ধাতুর সংজ্ঞা ও শ্রেণিবিভাগ
ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ নির্ধারণ করার আগে আমরা এর ধারণাটি একটু স্পষ্ট করে নেবো। আমরা জানি বাক্যের মধ্যে শব্দ ও ধাতুগুলিই রূপান্তরিত হয়ে পদ রূপে ব্যবহৃত হয়। শব্দ ও পদ বিষয়ে আলোচনা করার সময় আমরা এই বিষয়টি উল্লেখ করেছি। কিন্তু তখন শব্দ সম্পর্কে আলোচনা করলেও ধাতু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি নি। তখন শুধু বলেছি ধাতু হল “ক্রিয়াপদের মূল ও অপরিবর্তনশীল অংশ।”
এখন আমরা ধাতুর অপরিবর্তনশীলতা বলতে আসলে কী বোঝায় সেটি প্রথমে বুঝে নেবো নতুবা সংজ্ঞাটি স্পষ্ট হবে না।
আমরা জানি, ধাতু থেকে ক্রিয়াপদের জন্ম হয়। উদাহরণ হিসেবে আমরা একটি কাজ নিচ্ছি– খেলা। খেলা কাজটি ধরে কয়েকটি ক্রিয়া পদ গঠন করে দেখি:
খেলি, খেলিতেছি, খেলো, খেলেন, খেলিব, খেলে, খেলিয়াছিল, খেলিতে থাকিব, খেলিয়া, খেলিতে** ইত্যাদি।
ধাতু সম্পর্কে ভালো ভাবে জানর জন্য নিচের ভিডিওটি অবশ্যই দেখুন। তার পর নিচের আলোচনাটি পড়ুন।
[**ধাতু ও ক্রিয়াপদ এবং ক্রিয়ার কাল আলোচনার সময় চলিত ভাষায় উদাহরণ দিতে নেই, তাতে ধারণা তৈরিতে বড় বিপত্তি হয়। কারণ চলিতে ক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত রূপটি দেখে তার প্রকৃত গঠন বোঝা যায় না। বিশেষ করে বাচ্চাদের শেখানোর অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ক্রিয়াপদ সংক্রান্ত যে কোনো বিষয় শেখানোর জন্য ক্রিয়ার সাধু রূপই ব্যবহার করা উচিত।]
ধাতু কাকে বলে?
উপরের উদাহরণগুলি ভাঙলে দেখা যাবে প্রত্যেকটির মধ্যে একটিই অংশ আছে যেটি বদলায়নি, তা হল ‘খেল্’। এটি বদলাতে পারে, কিন্তু বদলালে ক্রিয়ার কাজটিই বদলে যাবে। সুতরাং, একটি কাজের ক্ষেত্রে সমস্ত ক্রিয়ার একটি মূল ও অপরিবর্তনীয় অংশ থাকে। ওই অংশটিই ধাতু।
ধাতুর এই সংজ্ঞাটি ছোটোদের জন্য আদর্শ এবং এটির মধ্যে কোনো ভুল নেই।
তাহলে, ধাতু কাকে বলে? — এই প্রশ্নের জবাবে আমরা একটু বিস্তারিত করে বলতে পারি :
যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি কাজ করার বা হওয়ার ভাব প্রকাশ করে এবং উপযুক্ত বিভক্তি প্রত্যয় ইত্যাদি গ্রহণ ক’রে বাক্যের মধ্যে ক্রিয়াপদে পরিণত হয়, তাকে ধাতু বলে।
যে কোনো ক্রিয়া থেকে তার পরিবর্তনশীল অংশগুলো ঝেড়ে ফেলে দিলেই ধাতুটি পাওয়া যাবে। এই পরিবর্তনশীল অংশগুলি সম্পর্কে পরবর্তী অধ্যায়ে আলোচনা করব।
কয়েকটি ধাতুর উদাহরণ : খা, দেখ্, চল্, হ, পা, যা, বাঁচ্, হাঁট্, ঘুমা, বলা(বলানো অর্থে) ইত্যাদি।
ধাতু চিহ্ন
ধাতু বোঝানোর জন্য ব্যাকরণে একটি ধাতু চিহ্ন আছে : (√ ) এই রুট চিহ্নটি ধাতুর আগে বসিয়ে ধাতু বোঝানো হয়। তাই আমরা ‘√দেখ্’ লেখা দেখলে পড়ব ‘দেখ্ ধাতু’। কোনো ধাতুকে আলাদা করে লেখার সময় এই চিহ্নটি দেওয়া উচিত। তবে কেউ কেউ এই রুট চিহ্নের মাথায় আর একটি সরলরেখা দিয়ে দেন, যা ঠিক নয়। আর একটি কথা এই প্রসঙ্গে বলা দরকার: ধাতুর শেষে স্বর না থাকলে হস্ চিহ্ন দিতে হয়। যেমন: যা, খা, ঘুমা প্রভৃতি ধাতুতে হস্ হয় না, কিন্তু চল্, বল্, দেখ্ প্রভৃতি ধাতুতে অবশ্যই হস্ চিহ্ন দিতে হবে।
ধাতুর প্রকারভেদ
ধাতু কয় প্রকার? এই প্রশ্নের উত্তর নানা জনে নানা রকম দিয়ে থাকেন। আসলে শব্দের মত ধাতুও প্রথমত দুই প্রকার : ১। সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতু ও ২। সাধিত ধাতু (এখানে সাধিত অর্থে ‘যৌগিক’ কথাটি ব্যবহার করা চলবে না। শব্দের ক্ষেত্রে আপত্তি ছিল না। এখানে কেন চলবে না, সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।)
সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতু
যে সব ধাতুকে ভাঙা যায় না, অর্থাৎ ভাঙলে কোনো অর্থবহ ভগ্নাংশ পাওয়া যায় না, তাদের মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু বলে।
যেমন : √দেখ্, √খা, √বল্ প্রভৃতি ধাতুকে ভাঙা যাচ্ছে না। জোর করে ভাঙলে কয়েকটি অর্থহীন ধ্বনি পাওয়া যাবে। অর্থপূর্ণ অংশ পাবো না।
অবশ্য এখানে একটি কথা বলে নেওয়া ভালো : অনেক সময় মৌলিক ধাতুকে নিজের পছন্দসই জায়গায় ভাঙলে কাকতালীয় ভাবে অর্থপূর্ণ অংশ চলে আসে। কিন্তু তার সাথে আলোচ্য ধাতুটির অর্থের কোনো যোগ থাকে না।
যেমন : ‘দেখ্’ = দে + খ্ , এরকম করতে পারি। এখন ‘√দে’ = Give; তাহলে কি অর্থপূর্ণ অংশ পেলাম বলব? উত্তর হবে : “না”। কারণ ‘√দে’= give এর সাথে √দেখ্(=see)- এর কোনো সম্পর্ক নেই । এখানে আমরা কাকতলীয় ভাবে অর্থপূর্ণ একটি ধাতুর একটি ‘অর্থহীন প্রতিরূপ(replica)’ পেয়েছি মাত্র।
মৌলিক ধাতুগুলির গঠনগত কোনো ভাগ করা সম্ভব নয়। তবে উৎসগত শ্রেণিবিভাগ করা যাবে। বাংলায় মূলত তিনটি উৎস থেকে সব ধাতু এসেছে : সংস্কৃত বা তৎসম, তদ্ভব ও দেশি। বিদেশি ধাতু বাংলায় এখনও আমার নজরে আসে নি। তবে আছে নিশ্চয়ই। সংস্কৃত বা তৎসম মৌলিক ধাতু খুব বেশি নেই, কিন্তু আছে। যেমন : √তুল্ (তোলা, lift),
√মাপ্ (measure), √পচ্ ইত্যাদি।
[শব্দ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা যথেষ্ট সংখ্যায় তৎসম শব্দ গ্রহণ করলেও ধাতুগুলি খুব কমই নিয়েছে। বাংলার বেশিরভাগ ধাতুই নিজস্ব, অর্থাৎ তদ্ভব কিংবা দেশি। বস্তুত ধাতুগুলিই বাংলাকে সংস্কৃত থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র একটি অস্তিত্ব দিয়েছে।]
পঙ্গু ধাতু
মৌলিক ধাতুর মধ্যে আর এক ধরনের ধাতু আছে যাদের পঙ্গু ধাতু বলে। যে ধাতুকে সমস্ত কালের (অর্থাৎ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কালের সবকটি বিভাগের) ক্রিয়াপদ রূপে ব্যবহার করা যায় না তাকে পঙ্গু ধাতু বলে।
পঙ্গু ধাতুর উদাহরণ: √বট্ , √নহ্ , √আছ্ প্রভৃতি। এই ধাতুগুলিকে শুধুমাত্র একটি কালেই ব্যবহার করা যায়। যেমন “ছেলেটি বুদ্ধিমান বটে।” অতীত কালে এমন বলা যায় না যে, “ছেলেটি বুদ্ধিমান বটিল।”
সাধিত ধাতু
সাধিত মানে ‘যাকে সাধন করা হয়েছে।’ অর্থাৎ তৈরি করা হয়েছে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, এগুলি একাধিক অংশের সমষ্টি। সাধিত ধাতুকে ভাঙলে তার উপাদানগুলি পৃথক করা যাবে এবং তখনও তাদের অর্থ থাকবে।
যেমন: চোরে আমার মানিব্যাগটা হাতিয়েছে (হাতাইয়াছে)
হাতিয়েছে ক্রিয়ার ধাতু হ’ল : √হাতা
√হাতা ধাতুর মূলে আছে ‘হাত’ শব্দটি এবং তার সাথে যুক্ত হয়েছে ধাত্ববয়ব প্রত্যয় ‘আ’। (ধাত্ববয়ব প্রত্যয় যার সাথেই যুক্ত হোক, ধাতুই তৈরি করে।)
অর্থাৎ দেখা গেল একটি অর্থময় শব্দ ও একটি প্রত্যয় যোগে একটি ধাতু তৈরি হল। আরও বিভিন্ন উপাদানের সাথে ধাত্ববয়ব জুড়ে গিয়ে নতুন নতুন ধাতু তৈরি হয়। এই সবই সাধিত ধাতু।
সাধিত ধাতু কয় প্রকার?
এই প্রশ্নটি নিয়ে বিভিন্ন লেখক বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। আমার মতে মৌলিক ধাতু ছাড়া আর সব ধাতুকেই সাধিত ধাতু বলতে হবে। যৌগিক ও যুক্ত ধাতু বা কর্মবাচ্যের ধাতুকে অনেকেই সাধিত ধাতু বলতে চাননি, এগুলিও আসলে সাধিত ধাতু। সাধিত কথার অর্থ হল ‘যা বানানো হয়েছে’। এখন নিচের আলোচনায় আমরা দেখব সাধিত ধাতু কত প্রকার হতে পারে।
প্রযোজক ধাতু বা ণিজন্ত* ধাতু
একটি ধাতুর সাথে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে গঠিত যে ধাতু দ্বারা অন্যকে কাজ করানো বোঝায়, তাকে প্রযোজক ধাতু বলে।
যেমন: √দেখা (দেখানো অর্থে) , √শোনা (শোনানো অর্থে), √বলা (বলানো অর্থে) ইত্যাদি। এই ধাতুগুলিকে এখন বাক্যে প্রয়োগ করে দেখি :
মা ছেলেকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। (দেখাইতেছেন)
আমাকে অনেকগুলো মন্দ কথা শোনালে। (শোনাইলে)
তুমি আমায় জোর করে বলিয়েছ। (বলাইয়াছ)
(* সংস্কৃতে এই ধাতুগুলি ‘ণিচ্’ প্রত্যয় যোগে গঠিত হয়। তাই এদের নাম ণিজন্ত। ণিজন্ত=ণিচ্+অন্ত। সমাস: ণিচ্ অন্তে যার : বহুব্রীহি। ণিচ্ প্রত্যয় বাংলা ভাষায় নেই। তাই বাংলা প্রযোজক ধাতুকে এই নাম দেওয়ার দরকার নেই। সংস্কৃতের অনুকরণে কেউ কেউ এই নামটি ব্যবহার করেন।)
নামধাতু
শব্দের সাথে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে গঠিত ধাতুকে নামধাতু বলে।
যেমন: চোরে আমার ব্যাগটা হাতিয়েছে (হাতাইয়াছে)।
এখানে ‘হাতাইয়াছে’ ক্রিয়াপদটির মূলে আছে ‘হাতা’ ধাতু। হাতা= হাত + আ ।
‘হাত’ শব্দের সাথে ‘আ’ ধাত্ববয়ব প্রত্যয় যোগে ‘হাতা’ ধাতুর জন্ম হয়েছে। এর অর্থ হল হাতিয়ে নেওয়া।
এরকম বেশ কিছু নামধাতু বাংলায় দেখা যায়। যেমন:
ঠ্যাঙা+আ= √ঠ্যাঙা (ঠ্যাঙানো)
লাঠি+আ=√লাঠা (লাঠানো/ লাঠিপেটা করা)
জুতা+আ=√জুতা (জুতানো/জুতাপেটা করা)
রাঙা+আ=√রাঙা (রাঙানো/ রঙ করা)
মাইকেল মধুসূদন তাঁর কাব্যে অসংখ্য নামধাতুজাত ক্রিয়া ব্যবহার করেছেন ; সেসব ক্রিয়ার অধিকাংশই ব্যবহারিক ভাষায় কাজে লাগে না।
যৌগিক ধাতু
(এই যৌগিক ধাতুগুলি সাধিত ধাতুর অন্তর্ভুক্ত একটি বিশেষ শ্রেণি। এই কারণেই সাধিত ধাতুর পরিবর্তে যৌগিক ধাতু বলা যায় না।)
একটি অসমাপিকা ক্রিয়ার সাথে একটি ধাতুর যোগে গঠিত যে ধাতুতে অসমাপিকা অংশটির অর্থই প্রকাশিত হয়, তাকে যৌগিক ধাতু বলে।
অর্থাৎ যৌগিক ধাতু গঠিত হবে একটি অসমাপিকা ক্রিয়া ও একটি ধাতুর যোগে এবং অর্থ প্রকাশ করবে অসমাপিকাটির।
যেমন : কলমটা ভেঙে ফেলেছি। (ভাঙিয়া ফেলিয়াাছি)
‘ভাঙিয়া ফেলিয়াছি’ একটাই ক্রিয়া। এর ধাতু ‘ভাঙিয়া ফেল্’। ( ‘ভাঙিয়া ফেলিয়াছি’ থেকে পরিবর্তনশীল অংশ ‘ইয়াছি’ বাদ দিলেই ধাতুটি বেরিয়ে আসছে।)
এখন দেখতেই পাচ্ছি, ‘ভেঙে ফেলেছি’ বললে ‘ভাঙা’ই বোঝায়, ‘ফেলা’ বোঝায় না।
এরকম আরও যৌগিক ধাতুর উদাহরণ :
√শুয়ে পড়্ , √ খেয়ে নে , √দেখে ফেল্ ইত্যাদি।
[ এখানে একটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে : অসমাপিকা ও সমাপিকা ক্রিয়া পাশাপাশি অনেক সময়ই দেখা যায়। কিন্তু সব সময় যৌগিক ধাতু থাকবে না। দুটি মিলিয়ে শুধু অসমাপিকা (প্রথম অংশ)-টির অর্থ বোঝালে তবেই সেখানে যৌগিক ধাতু আছে বুঝতে হবে। যেমন : “খেয়ে এসো” বললে ‘খাওয়া’ এবং ‘আসা’ দুটিই বোঝানো হয়। তাই এখানে যৌগিক ধাতুর অস্তিত্ব নেই।]
যুক্ত ধাতু বা সংযোগমূলক ধাতু
সাধারণত একটি ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য ও একটি ধাতুর যোগে গঠিত যে ধাতুর দ্বারা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যটির অর্থই প্রকাশিত হয়, তাকে যুক্ত ধাতু বা সংযোগমূলক ধাতু বলে।
তবে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য ছাড়া অন্য নামপদের সঙ্গে ধাতুর যোগেও যুক্ত ধাতু তৈরি হতে পারে।
যৌগিক ধাতুর সাথে যুক্ত ধাতুর সাদৃশ্য আছে। এখানেও দুটির যোগ ঘটে এবং প্রথমটির অর্থ বোঝায়।
উদাহরণ : √সাঁতার কাট্ , ‘√রান্না কর্’ , ‘√দেখা কর্’ , ‘√ঘৃণা কর্’ ইত্যাদি।
এক্ষেত্রেও মনে রাখতে হবে, দুটি অংশেরই অর্থ প্রকাশিত হলে তাকে যুক্ত ক্রিয়া বলা যাবে না। যেমন ‘কাজ করি’ বললে ‘ বললে এখানে যুক্ত ধাতু নেই। কিন্তু ‘দেখা করি’ বললে যুক্ত ধাতু আছে।
ধ্বন্যাত্মক ধাতু
ধ্বন্যাত্মক শব্দের সাথে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে গঠিত ধাতুকে ধ্বন্যাত্মক ধাতু বলে।
যেমন: ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল। এখানে ‘ঝমঝমিয়ে’ একটি অসমাপিকা ক্রিয়া। এর ধাতু √ঝমঝমা =ঝমঝম+আ
(ঝমঝমা+ইয়া=ঝমঝমাইয়া>ঝমঝমিয়ে)।
একই রকম : গুনগুনিয়ে (গুনগুনাইয়া), টনটনাচ্ছে, কড়কড়াচ্ছে (কড়কড়াইতেছে) এই ক্রিয়াগুলির ধাতুকে ধ্বন্যাত্মক ধাতু বলে।
এখানে মনে রাখতে হবে : টনটন কর্, কড়কড় কর্ –এই ধাতুগুলি ধ্বন্যাত্মক ধাতু নয়– এগুলি সংযোগমূলক বা যুক্ত ধাতুর মধ্যে পড়বে।
কর্মবাচ্যের ধাতু
যে ধাতু থেকে কর্মবাচ্যের ক্রিয়া গঠিত হয়, তাকে কর্মবাচ্যের ধাতু বলে।
কর্মবাচ্যে ক্রিয়ার রূপ অন্য রকম হয়। তাই কর্মবাচ্যের ধাতুটিও আলাদা ধাতু হিসাবে গণ্য হয়। মূল ধাতুর সঙ্গে আ প্রত্যয় যোগে অথবা একটি কৃদন্ত বিশেষণের সঙ্গে একটি ধাতুর যোগে কর্মবাচ্যের ধাতু গঠিত হয়।
উদাহরণ : “তোমার কথাটা কেমন যেন শোনাচ্ছে।” এই বাক্যে ‘শোনাচ্ছে’ ক্রিয়ার ধাতু ‘শোনা’ কর্মবাচ্যের ধাতু।
আপনার আদেশ যথাযথ ভাবে পালিত হবে। – ‘পালিত হ’ কর্মবাচ্যের ধাতু।
লোকটি জনগণের হাতে প্রহৃত হয়েছে। — প্রহৃত হ – কর্মবাচ্যের ধাতু।
এই জিনিসগুলো সব বাদ যাবে। — বাদ যা – কর্মবাচ্যের ধাতু।
ধাতু চেনার সহজ উপায় :
ধাতু চেনার সহজ একটি পদ্ধতি শিখতে নিচের ভিডিওটি দেখুন
ধাতু চেনার একটি সহজ উপায় আছে। যে কোনো ক্রিয়ার ধাতুটি খুঁজে বের করার জন্য ঐ ক্রিয়ার কাজটি তুচ্ছ মধ্যম পুরুষের অনুজ্ঞায় ব্যবহার করতে হয়। অর্থাৎ ‘তুই’-কে কর্তা করে ঐ কাজটি করতে আদেশ/অনুরোধ করতে হয়। যেমন : রাম যাচ্ছে— তুই যা।(‘যা’ ধাতু), সে আমাকে ছবি দেখিয়েছে— তুই ছবি দেখা।(√দেখা প্রযোজক ধাতু)।
অন্য ভাবে বললে: নিজের কোনো কাছের বন্ধু, যাকে ‘তুই’ দিয়ে কথা বলি, তাকে বর্তমান অনুজ্ঞায় যে কোনো কাজ করতে আদেশ করলেই ধাতুটি পাওয়া যায়। আদেশটি ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞায় করলে চলবে না। বর্তমান অনুজ্ঞা ও ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা জানতে ক্রিয়ার কাল চেনার উপায় অধ্যায়টি পড়ুন।
তুই যা, তুই খা, তুই বস্, তুই চল্, তুই দেখ্, তুই কর্, তুই সাঁতার কাট্, তুই লিখ্, তুই হাঁট্, তুই দেখা কর্, এই সব ক্রিয়াগুলিই সরাসরি ধাতু বা ধাতুর সাথে অভিন্ন।
ব্যতিক্রম: আসা অর্থে √আস্ ধাতু, থাকা অর্থে √আছ্ ধাতু, √বট্ ধাতু। এই পদ্ধতিতে এই ধাতুগুলি নির্ণয় করা যায় না। আর একটি কথা: এই পদ্ধতিতে সংস্কৃত ধাতু নির্ণয় করা যায় না। শুধুমাত্র বাংলা ভাষার ক্রিয়াপদে ব্যবহৃত ধাতুগুলি এই উপায়ে নির্ণয় করা যাবে। প্রকৃতি-প্রত্যয়ে যে সংস্কৃত ধাতু থাকে, সেগুলি নির্ণয় করার কোনো সহজ পদ্ধতি নেই।
আরও পড়ুন
সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ
সমস্ত পোস্ট দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন
সমস্ত পোস্ট দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন
ধাতুর অনুশীলনী
১: যৌগিক ও যুক্ত ধাতুর পার্থক্য কী? মিলই বা কী?
২: প্রযোজক ধাতুর উদাহরণ দাও।
৩: ক্রিয়ার ধাতু খুঁজে বের করো।
সে আসবে। রাম সাঁতার দেয়। লোকটা অকথ্য গাল পাড়ছে। অঙ্ক কষতাম। আমি গ্রহণ করলাম।
৪: লোকটা ধুঁকছে। কোন শ্রেণির ধাতু আছে?
৫: শীতে গাছের পাতা ঝরাচ্ছে। — কোন ধরনের ধাতু আছে?
৬: কিলিয়ে কাঁঠাল পাকাচ্ছি। — পাকাচ্ছি ক্রিয়ার ধাতু কোন শ্রেণির?
৭: ছেলেটি প্রহৃত হয়েছে। — ধাতু চিহ্নিত করে শ্রেণি নির্দেশ করো।
৮: সে আমাকে ভালোবাসে। — কোন শ্রেণির ধাতু?
৯: গরম তেলেভাজা খেয়ে ফেলেছি। — কোন শ্রেণির ধাতু?
১০: খারাপ ফল ফলবে। — ধাতু চিহ্নিত করে শ্রেণি নির্দেশ করো।