প্রত্যয়ের নিয়ম ও উদাহরণ
প্রত্যয় অধ্যায়টি বাংলা ব্যাকরণের পড়ুয়াদের কাছে চিরকালই মাথাব্যথার কারণ। এর মূল কারণ সংস্কৃত প্রত্যয়। সংস্কৃত প্রত্যয়ের নিয়ম অনেক। সমস্ত নিয়মকে একত্রিত করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। তবু এই পোস্টে মূলত সংস্কৃত প্রত্যয়ের গুরুত্বপূর্ণ নিয়মগুলি ব্যাখ্যা সহ আলোচনা করার চেষ্টা করা হল।
আমাকে YouTube-এ সাবস্ক্রাইব করার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
প্রত্যয় শব্দের ব্যুৎপত্তি ও অর্থ
প্রত্যয় শব্দটির ব্যুৎপত্তি হল – প্রতি – √ই + অ (অচ্) এবং আভিধানিক অর্থ হল – বিশ্বাস — “প্রত্যয়ং জনয়ামাস তদান্যোন্যন্য।” প্রত্যয়ের ব্যুৎপত্তিকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে √ই ধাতুর অর্থ যাওয়া এবং প্রতি উপসর্গের অর্থ দিকে। অর্থাৎ প্রত্যয় শব্দটির অর্থ – দিকে গমন > শব্দ গঠনের দিকে গমন > শব্দ গঠনের পদ্ধতি।
প্রত্যয়ের ভূমিকা
১. নতুন নতুন শব্দ গঠন করে শব্দ ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে তোলে।
যেমন – √দা একটি ধাতু। যদি এই ধাতুর পর ভিন্ন ভিন্ন প্রত্যয় ব্যবহার করি তাহলে আমরা ভিন্ন ভিন্ন শব্দ পাবো।
√দা + ণক = দায়ক
√দা + তব্য = দাতব্য
√দা + অনীয় = দানীয়
আবার শব্দের পরে প্রত্যয় যুক্ত করে নতুন শব্দ গঠন করা যায়। যেমন – ভাস্কর – একটি শব্দ। যদি শব্দটির পরে প্রত্যয় যোগ করি তাহলে আমরা আবার একটি নতুন শব্দ পাবো – – ভাস্কর + ষ্ণ্য = ভাস্কর্য (নতুন শব্দ)
২. প্রত্যয়ের সাহায্যে ধাতু বা শব্দ থেকে নতুন ধাতু তৈরি করা যায়।
যেমন – ক. √কর্ (ধাতু) + আ (ধাত্ববয়ব প্রত্যয়) = করা (নব গঠিত ধাতু)
খ. ঘাম (নামশব্দ) + আ (ধাত্ববয়ব প্রত্যয়) = ঘামা (নামধাতু)
৩. বাক্য সংকোচনে প্রত্যয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
যেমন – যা পাঠ করা হয়েছে — এই বাক্যটিকে সংকোচন করলে হবে পঠিত। শব্দটির বিশ্লেষণ – √পঠ্ + ক্ত। √পঠ্ ধাতুর অর্থ “পাঠ করা” এবং ক্ত প্রত্যয় “হইয়াছে” অর্থে ব্যবহৃত হয়ে বিশেষণ পদ গঠন করে বাক্যটিকে সংকুচিত করেছে।
৪. পদ পরিবর্তন করতে প্রত্যয় বিকল্পহীন।
যেমন – একটি বিশেষণ পদ হল জীর্ণ। এই পদকেই বিশেষ্য পদে পরিবর্তন করা সম্ভব প্রত্যয় যোগে – জীর্ণ + তা = জীর্ণতা (বিশেষ্য)
৫. প্রচলিত শব্দের ব্যাকরণগত শুদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত করতে প্রত্যয়ের সাহায্য প্রয়োজন।
যেমন –
ক. প্রফুল্লিত , আকুলিত ইত্যাদি শব্দ ব্যাকরণগত ভাবে শুদ্ধ নয়। কেননা প্রফুল্ল , আকুল ইত্যাদি শব্দ হল বিশেষণ। আর বিশেষণের উত্তর ইত প্রত্যয় যুক্ত হয় না। অর্থাৎ শব্দের ব্যাকরণগত শুদ্ধতা বিচার করতে হলে আমাদের প্রত্যয়ের আশ্রয় নিতে হবে।
প্রত্যয় কাকে বলে?
যে বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ ধাতুর পর যুক্ত হয়ে নতুন ধাতু বা শব্দ গঠন করে এবং শব্দের পর যুক্ত হয়ে নতুন ধাতু বা শব্দ গঠন করে , তাকে প্রত্যয় বলে।
যেমন – আ- √দৃ + ক্ত = আদৃত , পল্লব + ইত = পল্লবিত , হিংসা + উক = হিংসুক , ঘন(নামশব্দ) + আ = √ঘনা (নামধাতু) প্রভৃতি।
প্রত্যয়ের মূল আলোচনার পূর্বে আমরা আরও কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয় জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো। যা প্রত্যয়ের গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করবে।
ইৎ বলতে কী বোঝায়
ধাতু বা শব্দের সঙ্গে প্রত্যয় যোগ করলে দেখা যাবে প্রত্যয়ের কিছু অংশ নবগঠিত ধাতু বা শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় এবং বাকি অংশটুকু লোপ পায়। প্রত্যয়ে এই লোপ পাওয়া অংশটিকেই #ইৎ বলে। যেমন – √চল্ + শতৃ = চলৎ — এখানে দেখা যাচ্ছে প্রত্যয়ের শুধুমাত্র ত(ৎ) শব্দে যুক্ত হয়েছে এবং বাকি অংশ অর্থাৎ শ এবং ঋ লোপ পেয়েছে। দেখা যাচ্ছে- শ এবং ঋ – এর ইৎ হয়েছে।
আগম :
মূল ধাতু ও প্রত্যয়ে স্বরটি নেই অথচ নবগঠিত শব্দে নতুন স্বরটি আছে –এমন হলে স্বরের আগম হয়।
যেমন – ক. √লিখ্ + ক্ত = লিখত হওয়া উচিত ছিল কিন্তু হয়েছে লিখিত। খ্ – এর পর ই স্বরের আগম হয়েছে এবং লিখত শব্দ লিখিত হয়েছে।
উপধা কাকে বলে?
ধাতু বা শব্দের অন্তবর্ণের পূর্ব বর্ণকে উপধা বলে।
যেমন – ক. √যুজ্ একটি ধাতু। বর্ণ বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যাবে – য্ + উ + জ্ — এখানে √যুজ্ ধাতুর উপধা হল #উ বর্ণ।
খ. সুষ্ঠু একটি শব্দ। বর্ণ বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যাবে – স্ + উ + ষ্ + ঠ্ + উ — এখানে সুষ্ঠু শব্দটির উপধা হল ঠ্ বর্ণ।
প্রকৃতি কাকে বলে?
মৌলিক ভাব প্রদান করে এমন অবিভাজ্য পদ বা পদের অংশই হচ্ছে প্রকৃতি।
প্রকৃতিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা —
নাম প্রকৃতি বা শব্দপ্রকৃতি
যে প্রকৃতি কোনো প্রত্যয় বা বিভক্তি ছাড়াই নিজেই পদরূপে অবতীর্ণ হতে পারে তাকে নাম প্রকৃতি বলে।
যেমন – মা , জল , ফল ইত্যাদি।
ধাতু প্রকৃতি :
যে প্রকৃতির মাধ্যমে পদের একটি অবশিষ্ট মৌলিক অংশ পাওয়া যায় , যার মাধ্যমে কোনো ক্রিয়া জাতীয় ভূমিকাকে নির্দেশ করা হয় , তাকে ধাতু প্রকৃতি বলে।
যেমন – খা , চল্ , গম্ , দৃশ্ ইত্যাদি।
প্রত্যয়ের ফলে স্বরের পরিবর্তন : গুণ বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ
গুণ :
ধাতুর ই , ঈ স্থানে এ-কার (বা অয়), উ , ঊ স্থানে ও -কার (বা অব) এবং ঋ স্থান অর্ হবে। এই ভাবে ধাতুর স্বরের পরিবর্তনকেই গুণ বলে।
যেমন -ক. √ভিদ্ + ণ্যৎ = ভেদ্য ( অর্থাৎ ধাতুর উপধা #ই স্বরের গুণ হয়ে এ-কার স্বরে পরিণত হয়েছে।)
খ. √ভুজ্ + ঘঞ্ = ভোগ (উ হয়েছে ও-কার)
গ. √শী + ক্ত = শয়িত (ই হয়েছে অয়্)
ঘ. √ভূ + অনট্ =ভবন (ঊ হয়েছে অব্)
বৃদ্ধি :
ধাতু ও শব্দের অ, আ স্থানে আ- কার , ই , ঈ ,উ , এ স্থানে ঐ – কার(বা আয়্) , উ , ঊ , ও স্থানে ঔ – কার (বা আব্) এবং ঋ স্থানে আর্ হবে। এইভাবে স্বরের পরিবর্তনকে বৃদ্ধি বলে।
যেমন – ক.√ঋ + ণ্যৎ = আর্য (ঋ স্থানে হয়েছে আর্)
খ. প্র – √নম্ + ঘঞ্ = প্রণাম (অ স্থানে হয়েছে আ)
গ. কিশোর + ষ্ণ = কৈশোর (ই স্থানে হয়েছে ঐ- কার)
ঘ. উদ্ধত + ষ্ণ্য = ঔদ্ধত্য (উ হয়েছে ঔ- কার)
সম্প্রসারণ :
ধাতুর অন্তঃস্থ ‘য’ বর্ণ ই-কার হলে , ‘র’ বর্ণ ঋ -কার হলে এবং অন্তঃস্থ ‘ব’ বর্ণ ‘উ’ বর্ণে পরিবর্তিত হলে সম্প্রসারণ হয়।
যেমন – √বচ্ > উক্তি (ব হয়েছে উ) , √গ্রহ্ > গৃহীত (র হয়েছে ঋ) , √যজ্ > ইষ্টি (য হয়েছে ই)
অপশ্রুতি :
পূর্বে আলোচিত ধাতু ও শব্দের স্বর পরিবর্তনের তিনটি নিয়মকে একত্রে অপশ্রুতি বলা হয়। অর্থাৎ ধাতু থেকে শব্দ গঠনে বা শব্দ থেকে অন্য শব্দ গঠনে স্বর পরিবর্তনের তিনটি ধারা — গুণ , বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণকে একত্রে অপশ্রুতি বলে।
আদেশ :
এক বর্ণ বা শব্দাংশের স্থানে অন্য বর্ণ বা শব্দাংশ আসলে আদেশ হয়।
যেমন – ক. √আছ্ (ধাতু) + ইলে = থাকিলে (অর্থাৎ √আছ ধাতুর স্থানে √থাক্ ধাতু নামক অন্য ধাতু এসে শব্দ গঠন করেছে এবং আদেশ হয়েছে।)
খ. √অদ্ + ঘঞ্ = ঘাস (√অদ্ – এর স্থানে √ঘস্ এসে আদেশ হয়েছে এবং শব্দ গঠিত হয়েছে।)
তাহলে দেখা যাচ্ছে ধাতু , শব্দ ও প্রত্যয় যোগে নতুন শব্দ গঠন করতে অপশ্রুতি ও আদেশের ভূমিকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তবে ১০০% শব্দেই যে এগুলো দেখা যায় তা নয়। কিছু শব্দে স্বরের কোনো পরিবর্তন হয় না এমনও দেখা যায়।
যেমন – ক. √বুধ্ + অ (ক) = বুধ (আভিধানিক অর্থ- পণ্ডিত)
খ. √বদ্ + অ (খচ্) = বদ (যে বলে – এই অর্থে)
গ. √ভী + ক্ত (ত) = ভীত
ঘ. √খ্যা + ক্তি (তি) = খ্যাতি
প্রত্যয়ের শ্রেণিবিভাগ :
প্রত্যয়কে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
১. কৃৎ প্রত্যয় (ধাতু প্রত্যয়)
২. তদ্ধিত প্রত্যয় (শব্দ প্রত্যয়)
এছাড়াও ধাত্ববয়ব প্রত্যয় নামে অপর একটি প্রত্যয় আছে। এই প্রত্যয় ধাতু বা নাম শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন ধাতু তৈরি করে। কৃৎ ও তদ্ধিত প্রত্যয় সব সময় শব্দ গঠন করে, ধাত্ববয়ব প্রত্যয় সবসময় ধাতু গঠন করে।
কৃৎ প্রত্যয়
● সংজ্ঞা : ধাতুর উত্তর যে প্রত্যয় যোগে নতুন নতুন শব্দ সৃষ্টি হয় তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলে।
যেমন – √জ্ঞা + ক্ত = জ্ঞাত , √পঠ্ + ণক = পাঠক , √ত্যজ্ + ঘঞ্ = ত্যাগ ইত্যাদি।
কৃৎ প্রত্যয় যোগে গঠিত শব্দে ধাতুর পূর্বে এক বা একাধিক উপসর্গ কিংবা একটি উপপদ (নামপদ) থাকতে পারে।
যেমন – ক. √রন্জ্ + ক্ত = রক্ত (এখানে কোনো উপসর্গ বা উপপদ ব্যবহৃত হয়নি)
খ. প্র – √নু + অপ্ = প্রণব– এই উদাহরণে √নু ধাতুর পূর্বে অবস্থিত “প্র” হল একটি উপসর্গ।
গ. বি – আ – √খ্যা + অ + আ = ব্যাখ্যা – এই উদাহরণে ধাতুর পূর্বে দুটি (বি , আ) উপসর্গ যুক্ত হয়েছে।
ঘ. পঙ্ক – √জন্ + ড = পঙ্কজ — এই উদাহরণে √জন্ ধাতুর পূর্বে অবস্থিত “পঙ্ক” একটি আস্ত নামপদ। তাই এটি উপসর্গ নয় , এটি হল উপপদ।
ঙ. মৃত্যুম্ – √জি + খচ্ = মৃত্যুঞ্জয় — মৃত্যুম্ পদটি হল উপপদ।
উপসর্গ : যে সকল অব্যয়ে কোনো প্রত্যয় যুক্ত হয় না , যারা ধাতুর পূর্বে বসে ধাতুর অর্থের পরিবর্তন ঘটায় , তাদের উপসর্গ বলে।
যেমন – √জি + অচ্ = জয়
ক.অজয় :অ – √জি+ অচ্
খ.বিজয় :বি – √জি+ অচ্
গ.সুজয় :সু – √জি+ অচ্
ঘ.সঞ্জয় :সম্ – √জি+ অচ্
— এখানে লক্ষণীয় চারটি উদাহরণে √জি ধাতুর পূর্বে অ , বি , সু , সম্ উপসর্গ যুক্ত হয়ে নবগঠিত শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
উপপদ : যে সকল পদের পরস্থিত ধাতুর উত্তর বিশেষ বিশেষ কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হয় , সেই সব পদকে উপপদ বলে। আক্ষরিক অর্থে উপপদ হল – সমীপবর্তী পদ।
যেমন : শাস্ত্রজ্ঞ : শাস্ত্র – √জ্ঞা + ক (অ) — এখানে #শাস্ত্র হল উপপদ।
কৃৎ প্রত্যয়ের বৈশিষ্ট্য
১. কৃৎ প্রত্যয় নিষ্পন্ন পদকে কৃদন্ত পদ বলে।
২. কৃৎ প্রত্যয় যোগে বিশেষ্য , বিশেষণ ও ক্রিয়াবাচক বিশেষণপদ গঠিত হয়।
৩. কৃৎ প্রত্যয়ে ধাতুর অন্ত্যস্বরের ও উপধা লঘু স্বরের গুণ হয়। যেমন – √কৃ + তব্য = কর্তব্য
৪. কৃৎ প্রত্যয়ে “ণ” অথবা “ঞ” ইৎ হলে ধাতুর, অন্ত্যস্বরের ও উপধা আকারের বৃদ্ধি হয়। যেমন – √নী + ণক = নায়ক
৫. কৃৎ প্রত্যয়ে “ঘ” ইৎ হলে ধাতুর অন্তস্থিত চ – স্থানে ক এবং জ – স্থানে গ হয়। যেমন – পচ্ + ঘঞ্ = পাক , √ত্যজ্ + ঘঞ্ = ত্যাগ
৬. ধাতুর উত্তর কৃত্য প্রত্যয় , ক্ত প্রত্যয় এবং খলর্থ প্রত্যয় সাধারণ কর্মবাচ্যে ও ভাববাচ্যে হয়ে থাকে।
৭. কৃৎ প্রত্যয় যোগে পদমধ্যে সন্ধি হয়। অর্থাৎ অনেক সময় কৃদন্ত শব্দের গঠন ও সন্ধির রূপ এক।
যেমন :
ক. ভ্ + ত্ = ব্ধ = লব্ধ
খ. হ্ + ত্ = গ্ধ = দুগ্ধ
৮. কৃৎ প্রত্যয় ধাতুর উত্তর যুক্ত হয় বলে বাচ্য সম্পর্ক থাকে।
বাচ্য সম্পর্ক
বাচ্য সম্পর্কের নিরিখে কৃৎ প্রত্যয় দুই ভাগে বিভক্ত। যথা – ক. কারকবাচ্য খ. ভাববাচ্য
ক. কারক বাচ্য :
অ. কর্তৃবাচ্য : √লিখ্ + ণক = লেখক (লিখে যে)
আ. কর্মবাচ্য : √লিখ্ + অনীয় = লেখনীয় (লেখা যায় যা)
ই. করণবাচ্য : √লিখ্ + অনট্ + ঈ = লেখনী (লেখা যায় যার দ্বারা)
ঈ. সম্প্রদান বাচ্য : √দা + অনীয় = দানীয় (দান করা যায় যাকে)
উ. অপাদান বাচ্য : √ভী + আনক = ভয়ানক (ভয় হয় যা থেকে)
ঊ. অধিকরণ বাচ্য : √স্থা + অনট্ = স্থান ( থাকা যায় যেখানে / যাতে )
খ. ভাব বাচ্য : ধাতুর ও কৃদন্ত পদের অর্থ এক হলে ভাববাচ্যের প্রত্যয় হয়।
যেমন – √গম্ + অনট্ = গমন। এখানে √গম্ ধাতুর অর্থ যাওয়া এবং কৃদন্ত “গমন” শব্দের অর্থও যাওয়া।
কৃৎ প্রত্যয়ের শ্রেণিবিভাগ
কৃৎ প্রত্যয়কে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –
১. সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়
২. বাংলা কৃৎ প্রত্যয়
সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়
কৃত্য প্রত্যয়
#সংজ্ঞা : ‘কৃত্য’ শব্দটির অর্থ হল – যা করা উচিত বা যা করার যোগ্য। অর্থাৎ যোগ্য বা উচিত অর্থে যে প্রত্যয়গুলি ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয় , তাদের কৃত্য প্রত্যয় বলে।
সংস্কৃতে তব্য , অনীয় , ণ্যৎ , যৎ , ক্যপ্ – এই পাঁচটি প্রত্যয় হল কৃত্য প্রত্যয়।
যেমন –
ক.√কৃ+তব্য= কর্তব্য
খ.√দৃশ্+অনীয়= দর্শনীয়
গ.√শ্রু+ণ্যৎ= শ্রাব্য
ঘ.√পা+যৎ= পেয়
ঙ.√দৃশ্+ক্যপ্= দৃশ্য
কৃত্য প্রত্যয়ের বৈশিষ্ট্য
১. ঔচিত্য , আদেশ , অনুজ্ঞা , যোগ্যতা ও ভবিষ্যৎ কাল বোঝালে (করার যোগ্য , ভাবার যোগ্য , দেখা উচিত , ভাবা উচিত) কর্মবাচ্যে এবং ভাববাচ্যে ধাতুর উত্তর কৃত্য প্রত্যয় হয়।
২. কর্মবাচ্যে ব্যবহৃত হলে কর্মের বিশেষণ রূপে এবং ভাববাচ্যে ব্যবহৃত হলে সর্বদাই ক্লীব লিঙ্গের একবচনে ব্যবহৃত হয়।
৩. কৃত্য প্রত্যয় সাধিত শব্দ সকল যখন বিশেষণ হয় তখন বিশেষ্যের লিঙ্গ , বিভক্তি ও বচন প্রাপ্ত হয়।
কৃৎ ও কৃত্য প্রত্যয়ের পার্থক্য
ক. কৃৎ প্রত্যয় হল সামগ্রিক ধারণা কিন্তু কৃত্য প্রত্যয় হল আংশিক ধারণা।
খ. কৃত্য প্রত্যয় মাত্রই কৃৎ প্রত্যয় কিন্তু কৃৎ প্রত্যয় মানেই কৃত্য প্রত্যয় নয়।
তব্য ও অনীয় প্রত্যয়
★সাধারণ বৈশিষ্ট্য :
১. ভবিষ্যৎ কালে ঔচিত্য অর্থে কর্মবাচ্যে ও ভাববাচ্যে সমস্ত ধাতুর উত্তর তব্য ও অনীয় প্রত্যয় হয়।
২. √বস্ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে “তব্য” প্রত্যয় যুক্ত হয় – √বস্ + তব্য = বাস্তব্য (অধিবাসী)
৩. তব্য প্রত্যয় কোথাও কোথাও ধাত্র পর ই – কার আগম হয়। আবার কোথাও কোথাও স্বরের গুণ হয়।
যেমন – √পঠ্ + তব্য = পঠিতব্য
৪. অনীয়ের ক্ষেত্রে সহজেই পদ ঠিক করা যায়।
যেমন – √বন্দ্ + অনীয় = বন্দনীয় , √পা + অনীয় = পানীয়
■ কিছু উদাহরণ :
ধাতু তব্য অনীয়
√গম্ গন্তব্য গমনীয়
√দা দাতব্য দানীয়
√শ্রু শ্রোতব্য শ্রবণীয়
√হন্ হন্তব্য হননীয়
√স্মৃ স্মর্তব্য স্মরণীয়
ণ্যৎ প্রত্যয়
সাধারণ বৈশিষ্ট্য :
১. ঋ – কারান্ত ও ব্যঞ্জনান্ত ধাতুর উত্তর কর্মবাচ্যে এবং ভাববাচ্যে “ণ্যৎ” প্রত্যয় যুক্ত হয়।
২. “ণ্যৎ” প্রত্যয়ের “ণ” ও “ৎ” (ত) ইৎ হয় এবং “য” থাকে।
৩. “ণ” ইৎ হলে ধাতুর অন্ত্যস্বর ও উপধা অ- কারের বৃদ্ধি হয়।
৪. উপধাস্থিত অ – ভিন্ন লঘুস্বরের গুণ হয়।
● উদাহরণ – ঋ – কারান্ত ধাতু
ক. √ঋ + ণ্যৎ = ঋ য > আর্ য > আর্য
খ. √কৃ + ণ্যৎ = ক্ ঋ য > ক আর্ য > কার্য
গ. √স্মৃ + ণ্যৎ = স্ম্ ঋ য > স্ম্ আর য > স্মার্য
ব্যঞ্জনান্ত ধাতু –
ক. √ভিদ্ + ণ্যৎ = ভ্ ই দ্ য > ভ্ এ দ্ য > ভেদ্য
খ. √মন্ + ণ্যৎ = ম্ অ ন্ য > ম্ আ ন্ য > মান্য
গ. √পূজ্ + ণ্যৎ = প্ ঊ জ্ য > পূজ্য
অবশ্যই করতে হবে (ওরাবশ্যকে) – এ রকম অর্থে উ – বর্ণান্ত ধাতুর উত্তর ণ্যৎ প্রত্যয় হয়।
যথা – √ ভূ + ণ্যৎ = ভ্ ঊ য > ভ্ ও য > ভ্ অব য > ভ্ আব য্ > ভাব্য
√স্তু + ণ্যৎ = স্তাব্য
আ- √ সু , √যু , √বপ্ , √ রপ্ , √ লপ্ ,√ ত্রপ্ , √ চয্ প্রভৃতি ধাতুর উত্তর ণ্যৎ প্রত্যয় হয়।
যৎ প্রত্যয় :
সাধারণ বৈশিষ্ট্য :
১. কর্মবাচ্য এবং ভাববাচ্যে ধাতুর উত্তর “যৎ” প্রত্যয় হয়।
২. যৎ প্রত্যয় হলে “ৎ” (ত) লোপ পায় এবং “য” থাকে।
৩. “যৎ” প্রত্যয় প্রযুক্ত হলে ধাতুর অন্তস্থিত আ – কার স্থানে “এ” – কার , ই – কার এবং এ / উ – কা স্থানে “ও” – কার হয়।
ক. অজন্ত ধাতুর উত্তর যৎ প্রত্যয় হয়।
যথা – √পা + যৎ = প্ আ য > প্ এ য > পেয়
√শ্রু + যৎ = শ্র উ য > শ্র ও য > শ্র অব য > শ্রব্য
খ. প – বর্গান্ত ধাতু এবং হ্রস্ব অ – কার উপধায় থাকলে ধাতুর উত্তর যৎ প্রত্যয় হয়।
যথা – √শপ্ + যৎ = শপ্য
√ লভ্ + যৎ = লভ্য
গ. √শক্ ও √সহ্ ধাতুর হ্রস্ব অ- কার উপধায় থাকলে এদের উত্তর যৎ প্রত্যয় হয়।
যথা – √শক্ + যৎ = শক্য
√ সহ্ + যৎ = সহ্য
ঘ. উপসর্গযুক্ত না থাকলে √গদ্ , √মদ্ √ চর্ , √যম্ ধাতুর উত্তর যৎ প্রত্যয় হয়।
যথা – √গদ্ + যৎ = গদ্য
√মদ্ + যৎ = মদ্য
√ চর্ + যৎ = চর্য
কিন্তু উপসর্গযুক্ত হলে ণ্যৎ প্রত্যয় হবে।
যথা – প্র -√মদ্ + ণ্যৎ = প্রমাদ্য
ক্যপ্ প্রত্যয় :
■ সাধারণ বৈশিষ্ট্য :
১. ক্যপ্ প্রত্যয় কর্মবাচ্য এবং ভাববাচ্যে প্রযুক্ত হয়।
২. ক্যপ্ প্রত্যয় প্রযুক্ত হলে ক্ এবং প্ ইৎ (লোপ) হয় এবং “য” থাকে।
৩. প ইৎ হলে হ্রস্ব-স্বরান্ত প্রকৃতির উত্তর ত – কার আগম হয়। যথা – √ভৃ + ক্যপ্ > ভৃ ত্ য > ভৃত্য
৪. √কৃ এবং √ভৃ ধাতুতে বিকল্পে ক্যপ্ ও ণ্যৎ প্রত্যয় প্রযুক্ত হয়। যথা – √ ভৃ + ক্যপ্ = ভৃত্য কিন্তু √ভৃ + ণ্যৎ = ভার্যা (স্ত্রী)
ক. উপসর্গ ছাড়া সুবন্ত উপপদ পূর্বে থাকলে √হন্ ধাতুর উত্তর ভাববাচ্যে ক্যপ্ হয় এবং ধাতুর অন্ত্যবর্ণের “ত” আদেশ হয়।
যথা – ব্রহ্ম – √হন্ + ক্যপ্ = ব্রহ্ম হ ত য > ব্রহ্মহত্যা
অনুরূপ ভাবে – পিতৃহত্যা , গোহত্যা , ভ্রাতৃহত্যা ইত্যাদি।
খ. √ব্রজ্ , √ যজ্ , √ বিদ্ , √ শী , √ মন্ ধাতুর উত্তর ভাববাচ্যে ক্যপ্ প্রত্যয় হয় এবং স্ত্রীত্ব হয়।
যথা – √বিদ্ + ক্যপ্ = বিদ্যা , √শী + ক্যপ্ = শয্যা
গ. √ই , √স্তু , √শাস্ , √বৃ , √দৃ , √জুষ – ধাতুর উত্তর ক্যপ্ হয়। যথা – √ই + ক্যপ্ = ইত্য , √দৃ + ক্যপ্ = দৃত্য , √বৃ + ক্যপ্ = বৃত্য ইত্যাদি।
ক্ত প্রত্যয়
● বৈশিষ্ট্য :
১. ক্ত প্রত্যয়কে #নিষ্ঠা প্রত্যয় বলা হয়।
২. অতীতকালে কর্মবাচ্যে ও ভাববাচ্যে সাধারণ ধাতুর উত্তর ক্ত প্রত্যয় হয়।
৩. ক্ত প্রত্যয়ান্ত শব্দের “ক” ইৎ হয় এবং “ত” থাকে। এই জন্য ক্ত প্রত্যয়কে “ত” প্রত্যয়ও বলা হয়।
৪. বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে কর্তৃবাচ্যে ও বর্তমান কালেও ক্ত প্রত্যয় হয়।
৫. সাধারণত অকর্মক ধাতুর উত্তর ভাববাচ্যে “ক্ত” প্রত্যয় হয়।
৬. অনেক সময় ক্ত প্রত্যয়ের “ত” এর স্থানে “দ” / “ন” হয়।
বিশেষ কিছু পরিবর্তন
১. র-কার এবং দ-কারের পরবর্তী ক্ত প্রত্যয় স্থিত ত > ন হয় এবং দ > ন হয়।
যেমন – ক. √জৃ্ + ক্ত = জীর্ণ (এছাড়া – শীর্ণ , কীর্ণ , দীর্ণ , তীর্ণ ইত্যাদি)
খ. √ভিদ্ + ক্ত = ভিন্ন (এছাড়া – ছিন্ন , সন্ন , ছন্ন ইত্যাদি)
২. √ক্ষী ধাতুর ঈ-কারের পর নিষ্ঠা প্রত্যয় থাকলে ত > ন হয়।
যেমন – √ক্ষী + ক্ত = ক্ষীণ
৩. √শুষ্ ধাতুর পর নিষ্ঠা প্রত্যয় হলে ত > ক হয়।
যেমন – √শুষ্ + ক্ত = শুষ্ক
৪. √পচ্ ধাতুর পর নিষ্ঠা প্রত্যয় হলে ত > ব হয়।
যেমন – √পচ্ + ক্ত = পক্ব
৫. √ধা ধাতুর পর নিষ্ঠা প্রত্যয় হলে ধা > হি হয়।
যেমন – √ধা + ক্ত = হিত
৬. √অদ্ ধাতুর স্থানে জদ্ধি আদেশ হয়।
যেমন – অদ্ + ক্ত = জগ্ধ
৭. বাত – ভিন্ন শব্দ পরবর্তী নির – √বা ধাতুর পর ক্ত প্রত্যয়ের ত > ন হয়।
যেমন – নির্ – √বা + ক্ত = নিবার্ণ (ষ-ত্ব বিধান লক্ষণীয়)
৮. অনেক সময় ক্ত প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুর উত্তর ই- কারের আগম হয়।
যেমন – √নন্দ্ + ক্ত = নন্দিত , √বিদ্ + ক্ত = বিদিত , √বঞ্চ্ + ক্ত = বঞ্চিত ইত্যাদি।
ক্ত প্রত্যয় যোগে স্বাভাবিক কিছু উদাহরণ
১.√ জ্ঞা + ক্ত = জ্ঞাত
২.√ প্রী + ক্ত = প্রীত
৩.√ চ্যু + ক্ত = চ্যুত
৪.√ শ্রু + ক্ত = শ্রুত
৫.√ খ্যা + ক্ত = খ্যাত
৬.√ হৃ + ক্ত =হৃত
শতৃ , শানচ্ প্রত্যয়
● বৈশিষ্ট্য :
১. শতৃ ও শানচ্ প্রত্যয়কে পাণিনি “সৎ” বলেছেন।
২. ঘটমানতা ও কোনো ক্রিয়ার বা কাজের চলমানতা।বোঝাতে শতৃ , শানচ্ প্রত্যয় হয়।
৩. করতে করতে , বলতে বলতে – এই ধরণের অসমাপিকা ক্রিয়ায় অর্থাৎ দুইবার “ইতে” থাকলে ধাতুর উত্তর শতৃ , শানচ্ প্রত্যয় হয়।
৪. একবার “ইতে” এবং পরের ক্রিয়াটি দেখা বা শোনা বাচক হলেও ধাতুর উত্তর শতৃ , শানচ্ প্রত্যয় হয়।
৫. শতৃ-এ শ এবং ঋ ইৎ হয় অর্থাৎ “অৎ” থাকে।
৬. শানচ্- এ শ এবং চ্ ইৎ হয় অর্থাৎ আন থাকে। এই “আন” কখনো মান বা ঈন হয়।
ব্যবহারিক স্থান
১. কর্তৃবাচ্যে বর্তমান কালে পরস্মৈপদী ধাতুর উত্তর শতৃ প্রত্যয় এবং আত্মনেপদী ধাতুর উত্তর কর্তৃ ও কর্ম বাচ্যে শানচ্ হয়।
যেমন – ক. √গৈ + শতৃ = গায়ৎ
খ. √জীব্ + শতৃ = জীবৎ
গ. √জ্বল্ + শতৃ = জ্বলৎ
ঘ. √অস্ + শতৃ = সৎ
ঙ. √জন্ + শানচ্ = জায়মান
২. শানচ্ প্রত্যয়ের “আন” পরে থাকলে অ-কারান্ত ভ্বাদি , দিবাদি ও তুদাদি ধাতুর পর মুক্ (ম) আগম হয় এবং আন > মান হয়ে যায়।
যেমন – √সেব্ + শানচ্ = সেবমান , √মৃ + শানচ্ = ম্রিয়মাণ
কিন্তু অ – বাদে অন্য স্বর থাকলে আন > মান হয় না , আন-ই থাকে।
যেমন – √শী + শানচ্ = শয়ান
৩. অদাদিগণীয় √বিদ্ ধাতুর পর শানচ্ প্রত্যয়ের আ > ঈ হয় অর্থাৎ আন > ঈন হয়।
যেমন – √আস্ + শানচ্ = আসীন
৪. শানচ্ প্রত্যয় নিষ্পন্ন শব্দটি কর্মবাচ্যে প্রযুক্ত হলে তা কর্মের বিশেষণ হবে।
যেমন – √দৃশ্ + শানচ্ = দৃশ্যমান , √সেব্ + শানচ্ = সেব্যমান
আত্মনেপদ ও পরস্মৈপদ
ক্রিয়ার মূল বা প্রকৃতিকে ধাতু বলে। এক-এক প্রকার ধাতুর দ্বারা এক-এক প্রকার ক্রিয়া বোঝায়। সংস্কৃত ভাষায় ধাতুগুলির মধ্যে কতকগুলি পরস্মৈপদী , কতকগুলি আত্মনেপদী এবং কতকগুলি উভয়পদী ধাতু আছে। এই ধাতুগুলির সঙ্গে ধাতু বিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে।
আত্মনেপদী ধাতু
যে সকল ধাতু বা ক্রিয়ার ফল কর্তা নিজে লাভ করে তারা আত্মনেপদী। অর্থাৎ কর্তার নিজের জন্য যে ক্রিয়া , তার বাচক পদকে আত্মনেপদী (আত্মনে = নিজের জন্য) বলে। যথা — √জন্ , √কম্প্ , √লভ্ ,√ সেব্ ইত্যাদি।
অন্য ভাবে বলা যায় – যে সব ধাতুপাঠের অনুদাত্ত স্বর ইৎ (অর্থাৎ লোপ) পায় অথবা যে সব ধাতুর ঙ্ ইৎ হয় , সেগুলি আত্মনেপদী ধাতু। যেমন – আস্তে । “আস উপবেশনে ” – এই হল ধাতুপাঠ। এখানে “আস” পদের স – এর “অ” অনুদাত্ত এবং তা ইৎ। সুতরাং এটি আত্মনেপদী।
আত্মনেপদী ধাতুর উত্তর তে , আতে , অন্তে , সে , আথে , ধে , এ , বহে , মহে , অন্ত , থাস , আথাম , ধম , ই , বহি , মহি প্রভৃতি বিভক্তি যুক্ত হয়।
কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্য ধাতুর উত্তর আত্মনেপদী হয়।
পরস্মৈপদী ধাতু
যে সকল ধাতু বা ক্রিয়ার ফল অন্যে পায় , সেই সকল ধাতু পরস্মৈপদী। অর্থাৎ কর্তার নিজের জন্য নয় , অপর কোনো কিছুর জন্য ক্রিয়া , সেই ক্রিয়াবাচক পদকে পরস্মৈপদী (পরস্মৈ = পরার্থে) বলে। যথা — √দৃশ্ , √গম্ , √ভূ ইত্যাদি।
●অন্যভাবে — যে সব ধাতুর ধাতুপাঠে অনুদাত্ত স্বর নেই অথবা ঙ্ ইৎ যায় না – সেগুলি পরস্মৈপদ।
পরস্মৈপদী ধাতুর উত্তর তি , তস , অন্তি , সি , থস , থ , মি , বস , মস , তু , তাম , ত , অন , স , তম , অম , ব , ম প্রভৃতি ক্রিয়াবিভক্তি বা তিঙ্ বিভক্তি যুক্ত হয়। – এগুলি সংস্কৃত ব্যাকরণের বিষয়।
◆ কর্তৃবাচ্য ধাতুর উত্তর পরস্মৈপদী হয়।
উভয়পদী : যে সমস্ত ধাতুর ক্ষেত্রে কর্তা নিজে বা অন্যে একই সঙ্গে ক্রিয়ার ফল লাভ করে , সেই সমস্ত ধাতু উভয়পদী।
যেমন – √কৃ , √দা , √মৃ ইত্যাদি।
অ – প্রত্যয়
সংস্কৃতে একটি বহুল ব্যবহৃত প্রত্যয় হল #অ প্রত্যয়। ধাতুর পরিবর্তনের দিকে লক্ষ রেখে পূর্ব পদের সঙ্গে যোগ তথা সাধিত পদের অর্থ বিচার করে এই প্রত্যয়ের কার্য অবস্থা গতিকে বিভিন্ন হয় (বিভিন্ন অনুবন্ধের যোগে এই ভিন্নতা প্রদর্শিত হয়)। এই #অ প্রত্যয়ের বিভিন্ন রূপ হয় , তারই কয়েকটি সংক্ষেপে তুলে ধরা হল। (এখানে বলি রাখি আধুনিক মতে এত ভাগের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া না। তবে আমরা বিস্তারিত ভাবেই গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করবো।)
অ = অ
১. ইচ্ছা করা অর্থে সনন্ত (সন্ প্রত্যয় যুক্ত) ধাতুর উত্তর ভাববাচ্যে অ প্রত্যয় হয়। এই অ প্রত্যয় নিষ্পন্ন শব্দ স্ত্রী লিঙ্গের হয়।
যেমন –
ক.পিপাসা – √পা + সন্ = পিপাস্ + অ = পিপাস + আ(স্ত্রী লিঙ্গ) = পিপাসা
খ.জিজ্ঞাসা – √জ্ঞা + সন্ = জিজ্ঞাস্ + অ = জিজ্ঞাস + আ = জিজ্ঞাসা
গ.চিকিৎসা
ঘ.জিগীষা
ঙ.চিকীর্ষা ইত্যাদি।
২. কয়েকটি নামধাতুর উত্তর ও ভাববাচ্যে এই প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক. কণ্ডূয়া – কণ্ডূয় + অ + আ
খ. অশনায়া – অশনায় + অ +আ, ইত্যাদি।
★ বলা বাহুল্য এই শব্দগুলোর বাংলায় তেমন ব্যবহার নেই।
৩. গুরুস্বর বিশিষ্ট ব্যঞ্জনান্ত ধাতুর উত্তর ভাববাচ্যে #অ প্রত্যয় যুক্ত হয়।
যেমন –
ক. পরীক্ষা – পরি – √ঈক্ষ্ + অ + আ
খ.ভিক্ষা – √ভিক্ষ্ + অ +আ
গ.সেবা – √সেব্ + অ + আ
ঘ.খেলা – √খেল্ + অ + আ
অ = অঙ্
১. চিন্ত্ , পূজ্ , কথ্ , চর্চ্ , স্পৃহ্ , পীড়্ , শুভ্ , ভীষ্ , প্রভৃতি ধাতুর উত্তর অ = অঙ্ প্রত্যয় ভাববাচ্যে প্রযুক্ত হয়। এই “অ” প্রত্যয়জাত শব্দও স্ত্রী লিঙ্গবাচক হয়।
যেমন –
ক.চিন্তা- √চিন্ত্ + অ (অঙ্) + আ
খ.পূজা- √পূজ্ + অ + আ
গ.কথা √কথ্ + অ + আ
ঘ.চর্চা √চর্চ্ + অ + আ
ঙ.স্পৃহা √স্পৃহ্ + অ + আ
চ.পীড়া √পীড়্ + অ + আ
ছ.শুভা √শুভ্ + অ + আ
জ.ভীষা √ভীষ্ + অ (অঙ্) +আ
২. উপসর্গের পরবর্তী আ- কারান্ত ধাতুর উত্তর ভাববাচ্যে ও কর্তৃবাচ্যে অঙ্ = অ প্রত্যয় যুক্ত হয়।
যেমন –
ক. সুধা : সু- √ধৈ/ধে + অ (অঙ্) + আ
খ. সন্ধ্যা : সম্- √ধা + অঙ্ (অ) + আ
গ. প্রতিভা : প্রতি – √ভা + অ
ঘ. অনুজ্ঞা : অনু – √জ্ঞা + অ
অ = অচ্
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ” ব্যাকরণ কৌমুদী ” থেকে জানতে পারি সংস্কৃত অল্ প্রত্যয়ের দুটি রূপ। যথা – ¡) অচ্ এবং ¡¡) অপ্
ভাববাচ্যে এবং কর্তৃ ভিন্ন অন্যান্য কারক বাচ্যেই এই অচ্ এবং অপ্ প্রত্যয়ের ব্যবহার।
পাণিনি ব্যাকরণের মতে , “ই” কারান্ত এবং “ঈ” কারান্ত ধাতুর উত্তর অ = “অচ্” হয়।
যেমন-
ক.জয় : √জি + অচ্ (অজয়,বিজয়,সুজয়,পরাজয় ইত্যাদি। ধাতুর পূর্বে উপসর্গ যোগ করে।)
খ.ভয় : √ভী + অচ্ (অ)
গ.শ্রয় : √শি + অচ্ (অ)
ঘ.স্ময় : √স্মি + অচ্ (বিস্ময়)
● তবে সংস্কৃতে আর একটি #অচ্ প্রত্যয়ের উল্লেখ পাই। কর্তৃবাচ্যে যার প্রয়োগ। যথা —-
১. পচ্ প্রভৃতি কয়েকটি ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = অচ্ হয়।
যেমন –
ক.পচ :√পচ্ + অচ্(অ)
খ.চর :√চর্ + অচ্(অনুচর)
গ.দেব :√দিব্ + অচ্
ঘ.সর্প :√সৃপ্ + অচ্
২. কর্মবাচক পদের পরবর্তী “হৃ” ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = “অচ্” হয়।
যেমন —
ক.দুঃখহর : দুঃখ – √হৃ + অচ্ (অ)
খ.ক্লেশহর : ক্লেশ – √হৃ + অচ্ (অ)
গ.অংশহর : অংশ – √হৃ + অচ্ (অ)
ঘ.রোগহর : রোগ – √হৃ + অচ্ (অ)
৩. কর্মবাচক পদের পরবর্তী অর্হ্ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = অচ্ হয়।
যেমন –
ক. নিন্দার্হ : নিন্দা – √অর্হ্ + অচ্ (অ)
খ. পূজার্হ : পূজা – √অর্হ্ + অচ্ (অ)
গ. প্রশংসার্হ : প্রশংসা – √অর্হ্ + অচ্ (অ)
ঘ.শ্রদ্ধার্হ : শ্রদ্ধা -√অর্হ্ + অচ্
৪. অধিকরণ বাচক পদের পরবর্তী শী ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = অচ্ হয়।
যেমন –
ক.শয্যাশয় : শয্যা – √শী + অচ্ (অ)
খ.ভূমিশয় : ভূমি – √শী + অচ্ (অ)
গ.শিলাশয় : শিলা – √শী + অচ্ (অ)
ঘ.গুহাশয় : গুহা – √শী + অচ্ (অ)
৫. কর্ম ও অধিকরণবাচক পদের পরবর্তী ধৃ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = অচ্ প্রত্যয় যুক্ত হয়।
যেমন –
১.অভ্রধর :অভ্র – √ধৃ + অচ্
২.গঙ্গাধর : গঙ্গা – √ধৃ + অচ্
৩.বংশধর :বংশ – √ধৃ + অচ্
৪.ভূধর : ভূ – √ধৃ + অচ্
অ = অপ্
পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে #অপ্ প্রত্যয়টি সংস্কৃত #অল্ প্রত্যয়ের অংশ।
১. সাধারণত ঋ- কারান্ত , বিশেষত দীর্ঘ ঋ(টাইপ করে দীর্ঘ ঋ আনতে পারলাম না) এবং উ/ঊ- কারান্ত ধাতুর উত্তর কর্তৃ ভিন্ন অন্যান্য কারকবাচ্যে অ = অপ্ প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক. কর : √কৃ + অপ্ (সংকর , আকর – উপসর্গ যোগে)
খ. ভব : √ভূ + অপ্ (অনুভব , পরাভব – উপসর্গ যোগে)
গ. অবয়ব : অব্ – √যু + অপ্ (অ)
ঘ. বিস্তর : বি – √স্তৃ + অপ্ (অ)
২. গ্রহ্ , বৃ , দৃ , নির্ , চি ও গম ধাতুর উত্তর #অ = অপ্ প্রত্যয় যুক্ত হয়।
যেমন –
ক. গ্রহ (স্বীকার প্রাপ্তি অর্থে) : √গ্রহ্ + অপ্ (অ)
কিন্তু – গ্রহ (গ্রাহক অর্থে) : গ্রহ্ + অচ্ (অ)
৩. মদ্ ও হন্ ধাতুর উত্তর অ = অপ্ প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক. বধ : হন্ + অপ্ (হন্ স্থানে বধ্ অর্থাৎ আদেশ হয়েছে)
খ.মদ : √মদ্ + অপ্(অ)
অ = ট
১. দিবা প্রভৃতি কর্মবাচক পদের পরবর্তী #কৃ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = ট প্রত্যয় যুক্ত হয়। “ট্” ইৎ হয় এবং #অ থাকে।
যেমন –
ক. দিবাকর :দিবা- √কৃ + ট
খ. প্রভাকর :প্রভা- √কৃ + ট
গ. ভাস্কর :ভাস্- √কৃ + ট
ঘ. লিপিকর :লিপি- √কৃ + ট
২. হেতু ও অনুকূল বোঝালে কর্মবাচক পদের পরবর্তী #কৃ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে ট প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক.শোককর :শোক -√কৃ +ট
খ.ক্লেশকর : ক্লেশ -√কৃ +ট
গ.মঙ্গলকর : মঙ্গল -√কৃ +ট
ঘ.হিতকর : হিত -√কৃ +ট
৩. পুরঃ , অগ্র , অগ্রে , অগ্রত – এই শব্দের পরবর্তী √সৃ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে ট প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক. পুরসর :পুরঃ -√সর্ + ট
খ. অগ্রসর :অগ্র -√সর্ + ট
৪. অধিকরণবাচক পদের পরবর্তী √চর্ – ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে ট প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক.জলচর: জল-√চর্ + ট
খ.স্থলচর: স্থল-√চর্ + ট
গ.ভূচর: ভূ-√চর্ + ট
ঘ.নিশাচর: নিশা-√চর্ + ট
৫. মনুষ্য ভিন্ন কর্মবাচক পদের পরবর্তী √হন্ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে ট প্রত্যয় হয় এবং “হন্” স্থানে “ঘ্ন” হয়।
যেমন –
ক.পাপঘ্ন :পাপ – √হন্ + ট
খ.রসঘ্ন :রস – √হন্ + ট
গ.তমোঘ্ন :তমো – √হন্ + ট
অ = অণ্
কর্মবাচক পদের পরবর্তী ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = অণ্ প্রত্যয় হয়। “ণ” ইৎ হয় এবং “অ” থাকে।
যেমন –
ক.অন্ধকার :অন্ধ – √কৃ + অণ্
খ.কুম্ভকার :কুম্ভ – √কৃ + অণ্
গ.তন্তুবায় :তন্তু – √কৃ + অণ্
ঘ.দ্বারপাল :দ্বার – √কৃ + অণ্
অ = ক
১. কর্ম , অধিকরণ , করণবাচক পদের পরবর্তী আ- কারান্ত ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = ক প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক.গৃহস্থ: গৃহ – √স্থা + ক (গৃহ অধিকরণবাচক)
খ.অন্নদ: অন্ন – √দা + ক (অন্ন কর্মবাচক)
গ.পাদপ: পাদ – √পা + ক (পাদ করণবাচক)
ঘ.রসজ্ঞ: রস – √জ্ঞা + ক (রস কর্মবাচক)
উপরের ধাতুগুলি সবই আ-কারান্ত।
২. “ক” প্রত্যয় মূলত আধার অর্থে ব্যবহৃত হয়।
যেমন –
ক.বারিদ : বারি – √দা + ক
খ.জলদ : জল – √দা + ক
৩. কোনো ব্যঞ্জনান্ত ধাতুর স্বরধ্বনি যদি ই/উ/ঋ হয় বা ধাতুর উপধা বর্ণ ই/উ/ঋ – এর একটি হয় , তবে কর্তৃবাচ্যে অ = ক প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক. মিল : √মিল্ + ক(অ)
খ. লিখ : √লিখ্ + ক
গ. বুধ : √বুধ্ + ক
ঘ. বিদ : √বিদ্ + ক
৪. উপসর্গযুক্ত জ্ঞা , প্রী , কৃ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = ক প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক.√জ্ঞা + ক(অ) = জ্ঞ (অজ্ঞ , অভিজ্ঞ , প্রাজ্ঞ , বিজ্ঞ ইত্যাদি)
খ.√প্রী + ক(অ) = প্রিয় (অপ্রিয় , সুপ্রিয় ইত্যাদি)
৫. মনুষ্যবাচক কর্তা হলে কর্মবাচক পদের পরবর্তী √হন্ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = ক প্রত্যয় হয়। এখানে লক্ষণীয় – √হন্ স্থানে #ঘ্ন হয়।
যেমন –
ক.কৃতঘ্ন :কৃত- √হন্ + ক
খ.শত্রুঘ্ন :শত্রু- √হন্ + ক
গ.গোঘ্ন :গাং- √হন্ + ক
ঘ.মিত্রঘ্ন :মিত্র- √হন্ + ক
অ = খল্
১. সু , দু (দুর্ , দুষ্ ) উপসর্গের পর এবং ঈষৎ শব্দের পরবর্তী ধাতুর উত্তর কর্মবাচ্যে ও ভাববাচ্যে অ = খল্ প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক. সুকর : সু – √ কৃ + খল্ (অ)
খ. সুলভ : সু – √ লভ্ + খল্(অ)
গ. দুষ্কর : দুষ্ – √ কৃ + খল্(অ)
ঘ. দুস্ত্যজ : দুষ্ – √ ত্যজ্ + খল্(অ)
২. সু , দু (সু , দুষ্) উপসর্গ পরবর্তী শাস্ , যুধ্ , দৃশ্ , ধৃষ্ , মৃষ্ প্রভৃতি ধাতুর উত্তর কর্মবাচ্যে অ = খল্ প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক. সুশাস : সু – √শাস্ + খল্
খ. সুদর্শ : সু – √দৃশ্ + খল্
গ. দুঃশাস : দুষ্ – √শাস্ + খল্
কিন্তু দুঃশাসন – দুষ্ – √শাস্ + অন্
অ = খচ্
কর্মবাচক পদের পরবর্তী √বদ্ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = খচ্ প্রত্যয় হয়।
১. প্রিয় ও বশ্ শব্দের পরবর্তী √বদ্ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = খচ্ প্রত্যয় যুক্ত হয়।
যেমন –
ক. প্রিয়ংবদা : প্রিয়ম্ – √বদ্ + খচ্ + আ(স্ত্রী লিঙ্গে)
খ.বংশবদ : বংশ – √বদ্ + খচ্
২. সংজ্ঞা বোঝালে “বিশ্ব” শব্দের পরবর্তী ভূ , পতি , স্বয়ং শব্দের পরবর্তী “বৃ” এবং “বসু” শব্দের পরবর্তী √ধৃ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে খচ্ প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক.বিশ্বম্ভর :বিশ্ব-√ভৃ+খচ্
খ.স্বয়ংবর :স্বয়ং-√বৃ+খচ্
গ.বসুন্ধর :বসু-√ধৃ+খচ্
ঘ.যুগন্ধর :যুগ-√ধৃ+খচ্
৩. ভয় , প্রিয় , ক্ষেম প্রভৃতি শব্দের উত্তর শব্দের পরবর্তী √কৃ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে খচ্ =অ প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক.ভয়ংকর :ভয়ম্-√কৃ +খচ্
খ.প্রিয়ঙ্কর :প্রিয়ম্-√কৃ +খচ্
গ.ক্ষেমকর :ক্ষেমম্-√কৃ +খচ্
৪. কর্মবাচক পদের পরবর্তী √গম্ ধাতুর উত্তর “যে করে” অর্থে কর্তৃবাচ্যে অ = খচ্ হয়।
যেমন –
ক.পতঙ্গ: পত- √গম্+ খচ্
খ.তুরঙ্গ: ত্বরা- √গম্+ খচ্
গ.বিহঙ্গ: বিহায়স্- √গম্+ খচ্
ঘ.ভুজঙ্গ: ভুজ- √গম্+ খচ্
অ = খশ্
কর্মবাচক পদ প্রথমে থাকলে কতকগুলি ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে “যে করে” অর্থে কর্তৃবাচ্যে অ = খশ্ প্রত্যয় হয়।
১. বিধু ও অরুস্ শব্দের পরবর্তী √তুদ ধাতুর উত্তর এবং পর ও ললাট শব্দের পরবর্তী √তপ্ ধাতুর উত্তর অ =খশ্ প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক.অরুন্তুদ :অরুস্- √তুদ্ +খশ্
খ.বিধুন্তুদ :বিধু- √তুদ্ +খশ্
গ.পরন্তুপ :পর- √তপ্ +খশ্
ঘ.ললাটন্তপ :ললাট- √তপ্ +খশ্
২. অসূর্য ও উগ্র শব্দের পরবর্তী √দৃশ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = খশ্ প্রত্যয় হয় এবং √দৃশ ধাতুর স্থানে আদেশ হয়ে √পশ্ ধাতু হয়।
ক.অসূর্যম্পশ্য : অসূর্য- √দৃশ্ + খশ্
খ.উগ্রম্পশ্য : উগ্র- √দৃশ্ + খশ্
৩. আত্ম/মনন অর্থে কর্মবাচক পদের পরবর্তী √মন্ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = খশ্ প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক. পণ্ডিতম্মন্য : পণ্ডিত- √মন্ + খশ্
খ. ধন্যম্মন্য : ধন্য- √মন্ + খশ্
গ. সুভগম্মন্য : সুভগ- √মন্ + খশ্
ঘ. কৃতার্থম্মন্য : কৃতার্থ- √মন্ + খশ্
৪. অভ্র শব্দের পরবর্তী √লিহ্ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = খশ্ প্রত্যয় হয়।
যেমন – অভ্রংলিহ : অভ্র- √লিহ্ + খশ্
অ = ড
১. উপসর্গ বা সুবন্তপদের পরবর্তী √জন্ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = ড প্রত্যয় হয়। ধাতুর “অ” এবং “ন্” লোপ হয়।
যেমন –
ক. সরোজ : সরস্- √জন্ + ড
খ. পঙ্কজ : পঙ্ক- √জন্ + ড
গ. প্রজা : প্র- √জন্ + ড
ঘ. অব্জ : অপ্- √জন্ + ড
২. সুবন্তপদের পরবর্তী √গম্ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = ড প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক.অন্তগ :অন্ত- √গম্+ড
খ.সর্বগ :সর্ব- √গম্+ড
গ.খগ :খ- √গম্+ড
ঘ.দূরগ :দূর- √গম্+ড
৩. পত্ , ভুজ্ , ত্বরা , উরস্ ও বিহায়স্ শব্দের পরবর্তী √গম্ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = ড প্রত্যয় হয়।
ক.তুরগ : ত্বরা- √গম্ + ড
খ.বিহগ : বিহায়স্- √গম্ + ড
গ.পতগ : পত্- √গম্ + ড
ঘ.উরগ : উরস্- √গম্ + ড
৪. ক্লেশ ও তমস্ শব্দের পরবর্তী অপ্ পূর্বক √হন্ ধাতুর উত্তর কর্তৃবাচ্যে অ = ড প্রত্যয় হয়।
যেমন –
ক. ক্লেশাপহ : ক্লেশ – হন্+ড
খ. দুঃখাপহ : দুঃখ – হন্+ড
গ. ভয়াপহ : ভয় – হন্+ড
ঘ. তমোপহ : তমস্ – হন্+ড
গ্রন্থঋণ :
১. ব্যাকরণ কৌমুদী – ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
২.পানিণীয় শব্দশাস্ত্র
৩.পানিণীয়ম্ – সত্য নারায়ণ চক্রবর্তী
৪.প্রবেশিকা সংস্কৃত ব্যাকরণ ও রচনা – শ্রীদেবকুমার চক্রবর্তী
৫.বাংলা প্রত্যয় প্রকরণ ও পদ্ধতি – শিশির কুমার আচার্য
৬.উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ – বামনদেব চক্রবর্তী
৭.বাঙ্গালা ব্যাকরণ – মুহম্মদ শদীদুল্লাহ
৮.সরল ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ – সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
৯.ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ – সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
১০.বাংলা ভাষার ব্যাকরণ – যোগেশচন্দ্র রায়
১১.আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ – জগদীশচন্দ্র ঘোষ
১২.বঙ্গীয় শব্দকোষ (অভিধান)- হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিশেষ ঋণস্বীকার: গৌর চন্দ্র ঘোষ মহাশয়।
আলোচনা: প্রণব মণ্ডল
সম্পাদনা ও সংযোজন: অনন্য পাঠক
2 thoughts on “কৃৎ প্রত্যয়ের বিস্তারিত আলোচনা | প্রকৃতি প্রত্যয়”
Pingback: সংখ্যা বর্ণ কী | বাংলা সংখ্যা বর্ণ কতগুলি | সংখ্যা বর্ণ কয়টি ও কি কি - Ananyabangla.com
Pingback: বিভক্তি ও নির্দেশকের পার্থক্য | বিভক্তি ও নির্দেশকের সাদৃশ্য - Ananyabangla.com