সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দের সংজ্ঞা ও তালিকা
সব ভাষার মতো বাংলা ভাষাতেও এমন বহু শব্দ আছে যাদের উচ্চারণ পুরোপুরি এক বা প্রায় এক হলেও অর্থের পার্থক্য আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এদের মধ্যে বানানে পার্থক্য থাকে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বানানেও কোনো পার্থক্য থাকে না। বানানে পার্থক্য না থাকলে বাক্যে প্রয়োগ দেখে বুঝতে হয় শব্দটি কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই শব্দগুলিকে ব্যাকরণের পরিভাষায় সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ বলে। সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ কাকে বলে? এর উত্তর হিসেবে আমরা বলতে পারি: একাধিক শব্দের উচ্চারণ একই বা প্রায় একই হলেও তাদের অর্থ যদি আলাদা হয়, তখন ঐ শব্দগুলিকে বলা হয় সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ।
সমোচ্চারিত শব্দ-যুগলের অর্থ পার্থক্য চিনতে পারা ছোটোদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুশীলন। আজকের আলোচনায় আমরা এই রকম বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দের উদাহরণ তুলে ধরলাম। তালিকাটি একটি বর্ণানুক্রমিক তালিকা।
সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দের তালিকা
- অনু – পশ্চাৎ , অণু – পদার্থের ক্ষুদ্র কণা
- অবদ্য – নিন্দনীয়, অবধ্য – বধের অযোগ্য
- অবলা – যার বল নেই, অবোলা – বোবা
- অবিরাম – বিরামহীন, অভিরাম – সৌন্দর্য-পূর্ণ
- অর্ঘ – মূল্য/দাম অর্ঘ্য – পুজোর উপকরণ
- অর্থ – টাকাপয়সা, অর্থ – মানে
- অশ্ব – ঘোটক বা ঘোড়া, অশ্ম – প্রস্তর (যেমন: জীবাশ্ম)
- আচার – রীতিনীতি, আচার – মুখরোচক খাদ্যবিশেষ
- আধার – যা ধারণ করে, আঁধার – অন্ধকার
- আপন – নিজ, আপণ – দোকান
- আবরণ – আচ্ছাদন, আভরণ – অলঙ্কার
- আবাস – বাসস্থান, আভাস – ইঙ্গিত
- আশ – আশা, আঁশ – শল্ক
- আশা – আকাঙ্ক্ষা, আসা – আগমন
- আসার – প্রবল বর্ষণ, আষাঢ় – মাসবিশেষ
- উপাদান – উপকরণ, উপাধান – বালিশ
- কটি – কোমর, কোটি – শত লক্ষ/একশো লাখ
- কমল – পদ্ম বা শতদল, কোমল – নরম
- কমা – হ্রাস পাওয়া, কমা – অর্ধচ্ছেদচিহ্ন
- কলম – লেখনী , কলম – উদ্ভিদের অঙ্গপ্রতিস্থাপন
- কাঁটা – কণ্টক/বাধা, কাটা – কর্তন করা
- কালী – কালিকা , কালি – মসী
- কুঁজো – কুব্জ, কুঁজো – কলসী
- কুল – বংশ, কুল – ফলবিশেষ, কূল – তীর
- কৃত্তি – বাঘের ছাল, কীর্তি – মহান কাজ
- কোন – প্রশ্নবাচক সর্বনাম-বিশেষ, কোণ – কোনা
- খাটি – পরিশ্রম করি, খাঁটি – বিশুদ্ধ
- খোঁড়া – খঞ্জ, খোঁড়া – খনন করা
- গাথা – লোকগান, গাঁথা – গ্রন্থন করা
- গিরিশ – শিব, গিরীশ – হিমালয়
- গোঁড়া – অন্ধবিশ্বাসী, গোড়া – শুরুর অংশ
- গ্রহণ – নেওয়া, গ্রহণ – চন্দ্র-সূর্যের ছায়াগ্রাস
- ঘড়ি – সময় মাপক যন্ত্র, ঘোড়ী – ঘোটকী
- ঘরে – গৃহের মধ্যে, ঘোরে – ঘূর্ণিত হয়
- চরণ – পা, চরণ – কবিতার পংক্তি
- চাপা – ঢাকা, চাপা – আরোহণ করা
- চাল – তণ্ডুল , চাল – গৃহের আচ্ছাদন
- চির – আবহমান, চীর – ছিন্ন বস্ত্র
- চুরি – গোপনে অপহরণ, চুড়ি – অলঙ্কার-বিশেষ
- ছটা – দীপ্তি, ছ’টা – ছয় খানা
- জমক – জাঁক, যমক – কাব্যের এক অলঙ্কার
- ঝড়ে – ঝঞ্ঝাতে , ঝরে – ঝরে পড়ে
- ডাল – শাখা, ডাল – একজাতীয় শস্য
- তির – শর, তীর – কূল
- দাঁড়ি – পূর্ণচ্ছেদ, দাঁড়ি – মাঝি, দাড়ি – শ্মশ্রূ
- দার – স্ত্রী, দ্বার – দরজা
- দিনেশ – সূর্য, দীনেশ – গরীবের ঈশ্বর
- দীন – গরিব, দিন – দিবস
- দীপ – প্রদীপ , দ্বিপ – হাতি, দ্বীপ – জলবেষ্টিত ভূখণ্ডড
- দ্বন্দ্ব – দ্বিধা দ্বন্দ্ব – লড়াই
- ধরা – পৃথিবী, ধরা – ধারণ করা, ধড়া – কটিবস্ত্র
- ধোয়া – ধৌত করা, ধোঁয়া – ধূম
- নড়া – চলন, নোড়া – পাথরের পেষকযন্ত্র
- নারী – স্ত্রীলোক, নাড়ী – ধমনী
- নিতি – প্রতিদিন, নীতি – নিয়ম বা আদর্শ
- নিত্য – নিয়মিত, নৃত্য – নাচ
- নীর – জল, নীড় – বাসা
- পক্ষ – ডানা, পক্ষ – পনেরো দিন
- পদ – পা , পদ – কবিতা, পদ – বাক্যের অংশ
- পরিচ্ছদ – পোশাক, পরিচ্ছেদ – অধ্যায়
- পাতা – পৃষ্ঠা, পাতা – পত্র
- পানি – জল, পাণি – হাত
- পার – নিস্তার, পাড় – কিনারা
- প্রদান – দেওয়া, প্রধান – মূল
- বধূ – বৌ, বঁধু – বন্ধু
- বন – অরণ্য, বোন – ভগিনী
- বর্ষা – বর্ষণঋতু, বর্শা – অস্ত্রবিশেষ
- বাণী – মহৎ উপদেশ, বানি – বানানোর মজুরি
- বাধা – প্রতিকূলতা, বাঁধা – বন্ধনযুক্ত
- বাড়ি – ঘর , বাড়ি – আঘাত (যথা: লাঠির বাড়ি)
- বিকৃত – বিকারগ্রস্ত, বিক্রীত – যা বেচা হয়েছে
- বিজন – নির্জন, বীজন – পাখার বাতাস
- বিশ – কুড়ি, বিষ – গরল, বিস – পদ্মের ডাঁটা
- বৃত্তি – উৎসাহভাতা, বৃতি – ফুলের অংশ
- বৃন্দ – সমষ্টি, বৃন্ত – বোঁটা
- বেশ – সাজপোশাক, বেশ – অব্যয়-বিশেষ
- ভাল(উচ্চারণ ‘ভাল্’)- কপাল, ভাল – শ্রেয়
- ভাষা – ভাব প্রকাশের মাধ্যম, ভাসা – ভেসে থাকা
- মন – চিত্ত, মণ – ওজনের পরিমাপ
- মন্দ – খারাপ, মন্দ – মৃদু
- মাষ – ডাল-বিশেষ, মাস – ত্রিশ দিন
- মুখ – বদন, মূক – বোবা
- যাম – প্রহর , জাম – ফলবিশেষ
- রঙ – বর্ণ , রঙ্গ – তামাশা
- রোদ – সূর্যকিরণ, রোধ – বাধা বা রুদ্ধ করা
- শব – মৃতদেহ, সব – সকল
- শর – তির, সর – তরলের উপরিভাগের আস্তরণ, স্বর – কণ্ঠনিঃসৃত আওয়াজ
- শাখ – শাখা, শাঁখ – শঙ্খ
- শান্ত – ধীর, সান্ত – যার শেষ আছে (স+অন্ত)
- শুচি – পবিত্র, সূচি – তালিকা
- সকল – সব, শকল – আঁশ
- সদর – সম্মুখ, সোদর – সহোদর
- সংকর – মিশ্র শংকর – শিব
- সংজ্ঞা – সম্যক জ্ঞান, সংজ্ঞা – চেতনা
- সারদা – সরস্বতী, শারদা – দুর্গা
- সিত – শ্বেত, শীত – ঋতুবিশেষ
- সুখ – আনন্দ, শুক – পৌরাণিক পক্ষীবিশেষ
- সুর – দেবতা, সুর – সঙ্গীতের তাললয়
- স্কন্দ – অধ্যায়, স্কন্ধ – কাঁধ
- স্বর্গ – দেবলোক, সর্গ – কাব্যের অধ্যায়
- স্বাক্ষর – সহি, সাক্ষর – অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন
- হতো – হইত হত – মৃত
আপনার প্রয়োজনীয় শব্দ জোড়াটি এখানে না পেলে আমার টেলিগ্রাম গ্রুপে জয়েন করুন ও সেখানে জিজ্ঞেস করুন। আমি উত্তর দেবো।
আরও পড়ুন
ছোটোদের ও বড়োদের জন্য ব্যাকরণের সেরা বই
সাধু ও চলিত ভাষার ৭টি বৈশিষ্ট্য
3 thoughts on “১০০+ সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ | সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দের তালিকা | Samochcharito Vinnarthok shabdo”
সকল , শকল সমচারিত টি বলে দেবেন প্লিজ
সকল , শকল সমচারিত টি বলে দেবেন প্লিজ
Pingback: খ্রিস্টাব্দ ও সালের পার্থক্য | খ্রিস্টাব্দ ও বঙ্গাব্দের পার্থক্য | খ্রিস্টাব্দ ও বঙ্গাব্দ হিসাব