Ananyabangla.com

প্রধান ও অপ্রধান খণ্ডবাক্য চেনার উপায়

 খণ্ডবাক্য বা উপবাক্য কাকে বলে?


আমরা জানি বাক্যের দুটি অংশ, উদ্দেশ্য ও বিধেয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় একটি উদ্দেশ্য ও একটি বিধেয় নিয়ে গঠিত একটি পদগুচ্ছ সম্পূর্ণ বাক্য গঠন করছে না, তার পরিবর্তে একটি বড়ো বাক্যের অংশ রূপে কাজ করছে। এইভাবে বাক্যের যে অংশের মধ্যে নিজস্ব উদ্দেশ্য ও বিধেয় থাকে, তাকে খণ্ডবাক্য বলে। এর অপর নাম উপবাক্য।

খণ্ডবাক্যের সঙ্গে বাক্যের একটিই পার্থক্য, তা হল: খণ্ডবাক্য কখন‌ও পূর্ণ বাক্য নয়, একটি পূর্ণ বাক্যের অংশবিশেষ।


খণ্ডবাক্য কোথায় দেখা যায়?


খণ্ডবাক্য দেখা যায় জটিল বাক্য, মিশ্র বাক্য ও যৌগিক বাক্যের মধ্যে। তবে যৌগিক বাক্যের খণ্ডবাক্যগুলি প্রত্যেকে স্বাধীন। তাই অনেকে এদের আক্ষরিক অর্থে খণ্ডবাক্য বলতে চান না। কিন্তু আমরা যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত সরল বাক্যগুলিকে স্বাধীন খণ্ডবাক্য নামেই অভিহিত করবো। কারণ, একটি বৃহত্তর বাক্যের অংশবিশেষকে ‘বাক্য’ নামে অভিহিত করা উচিত নয় বলেই আমরা মনে করি।

খণ্ডবাক্যের উদাহরণ: 

যদি তুমি যাও, তাহলে আমি যাবো।
আমি দেখতে পেলাম লোকটি চলে গেলো।

উপরের দুটি বাক্য জটিল বাক্যের উদাহরণ। এই দুই বাক্যের চিহ্নিত অংশগুলি একটি করে খণ্ডবাক্য এবং দাগ না দেওয়া অংশ দুটি একটি করে খণ্ডবাক্য। অর্থাৎ, ‘যদি তুমি যাও’ একটি খণ্ডবাক্য এবং ‘তাহলে আমি যাবো’ আরেকটি খণ্ডবাক্য। লক্ষ করলে দেখা যাবে এই দুটি খণ্ডবাক্যের মধ্যে নিজের উদ্দেশ্য ও বিধেয় আছে। একটি খণ্ডবাক্যের উদ্দেশ্য ‘তুমি’ এবং অপরটির উদ্দেশ্য ‘আমি’।


খণ্ডবাক্য/উপবাক্য ও বাক্যাংশের পার্থক্য


খণ্ডবাক্যের নিজস্ব উদ্দেশ্য ও বিধেয় থাকে। বাক্যাংশের তা থাকে না। অর্থাৎ বাক্যাংশের মধ্যে কখনো সমাপিকা ক্রিয়া থাকবে না। অর্থাৎ সহজ ভাবে বলা যায়: উপবাক্যের মধ্যে অন্যান্য পদের সাথে একটি সমাপিকা ক্রিয়া অবশ্য‌ই থাকবে(ঊহ্য হলেও), বাক্যাংশের মধ্যে সমাপিকা ক্রিয়া থাকবে না। উপবাক্যের মধ্যে একাধিক পদ থাকবে, অসমাপিকা ক্রিয়াও থাকতে পারে।

বাক্যাংশের উদাহরণ

আমি লোকটিকে যেতে দেখেছি। 
তোমার চলে যাওয়া আমাকে কষ্ট দিয়েছে।
ভুলে যাওয়া তোমার স্বভাব।
দিনরাত টিভি দেখতে আমার ভালো লাগে না।

উপরের উদাহরণগুলিতে চিহ্নিত অংশগুলি এক একটি বাক্যাংশ। বাক্যাংশ হল এমন পদগুচ্ছ যার নিজস্ব উদ্দেশ্য ও বিধেয় থাকবে না এবং বাক্যের মধ্যে একটি পদের কাজ করবে।
       উদাহরণের বাক্যাংশগুলি কোনোটি কর্মকারকের কাজ করছে আবার কোনোটি কর্তৃ কারকের কাজ করছে। 



প্রধান ও অপ্রধান খণ্ডবাক্য

আমাকে YouTube-এ ফলো করার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

জটিল বাক্যে একটি প্রধান খণ্ডবাক্য ও এক বা একাধিক অপ্রধান খণ্ডবাক্য থাকে। প্রধান খণ্ডবাক্যটির হাতেই বাক্যের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকে। অপ্রধান খণ্ডবাক্যটি প্রধান খণ্ডবাক্যের আশ্রয়ে থেকে একটি পদের মতো কাজ করে। 
যেমন: ” আমি জানতাম তুমি আসবে।” এই বাক্যে মূল বিষয় হলো ‘আমি জানতাম’। আমি কী জানতাম? উঃ- ‘তুমি আসবে।’ তাই এটি প্রধান খণ্ডবাক্যের ক্রিয়াটির কর্ম রূপে কাজ করছে। কারক অধ্যায়ে উপবাক্যীয় কর্ম সম্পর্কে পড়ে নিলে এই বিষয়টি আর‌ও স্পষ্ট হবে। 

প্রধান খণ্ডবাক্য কাকে বলে

জটিল বা মিশ্র বাক্যের যে খণ্ডবাক্যটি স্বাধীন ভাবে অর্থ প্রকাশ করে এবং অন্য এক বা একাধিক খণ্ডবাক্যকে নিজের অঙ্গ রূপে আশ্রয় দান করে, তাকে প্রধান খণ্ডবাক্য বলে। যেমন: “আমি জানতাম তুমি আসবে।” এই বাক্যে “আমি জানতাম” প্রধান খণ্ডবাক্য । “তুমি আসবে” খণ্ডবাক্যটি ‘জানতাম’ ক্রিয়ার কর্ম রূপে প্রধান খণ্ডবাক্যের আশ্রয় লাভ করেছে। অন্য ভাবে বলা যায় অপ্রধান খণ্ডবাক্যটি কর্ম হিসেবে প্রধান খণ্ডবাক্যের অঙ্গীভূত হয়েছে।

অপ্রধান খণ্ডবাক্য কাকে বলে

যে খণ্ডবাক্য কোনো স্বাধীন খণ্ডবাক্যের আশ্রয়ে বাক্যের একটি উপাদান বা পদের মতো কাজ করে, তাকে অপ্রধান খণ্ডবাক্য বলে। ইংরেজিতে একে বলা হয় Subordinate clause. 


অপ্রধান খণ্ডবাক্যের শ্রেণীবিভাগ


প্রধান খণ্ডবাক্যের কোনো শ্রেণীবিভাগ হয় না। অপ্রধান খণ্ডবাক্য তিন প্রকার। সমগ্র বাক্যের মধ্যে অপ্রধান খণ্ডবাক্যটি কোন ভূমিকা পালন করছে তা দেখে এই শ্রেণীকরণ করা হয়েছে। 

বিশেষ্যধর্মী অপ্রধান খণ্ডবাক্য


এই খণ্ডবাক্যগুলি একটি বিশেষ্য পদের কাজ করে। 
যেমন: আমি দেখেছি বুলেট ট্রেন কত জোরে ছোটে।
ছেলেরা বলাবলি করছিলো আজ নাকি মন্ত্রী আসবেন।


বিশেষণধর্মী অপ্রধান খণ্ডবাক্য


এই খণ্ডবাক্যগুলি প্রধান খণ্ডবাক্যের অন্তর্গত কোনো নামপদকে বিশেষিত করে। 

যেমন: যারা পড়াশোনা করে তারা ভালো ফল করে। — এই বাক্যে ‘যারা পড়াশোনা করে’ অংশটি ‘তারা’ সর্বনামকে বিশেষিত করছে। ‘তারা’ কেমন ছেলেমেয়ে? এই প্রশ্নের উত্তর হবে ‘তারা পড়াশোনা করা ছেলেমেয়ে’। অর্থাৎ তাদের এই বৈশিষ্ট্যের পরিচয় আমরা পাচ্ছি অপ্রধান খণ্ডবাক্যটি থেকেই। 


ক্রিয়াবিশেষণধর্মী অপ্রধান খণ্ডবাক্য


এই ধরনের খণ্ডবাক্যগুলি প্রধান খণ্ডবাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াকে বিশেষিত করে। 

যেমন: যদি তুমি যাও তাহলে আমি যাবো। — এখানে ‘যদি তুমি যাও’ অংশটি আমার যাওয়ার শর্ত প্রকাশ করছে। 

আমি যখন‌ই ডাকবো তুমি চলে আসবে। — ‘আমি যখন‌ই ডাকবো’ অংশটি তোমার আসার সময় প্রকাশ করছে।



প্রধান ও অপ্রধান খণ্ডবাক্য চেনার উপায়


প্রধান ও অপ্রধান খণ্ডবাক্য চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো 

১: জটিল বাক্যকে সরল বাক্যে পরিণত করো।
২: সরল বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়া বা বিধেয়টি লক্ষ করো।
৩: জটিল বাক্যের যে খণ্ডবাক্যে সরল বাক্যের বিধেয়টি আছে, সেই খণ্ডবাক্যটি প্রধান খণ্ডবাক্য। 

যেমন: জটিল বাক্য:  যারা ভালো ছেলে তারা পড়াশোনায় ফাঁকি দেয় না। 
সরল বাক্য:  ভালো ছেলেরা পড়াশোনায় ফাঁকি দেয় না। 

‘ফাঁকি দেয় না’ সমাপিকা ক্রিয়াটি অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ, ‘তারা পড়াশোনায় ফাঁকি দেয় না’ অংশটি প্রধান খণ্ডবাক্য। 

জটিল বাক্য:  আমি দেখলাম লোকটি চলে গেল।
সরল বাক্য: আমি লোকটিকে চলে যেতে দেখলাম। 

‘দেখলাম’ সমাপিকা ক্রিয়াটি অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ, ‘আমি দেখলাম’ প্রধান খণ্ডবাক্য।

গর্ভবাক্য (Embedded sentence)

খণ্ডবাক্যের আলোচনায় প্রাসঙ্গিক ভাবে গর্ভবাক্যের ধারণাটি আলোচনা করা প্রয়োজন। গর্ভবাক্য ঠিক খণ্ডবাক্য নয়। খণ্ডবাক্যগুলি পারস্পরিক সম্পর্কে বাঁধা থাকে। অপরদিকে গর্ভবাক্য হল একটি বাক্যের মধ্যে স্থাপিত ব্যাকরণগত ভাবে সম্পর্কহীন অন্য একটি বাক্য। অর্থাৎ গর্ভবাক্য হল বাক্যের মধ্যে স্থাপিত বাক্য, অথচ যে বাক্যের মধ্যে সে স্থান পাচ্ছে, সেই মূল বাক্যের সঙ্গে তার কোনো ব্যাকরণগত বা অন্বয়গত সম্পর্ক থাকবে না।

গর্ভবাক্যের উদাহরণ

আমাদের দেশের অধিকাংশ ছেলেমেয়ে, নিতান্ত ব্যতিক্রমী কয়েকজনের কথা বাদ দিচ্ছি, কেরিয়ার তৈরি করার ব্যাপারে সচেতন নয়।

আমি যখন বাড়ি ফিরছিলাম, ফেরার কথা ছিলো না, তখন‌ই দেখলাম ঘটনাটা।

সুকন্যা নামের মেয়েটি, আমার সাথে আলাপ নেই, শুনলাম হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে।

আর‌ও পড়ুন

Contact me for online coaching on Bengali grammar for SLST and other competitive exams. New batch starting from February-March. Join in first 2 FREE Classes.   CLICK HERE to connect on  WHATSAPP

BLOG AD HERE

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *