৪: অঃ+ঘোষ ব্যঞ্জন/য্, র্,ল্,ব্,হ্ = অঃ>ও
অ-এর পরে অবস্থিত বিসর্গের সাথে ঘোষ ব্যঞ্জন অথবা য্,র্,ল্,ব্,হ্ যুক্ত হলে অঃ বদলে গিয়ে ও হয়।
উদাহরণ:
মনঃ+যোগ = মনোযোগ
মনঃ+ভাব = মনোভাব
অকুতঃ+ভয় = অকুতোভয়
সূত্র ৫: অ, আ ভিন্ন অন্য স্বরের পরে অবস্থিত বিসর্গের সাথে স্বরবর্ণ, ঘোষ ব্যঞ্জন, অন্তঃস্থ ব্যঞ্জন বা হ যুক্ত হলে বিসর্গ স্থানে র্ হয়।
উদাহরণ:
দুঃ+নীতি = দুর্নীতি
নিঃ+বান্ধব = নির্বান্ধব
বহিঃ+গমন = বহির্গমন
সূত্র ৬: অ-এর পরে অবস্থিত র-জাত বিসর্গের সাথে স্বরবর্ণ, ঘোষ ব্যঞ্জন, অন্তঃস্থ ব্যঞ্জন, হ যুক্ত হলে বিসর্গ স্থানে র্ হয়।
উদাহরণ:
পুনঃ+অপি = পুনরপি
প্রাতঃ+ভ্রমণ = প্রাতর্ভ্রমণ
প্রাতঃ+আশ = প্রাতরাশ
পুনঃ+আগমন = পুনরাগমন
সূত্র ৭: বিসর্গের সাথে র্ যুক্ত হলে বিসর্গ থেকে যে র্ পাওয়া যায় তার লোপ হয় এবং পূর্ববর্তী স্বরটি দীর্ঘ হয়ে যায়।
উদাহরণ:
চক্ষুঃ + রোগ = চক্ষূরোগ
নিঃ + রস = নীরস
নিঃ + রব = নীরব
স্বঃ + রাজ্য = স্বারাজ্য
সূত্র ৮: ক, খ, প, ফ পরে থাকলে নিঃ, দুঃ, বহিঃ, আবিঃ, প্রাদুঃ, চতুঃ, আয়ুঃ প্রভৃতি শব্দের বিসর্গজাত স্-টি ষ্-এ পরিণত হয়।
উদাহরণ:
আবিঃ + কার = আবিষ্কার
নিঃ + কাম = নিষ্কাম
বহিঃ + কার = বহিষ্কার
চতুঃ + পাঠী = চতুষ্পাঠী
চতুঃ + কোণ = চতুষ্কোণ
দুঃ + কর্ম = দুষ্কর্ম
সূত্র ৯: নমঃ, তিরঃ, পুরঃ শব্দের পর কৃ ধাতুজাত শব্দ থাকলে বিশেষ ক্ষেত্রে বিসর্গ স্থানে স্ হয়।
উদাহরণ:
নমঃ + কার = নমস্কার
পুরঃ + কার = পুরস্কার
তিরঃ + কার = তিরস্কার
সূত্র ১০: কর, কার, কান্ত, কাম, কামনা, কুম্ভ ও পাত্র শব্দ পরে থাকলে অ-এর পরে অবস্থিত বিসর্গের (অঃ) স্থানে স্ হয়।
উদাহরণ:
শ্রেয়ঃ + কর = শ্রেয়স্কর
যশঃ + কর = যশস্কর
অয়ঃ + কান্ত = অয়স্কান্ত
মনঃ + কাম = মনস্কাম
অয়ঃ + কুম্ভ = অয়স্কুম্ভ (লোহার কলসী)
পয়ঃ + পাত্র = পয়স্পাত্র
আরও পড়ুন