ধ্বন্যাত্মক শব্দ
‘ধ্বন্যাত্মক’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল ‘ধ্বনি আত্মা যার’। অর্থাৎ ধ্বন্যাত্মক শব্দের আত্মা হল ধ্বনি বা আওয়াজ। বাংলা ভাষায় ধ্বন্যাত্মক শব্দের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অসাধারণ। প্রাথমিক ভাবে এই শব্দগুলিকে অব্যয় শ্রেণিভুক্ত করা হয়। বহু ব্যাকরণবিদ এদের ‘ধ্বন্যাত্মক অব্যয়’ নামেই চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা বিভিন্ন পদের ভূমিকা পালন করে। সে সব আলোচনায় যাওয়ার আগে আসুন জেনে নিই ধ্বন্যাত্মক শব্দ কাকে বলে।
ধ্বন্যাত্মক শব্দের সংজ্ঞা
যে সব শব্দ বাস্তব ধ্বনির অনুকরণে তৈরি হয়েছে, অথবা বাস্তব ধ্বনির মতো দ্যোতনা দিলেও আসলে কোনো বিশেষ ভাবকে প্রকাশ করে, তাদের ধ্বন্যাত্মক শব্দ বলে।
নিচে উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝানো হলো
যেমন: ‘ঝমঝম’ এই কথাটি তৈরি হয়েছে বৃষ্টি পড়ার শব্দের অনুকরণে। বৃষ্টির শব্দ আমাদের কানে, দেহে, মনে যে শাব্দিক অনুভূতি জাগায়, সেই অনুভূতিরই বাঙ্ময় রূপ এই ‘ঝমঝম’ শব্দটি। আর এক ধরনের ধ্বন্যাত্মক শব্দ আছে, যার সাথে বাস্তব ধ্বনির কোনো যোগ নেই, তারা বিশেষ কোনো ভাব প্রকাশ করে। যেমন: খাঁ খাঁ, টনটন, কনকন, এই শব্দগুলির দ্বারা ধ্বনির দ্যোতনা ফুটে ওঠে না। কোনও পরিস্থিতি বা অনুভূতি প্রকাশ পায়।
ধ্বন্যাত্মক শব্দের শ্রেণিবিভাগ
ধ্বন্যাত্মক শব্দকে দু ভাগে ভাগ করা যায়
১: ধ্বনি-প্রকাশক বা অনুকার ধ্বন্যাত্মক শব্দ (অনুকার বলার কারণ, এরা বাস্তব ধ্বনির অনুকরণে তৈরি। কিন্তু অনুকার পরিভাষাটি বাংলা ব্যাকরণে অন্য এক ধরনের শব্দ বোঝায়, তাই এই পরিভাষাটি এই ক্ষেত্রেও ব্যবহার করলে ছাত্রছাত্রীরা বিভ্রান্ত হবে।)। যেমন: ঝমঝম, ঠং ঠং, ঢং ঢং, শন শন, ঝিঁ ঝিঁ, প্যাঁ প্যাঁ, ঠক ঠক, থপ থপ, ধুপ ধাপ, দুম দুম, খস খস, মস মস, ছল ছল, ছলাত ছলাত প্রভৃতি।
২: ভাব-প্রকাশক ধ্বন্যাত্মক শব্দ: যেগুলি কোনো ভাব বা অনুভূতি প্রকাশ করে। যেমন: খাঁ খাঁ, গনগন, ঝাঁ ঝাঁ, চক চক, কন কন, টন টন, কট কট, পিট পিট প্রভৃতি।